|
|
|
|
|
খুচরোয় বিদেশি লগ্নি,
জোট বিরোধীদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
আলোর উৎসব শেষ হতেই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিষয়টি নিয়ে সংসদে সরকারকে কোণঠাসা করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল বিরোধীরা। সরকারের সহযোগী ও শরিক মুলায়ম-করুণানিধিদের অবস্থানও অক্সিজেন জুগিয়েছে তাদের। আবার বিরোধীদের কৌশল ভেস্তে দিতে তৎপর সরকার পক্ষও।
সংসদ শুরু হতে এখনও এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করবে, সরকারের শরিক দল ডিএমকে নেতা করুণানিধির আজকের এই মন্তব্য বিরোধী দলগুলিকে চাঙ্গা করে দিয়েছে। একে একে বিজেপি ও বামেরাও সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে। কারণ, তারা জানে এই বিষয়ে বিরোধীদের তো বটেই, সরকারের কিছু ‘বন্ধু’ দলেরও এতে আপত্তি রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির প্রতিবাদে ইউপিএ থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছেন। সে কারণে বামেরা আজ ভোটাভুটির নোটিসও দিয়ে দিয়েছে। বিজেপি তথা এনডিএ-কেও এই ভোটাভুটিতে সামিল করার জন্য আলোচনা চলছে। শরিক দলগুলিও বিরোধিতায় সরব হওয়ায় বাম-বিজেপি বিষয়টি নিয়ে সংখ্যাধিক্যের জোরে সরকারকে পরাস্ত করে কংগ্রেসকে দুর্বল করার কৌশল নিয়েছে।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তটি কোনও আর্থিক বিলের মাধ্যমে না আসায় এতে ভোটাভুটি হলে সরকার পড়ে যাবে না। তবে সরকারের অস্বস্তি বাড়বে। প্রমাণ হবে, সরকার সংখ্যালঘু। কিন্তু সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্র দেওয়া বা ডিজেল ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাই ছিল সরকারের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সংসদে আলোচনা ও তাঁর জবাব দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এ ব্যাপারে সংসদে ভোটাভুটির কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতা আজ বলেন, বিরোধীরা ভোটাভুটি চাইলে তা এড়াতে গোড়াতেই সচেষ্ট হবে সরকার। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলে তবেই একমাত্র ভোটাভুটি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহের ওপরেই ভরসা রাখতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। সম্প্রতি মুলায়ম ও মায়াবতীর সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই ভাবে বাম নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, ঠিক যে কারণে মায়াবতী লোকসভায় অকাল ভোট চান না, একই কারণে বামেরাও অন্তবর্তী নির্বাচনের পক্ষে নন। কেন না অকাল ভোটে তাঁদের লাভ নেই।
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে সরকারের শরিক দল ডিএমকে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা বললেও সংসদে কী অবস্থান নেওয়া হবে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন করুণানিধি। তাই এই নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন নন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, রাজ্য রাজনীতির বাধ্যবাধকতাতেই এ রকম আচরণ করছে ডিএমকে। তামিলনাড়ুতে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা সরকার খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করায় ডিএমকে-রও উপায়ান্তর নেই। তবে তার মানে এই নয় যে কেন্দ্রে ইউপিএ থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে সরকারের পতন
ঘটাবে ডিএমকে।
তবে কংগ্রেসের প্রধান উদ্বেগ হল, সংসদ অচল হওয়া। খুচরো বিতর্ক বা ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো বিষয় নিয়ে ফের সংসদ অচল হয়ে থাকলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশের প্রক্রিয়া বাধা পাবে। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণ বিল বা খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ যেমন রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই দেশের ‘আর্থিক স্বাস্থ্য ফেরাতে’ পেনশন ও বিমা বিল পাশ করাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদ অচল থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন না হলে ধাক্কা খাবে কংগ্রেস। |
|
|
|
|
|