|
|
|
|
সন্দেহ, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী |
পুরুলিয়ার ৩৫ জন মজুর বন্দি মুম্বইয়ের জেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া ও আদ্রা |
মহারাষ্ট্রে কাজ করতে যাওয়া পুরুলিয়ার ৩৫ জনকে যুবককে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে প্রায় দু’মাস ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। বুধবার পুরুলিয়ায় সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই অভিযোগ করলেন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া।
তাঁর অভিযোগ, “পাড়া, সাঁতুড়ি ও নিতুড়িয়ার ওই বাসিন্দাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চহ্বাণ, ওই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরআর পাতিল ও দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু তাঁরা আশ্বাস দিলেও ওই লোকগুলিকে জেল থেকে ছাড়া হয়নি।”
বাসুদেববাবু জানান, সেপ্টেম্বর মাসে ওই ৩৫ জন যুবক শ্রমিকের কাজ করতে মহারাষ্ট্রে যান। ২২ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ের বাইকুল্লা থানার পুলিশ তাঁদের ধরে। কয়েক দিন পর বাসুদেববাবু এলাকা থেকে খবর পান। তাঁর অভিযোগ, “খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সেখানে তাঁরা বাংলায় কথাবার্তা বলছিলেন। তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে তাঁদের সকলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ঘটনার কথা জেনে কার্যত অবাক বাসুদেববাবু গত ৯ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চহ্বাণকে চিঠি দেন। তাঁকে ঘটনার কথা জানিয়ে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করেন। সাংসদ বলেন, “মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ১৫ অক্টোবর চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, আমার চিঠি পেয়েই তিনি ঘটনার কথা জানতে পেরেছেন। বিষয়টি তিনি দেখছেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। ভেবেছিলাম, দুর্গাপুজো ও ঈদের আগেই ওই শ্রমিকরা মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে আসবেন। বাড়ির লোকেরাও তেমনই প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেওয়ার পরেও দেখলাম তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়নি।” এরপর বাসুদেববাবু বন্দিদের মুক্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন। ৩১ অক্টোবর পুরো বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানান। ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী চিঠি দিয়ে জানান, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি তিনি দেখার জন্য জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও ওঁরা মুক্তি পাননি।
বুধবার ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “শুধু মাত্র বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ মহারাষ্ট্র পুলিশ বিনা দোষে ৩৫ জন লোককে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে জেলে ভরে রেখেছে। তাঁদের কাছে ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র ছিল না। আমি ওই ৩৫ জনের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা— সমস্ত কিছু প্রমাণ-সহ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রের সরকার কোনও গুরুত্ব দেয়নি। আমি একজন সাংসদ হিসেবে আমার সংসদীয় এলাকার মানুষজনের পরিচয় সম্পর্কে জানিয়েছি। তবু এই তথ্য কোনও গুরুত্ব পায়নি। ওই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরআর পাটিলের সঙ্গেও কথা বলেছি। তবু কিছু হল না।” তাঁর ক্ষোভ, দেশের মানুষ যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন। এটা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এক্ষেত্রে তাঁদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, এখন মহারাষ্ট্রের পুলিশ জানিয়েছে, ওঁদের জামিনের আবেদন জানাতে হবে। কিন্তু নিরপরাধ মানুষগুলোকে কেন জামিন নিতে হবে? প্রশ্ন তুলেছেন এই বর্ষিয়ান সাংসদ। তিনি বলেন, “মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি ওই বন্দিরা এখানকার আদি বাসিন্দা কি না, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশের উচ্চপদস্থ কোনও আধিকারিককে এখানে পাঠান। আমিই তাঁকে বাড়ি বাড়ি ঘোরাব।” লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে তিনি বিষয়টি নিয়ে সরব হবেন বলেও জানান।
সাঁতুড়ি থানার লালগড় গ্রাম থেকে মুম্বইয়ে গিয়েছিল ১০ জন শ্রমিক। শ্রমিকগুলির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় কাজ করতে যাওয়া অন্য কিছু শ্রমিকের মারফৎ খবর আসে, পুলিশ তাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় সিপিএম নেতা বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে ঘটনাটি তারা সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াকে জানান। তিনি ওই এলাকায় গিয়ে শ্রমিকদের পরিবারগুলির সঙ্গে কথাও বলে আসেন। ওই পরিবারগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের এক ঠিকাদারের মাধ্যমে স্থানীয় বনবেড়িয়া গ্রামের এক ব্যক্তি এলাকার কিছু লোককে মাসে ৯ হাজার টাকা মজুরিতে কাজ দেওয়া হবে বলে নিয়ে গিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রে গ্রেফতার হওয়া রাজেশ বাউরির বাবা ভোলানাথ বাউরি, অর্জুন বাউরির বাবা নেপাল বাউরি, বাপি বাউরির বাবা গৌর বাউরিরা বলেন, “মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হবে বলে ওদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু যাঁদের ভোটাধিকারই হয়নি, তাঁদের কাছে সচিত্র ভোটারপরিচয় পত্র থাকবে কী করে? অথচ মহারাষ্ট্রের পুলিশ বেশ কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়ষ্ককে ধরেছে।” বাসুদেববাবুর সঙ্গে কথা বলে কয়েকজন মুম্বইয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে তাঁরা বলছেন, “আমরা নিতান্তই গরিব। মুম্বই থেকে ছেলেদের ছাড়িয়ে আনার জন্য তদ্বির করতে পারব না।” পাড়ার হরিহরপুরের অতিবুল মল্লিক, শেখ সাজাউল বলেন, “ঘরের ছেলেরা বিপদ কাটিয়ে কী ভাবে ফিরে আসবে ভেবে পারছি না।”
পাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক উমাপদ বাউরি বলেন, “ওঁদের মুক্তির জন্য দলের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাব।” |
|
|
|
|
|