কমোডিটি ট্রেডিং |
চুক্তিপত্রটা পড়েছেন তো?
সাধারণত জিনিস কিনলে যেমন রেখে দেন ক্যাশ মেমো, তেমনই
এই বাজারেও সযত্নে রাখুন নিজের চুক্তিপত্র। পরের ঝামেলা এড়াতে
জেনে নিন তার প্রতিটি খুঁটিনাটি লিখছেন অরিন্দম সাহা |
|
|
পণ্যের বাজারে লগ্নি করতে পা তো রাখছেন। মন দিয়ে ‘ফিউচার কনট্রাক্ট’ বা চুক্তিপত্রটি পড়েছেন তো? মাথায় রাখবেন এই বাজারে পণ্যের লেনদেন কিন্তু আইন মেনে হয় এবং চুক্তিপত্রটিই তার নথি। যাতে লেখা থাকবে লগ্নির সমস্ত খুঁটিনাটি।
চুক্তিপত্রে মূলত দু’টি ভাগ থাকে—
• লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়
• পণ্য হাতে পাওয়ার খুঁটিনাটি
এটি ৭ থেকে ১০ পাতার হয়। পণ্যের বিশেষত্বের (কোথায় বেশি মেলে ইত্যাদি) ভিত্তিতে এক্সচেঞ্জ চুক্তিপত্র তৈরি করে। তা পাঠানো হয় বাজার নিয়ন্ত্রক ফরওয়ার্ড মার্কেটস কমিশনের কাছে অনুমোদনের জন্য।
|
চোখ রাখুন চুক্তির মেয়াদ |
চুক্তি শুরু ও শেষের মেয়াদ লেখা থাকে এই অংশে। মেয়াদ কবে শেষ হচ্ছে তা মনে রাখা জরুরি। কারণ, অনেক সময়ে বাধ্যতামূলক ভাবে পণ্য বাড়ি নিয়ে যেতে হয়। না-মানলে দিতে হয় জরিমানা। তাই এই ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে সময়ের আগেই ক্রেতাকে বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
|
লেনদেনের সময় |
ভারতে সোম থেকে শুক্রবার প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কৃষিপণ্য লেনদেন হয়। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে তা চলে প্রায় মধ্যরাত্রি পর্যন্ত। শনিবার সব ধরনের পণ্য লেনদেন হয় ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। সাধারণ ছুটির দিনে বাজার বন্ধ থাকে।
|
লগ্নির ন্যূনতম পরিমাণ বা একক |
লগ্নির সময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য কিনতে ক্রেতা বাধ্য থাকেন। সেটিই ওই পণ্যের একক। অশোধিত তেলের ক্ষেত্রে এই একক ১০০ ব্যারেল। অর্থাৎ তার নীচে ওই পণ্যটি কেনা যাবে না। প্রতি ব্যারেলের দাম ৫,০০০ টাকা হলে চুক্তির মূল্য ৫ লক্ষ টাকা।
|
কোটেশন |
চুক্তির মোট মূল্য যাই হোক, প্রথম লগ্নি করার সময়ে ন্যূনতম দাম দেখেই পছন্দের পণ্য কিনবেন। ১০০ ব্যারেল অশোধিত তেল কিনতে আপনি ৫ লক্ষ টাকার চুক্তি করলেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন ১ ব্যারেল তেলের দাম বাজারে কত। এই ক্ষেত্রে ওই ‘১ ব্যারেল’ আপনার কোটেশন। তার দামের উপর নির্ভর করেই আপনি পণ্য কেনা-বেচার কথা এক্সচেঞ্জকে জানাবেন।
|
মার্জিন |
একেবারে প্রথমে নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে চুক্তিপত্র কেনার সময়েই পণ্যের দামের একটি অংশ দিতে হয়। একে বলে মার্জিন মানি। সাধারণত এই পরিমাণ ৫ থেকে ১০%। দামের খুব বেশি হেরফের ঘটলে এক্সচেঞ্জ সেই অঙ্ক পরিবর্তনও করতে পারে।
|
প্রাইস কোট |
প্রতিটি পণ্যের জন্য একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের দাম ধরা থাকে। সে ভাবেই তৈরি হয় চুক্তিপত্র। কারণ, দেশে বিভিন্ন স্থানে পণ্যের দাম বিভিন্ন। গুজরাতের এক লগ্নিকারী হয়তো সেখানের তুলোর দাম ধরে লগ্নি করলেন। অন্য রাজ্যে তা আলাদা। ফলে এক্সচেঞ্জ ও লগ্নিকারীর লাভ ক্ষতির হিসাব করায় সমস্যা হয়। তাই এই ব্যবস্থা। যেমন, তুলোর জন্য এমসিএক্স-এ রাজকোটের দর ধরা হয়।
