|
|
|
|
মমতাকে জবাব |
জমি দিলেই চাকরি হয় না, শ্বেতপত্রে বোঝাবেন অধীর |
সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা |
পঞ্চায়েত ভোটের আগে কংগ্রেস-তৃণমূল টানাপোড়েনে নতুন রসদ জোগাচ্ছে রেল।
তাঁরা ইউপিএ সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পরে রেলের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র টালবাহানা করছে বলে সমালোচনা শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুকুল রায়। তারই জবাব দিতে তথ্য গুছিয়ে তৈরি হচ্ছেন রেলের নতুন প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক জনসমক্ষে আনতে প্রয়োজনে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন রেলের প্রতিমন্ত্রী তথা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর। তাঁর কথায়, “কেবল বাংলা নয়, সারা দেশে রেলের কোন প্রকল্পের কাজ কী কারণে আটকে আছে বা কোন প্রকল্প কতটা বাস্তবসম্মত এবং জমি নিয়ে রাজ্যের বর্তমান সরকারের নীতিতে কোন প্রকল্পের কাজ কী ভাবে আটকে রয়েছে, তা মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে শ্বেতপত্র প্রকাশ করলেই।” অধীরের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদ জেলার নসিপুর-আজিমগঞ্জের মধ্যে রেললাইনের কাজ আটকে রয়েছে মাত্র সাড়ে সাত একরের জন্য। তিনি বলেন, “ওই লাইনে নদীর উপরে সেতু তৈরি সম্পূর্ণ। স্রেফ সাড়ে সাত একর জমির জন্য ওখানে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে রাজ্য সরকার রেলকে কোনও সহযোগিতা করছে না।” রেলের প্রকল্পের জন্য জমি দিলে চাকরি মিলবে, এই নীতি অবাস্তব বলেই মন্তব্য করেছেন অধীর। তাঁর বক্তব্য, “জমির বদলে চাকরি দিতে হলে রেল দফতরটাই তুলে দিতে হবে! কারণ, শুধু রেলের পূর্ব ডিভিশনেই বকেয়া প্রকল্পগুলির জন্য জমি নিলে ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষকে চাকরি দিতে হবে। সারা দেশে রেলে ১৭টি ডিভিশন আছে। সারা দেশে রেলে এখন কর্মী সংখ্যা ১৩ লক্ষ ২০ হাজার। তা হলে ১৭ ডিভিশনে তো ১৭ লক্ষ লোককে চাকরি দিতে হয়! এটা একেবারেই অবাস্তব ব্যাপার!”
তবে রেল প্রকল্পের জন্য জমি নিলে জমিদাতা-পরিবার পিছু এক জনকে চাকরি দেওয়ার দাবিতে তৃণমূল নেতৃত্ব অটল। এই বিষয়ে তাঁরা রীতিমতো সওয়ালও করছেন। রেলের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী মুকুলবাবু প্রকাশ্যেই বলেছেন, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর নির্বাচনী কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীতে রেলের প্রকল্পের জন্য জমিদাতাদের যদি চাকরি দেওয়া হয়, তবে অন্যত্র তা কার্যকর হবে না কেন? অধীরের পাল্টা বক্তব্য, “রায়বরেলীতে ১৪০০ জনের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ দৃষ্টান্ত হিসাবে ১৮ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরেও এ রকম বিশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে জমিদাতাদের মধ্যে কয়েক জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।” শ্বেতপত্র প্রকাশ করলে এই তথ্যও সেখানে স্থান পাবে বলে জানিয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী।
বস্তুত, জমি দিলেই চাকরি পাওয়া যাবেরেলমন্ত্রী হিসাবে মমতার গৃহীত এই নীতি মেনে চললে যে কোনও প্রকল্পের কাজ থমকে যেতে বাধ্য বলে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বও মনে করছেন। তাই অধীর মমতার ওই নীতির অবাস্তবতা তুলে ধরলে আখেরে রাজ্যের ভাল হবে, এমনই আশা তাঁদের।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “বাম আমলে ১৯৭৭ থেকে অনেক জমি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় থেকে মানুষকে জমি নিয়ে ভুল বোঝানো হয়েছে। জমি দিলেই চাকরি পাওয়া যাবে, এটা বোঝানো হলে মানুষ
তো কোনও কাজেই জমি দিতে চাইবেন না! যত ক্ষণ না ওই দাবি
পূরণ হচ্ছে। মানুষের ওই ধারণা ভাঙতে হবে।”
মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের জন্য ঘোষিত রেল প্রকল্পগুলি দ্রুত রূপায়ণের জন্য রেল মন্ত্রক কতটা সক্রিয়, তা-ও জানানো হবে শ্বেতপত্রে। তৃণমূলের হাতে থাকার সময়
রেলের ঘোষিত প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ যাতে মমতা করতে না-পারেন, সেই দিকে লক্ষ রেখেই অধীরের এই উদ্যোগ।
অধীরের মন্তব্য, “এমন ভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে, যেন আমরা দফতরে বসেছি সিবিআই তদন্ত করিয়ে ওঁদের গিলে খাব বলে! ব্যাপারটা
তা নয়। আমরা সমস্ত প্রকল্প
কতটা বাস্তবসম্মত, যাচাই করে নিয়ে কাজ করছি।” |
|
|
|
|
|