কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নিয়ে আর কোনও ঢিলেমি চাইছে না রেল। বরং রেল মন্ত্রক চাইছে, রাজ্যের অংশীদারি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে প্রকল্প রূপায়ণের গতি বাড়াতে। এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকে কাল দিল্লিতে ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে রেল বোর্ডের কর্তাদেরও থাকার কথা।
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী আজ বলেন, “কেরলের কোচি মেট্রো হোক বা বেঙ্গালুরু মেট্রো, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি সব রাজ্য নিজেদের উদ্যোগেই মেট্রো রেল নির্মাণ করছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সেই আর্থিক ক্ষমতা নেই। তাই কেন্দ্র তথা রেল মন্ত্রক কলকাতা মহানগরীতে মেট্রো রেল প্রকল্প নির্মাণ করেছে এবং করছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যর কাছে রেলের একমাত্র দাবি প্রশাসনিক সহযোগিতা।”
রেল মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর অংশীদারী হস্তান্তর নিয়ে রাজ্যের ঢিলেমির প্রসঙ্গে রেল বোর্ডের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অধীর। বিষয়টি নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আর তার পরেই কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন সচিব সুধীর কৃষ্ণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি পাঠান। কেন্দ্র চাপ তৈরির পর অবশ্য অংশীদারি হস্তান্তরের বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব। সেই সঙ্গে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় রাজ্যের পাঁচ জন ডিরেক্টরকেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রেল বোর্ডের এক কর্তা আজ বলেন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ খুবই ঢিমেতালে চলছিল। এর অন্যতম কারণ রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট। এত দিনে মাত্র ১৪৬ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। অধীরবাবুর বক্তব্য, “কেন্দ্র যে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে বঞ্চনা করছে না, সেটাই এ থেকে প্রমাণ হচ্ছে। রাজ্যে রেল প্রকল্প হোক বা গ্রামীণ এলাকায় সড়ক নির্মাণ, সবই কিন্তু হচ্ছে কেন্দ্রের টাকায়।”
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে যৌথ ভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্বে ছিল রাজ্যের পরিবহণ দফতর। প্রকল্পের জন্য আনুমানিক ৪৮৭৪ কোটি টাকার অর্ধেক দেওয়ার কথা ছিল রাজ্যের। কিন্তু রেলমন্ত্রী থাকাকালীন প্রকল্পের পুরোটাই রেলের হাতে তুলে নেওয়ার দাবি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইউপিএ-র তখনকার মেজো শরিকের সেই দাবি মেনে ২৩ অগস্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বিষয়টিতে সায় দেয়। ঠিক হয়েছিল, এর পর রাজ্য তার ৫০% অংশীদারীর পুরোই রেলের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু ইউপিএ থেকে তৃণমূল সমর্থন তুলে নেওয়ার পর গত চার মাস ধরে তৃণমূল সরকার সেই হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে ঢিলেমি করতে থাকে। রেল মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, অংশীদারি হস্তান্তরের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পাশাপাশি আগামিকালের বৈঠকে প্রকল্প রূপায়ণের বিষয়টি নিয়েও কথা হবে। সে জন্য রেল বোর্ডের মেম্বার (ইঞ্জিনিয়ারিং) এ পি মিশ্র আগামিকালের বৈঠকে থাকছেন। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, রেলের আওতায় জোকা-বিবাদি বাগ মেট্রো প্রকল্পের কাজ যে রকম গতিতে এগোচ্ছে, এ বার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজও সেই গতি পাবে। |