|
পণ্যের মান/ ধরন |
একটি পণ্যের বিভিন্ন ধরন থাকতে পারে। যেমন, কলকাতায় প্রায় ৫-৬ ধরনের আলু পাওয়া যায়। এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি মেলে, তার দাম ধরেই চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়। আলুর মধ্যে কী দাগ থাকবে, তা সবুজ হবে কি না, খোসা কী ধরনের হবে, তার বিবরণ দেওয়া থাকে। এক বস্তায় সর্বোচ্চ কী পরিমাণ আলু থাকবে, বলা থাকে তা-ও।
|
চুক্তিপত্র পাবেন কী ভাবে |
• এক্সচেঞ্জ সদস্যদের মধ্যে থেকে বেছে নিন নিজের পছন্দ। দেশে এমসিএক্সের প্রায় ২,১০০ সদস্য রয়েছেন।
পূর্ব-ভারতেই আছেন প্রায় ৩০০ জন।
• ব্রোকার বেছে নিয়ে ‘কে ওয়াই সি’ বা ‘নো ইওর কাস্টমার’ নথি পূরণ করুন।
• চুক্তিপত্রটি অবশ্যই মন দিয়ে পড়ুন। মার্জিন কত দিতে হবে, পণ্যের বিশেষত্ব এবং হাতে পাওয়ার নিয়ম মনে রাখুন।
• শুধুমাত্র চেক অথবা ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমেই মার্জিনের অর্থ জমা দিন। ব্রোকারের হাতে নগদ অর্থ দেবেন না।
• ব্রোকার আপনার হয়ে লেনদেন করলেও অবশ্যই জরুরি নথিপত্র নিজের কাছে রাখুন।
|
|
ডিউ ডেট রেট |
বাজারে চুক্তির মেয়াদ শেষের দিন যাতে লগ্নিকারী বেশি পণ্য কেনা-বেচার মাধ্যমে তার দাম নিয়ন্ত্রণ না-করতে পারেন, সে জন্যই ব্যবহার করা হয় ‘ডিউ ডেট রেট’। এ জন্য বিভিন্ন জায়গার বাজারগুলিতে ফোন করে সেখানকার দর নেওয়া হয়। সেই দামগুলির গড় হিসেবে আগাম লেনদেনের বাজারে পণ্যটির চূড়ান্ত দাম কী হবে তা স্থির করা হয়। যার ভিত্তিতে মেয়াদ শেষের দিনে লগ্নিকারীর লাভ-ক্ষতির হিসাব কষা হয়। পণ্য বাড়ি নিয়ে যেতে হলে সেই দরই দিতে হয় লগ্নিকারীকে। এই গড় দামই ওই পণ্যের ‘ডিউ ডেট রেট’।
|
ডেলিভারি লজিক |
পণ্য হাতে পেতে প্রতিটি চুক্তিপত্রে নিম্নোক্ত তিনটির মধ্যে একটি নিয়ম মেনে চলা হয়—
• পণ্য বাধ্যতামূলকভাবে হাতে নেওয়া। এই ক্ষেত্রে চুক্তির সময়ে বলা থাকে, লগ্নিকারী তা হাতে নেবেন কি না। সে ক্ষেত্রে চুক্তি শেষের পর এক্সচেঞ্জ তাঁকে বলবে বাধ্যতামূলকভাবে পণ্য বাড়ি নিয়ে যেতে।
• বিক্রেতার পছন্দ। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতাই বলবেন তিনি পণ্য ক্রেতাকে দেবেন কি না। ক্রেতার পছন্দ এ ক্ষেত্রে খাটবে না।
• ক্রেতা ও বিক্রেতার পছন্দ। দু’জনেই যদি পণ্য দেওয়া নেওয়ার কথা জানান, তবেই তা সম্ভব। না হলে এক্সচেঞ্জ মেয়াদ শেষের দিন দাম অনুসারে লাভ ক্ষতির হিসাব করে।
|
ডেলিভারি পে ইন/ পে আউট |
এক জন ক্রেতা কী ভাবে টাকা মেটাবেন এবং বিক্রেতা কী ভাবে সেই টাকা পাবেন, তা চুক্তিপত্রের এই অংশে লেখা থাকে। অবশ্যই এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এই টাকা লেনদেন হয়।
|
অন্যান্য |
এর বাইরেও চুক্তিপত্রে অন্য অনেক বিষয় বলা থাকে। যেমন চুক্তিতে কোনও বিষয়ে গোলমাল থাকলে তা কী ভাবে মেটানো হবে, ডিম্যাট নিয়ে নানা তথ্য ইত্যাদি। |
লেখক এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট,
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|