অবশেষে অবসর।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃপদ থেকে সরে দাঁড়ালেন প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও এবং প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও। সপ্তাহব্যাপী অষ্টাদশ পার্টি কংগ্রেসের শেষে এ দিন ৩০০ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন হল। আশা করা হচ্ছে, আগামী কাল জি জিনপিং পার্টির নতুন সর্বময় নেতা হিসেবে দায়িত্বভার নেবেন।
চিনের নয়া
প্রেসিডেন্ট
জিনপিং। |
সমাজতন্ত্রী চিনে পার্টি-নেতৃত্বই প্রশাসনের নেতৃত্ব দেন। আগামী কাল নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি প্রথমে ২৫ সদস্যের নতুন পলিটব্যুরো নির্বাচন করবে। পলিটব্যুরো তার পর বেছে নেবে পার্টির নতুন স্ট্যান্ডিং কমিটিকে। চিনে ক্ষমতার শীর্ষবিন্দু এই স্ট্যান্ডিং কমিটিই। স্ট্যান্ডিং কমিটির মাথায় যাঁরা থাকেন, তাঁরাই দেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকেন। হু জিনতাওয়ের পরে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং-এর নাম উঠে এসেছে। জিয়াবাওয়ের জায়গায় বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগামী কাল পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে এঁদের অভিষেক হওয়ার কথা। তবে জিনতাও-জিয়াবাও দলের পদ ছাড়লেও দেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন।
জিনতাও-এর প্রভাব অবশ্য এতেই ফুরোচ্ছে না। কারণ তাঁর ‘উন্নয়ন বিষয়ক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি’র তত্ত্ব এ দিন পার্টি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং এ বার থেকে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণ নীতিকে পার্টির সংবিধানসম্মত পথনির্দেশ হিসেবে মেনে নেওয়া হল। কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনস্থ পার্টি-স্কুলের শিক্ষক জিন মিং এর সপক্ষে সওয়াল করে বলেছেন, “নস্টালজিয়ায় ভুগে লাভ নেই। যাঁরা সংস্কারের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা ভুল করছেন।”
আর একটা দিক থেকেও দশ বছরের জিনতাও-যুগ আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হতে চললেও তাঁর গুরুত্ব কমবে না বলে অনেকের মত। এমনিতে হু তাঁর সামরিক নেতৃপদও ছাড়ছেন। ফলে সরকারি ভাবে জিনপিং সব ক্ষমতাই পাবেন। কিন্তু বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা, দলে সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে তাঁকে। চিনে সমস্ত
ভোট দিচ্ছেন জিনতাও। মঙ্গলবার
বেজিংয়ে। ছবি: রয়টার্স |
বড় সিদ্ধান্ত পার্টির শীর্ষ স্তরে কমবেশি ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিতে হয়। সেখানে জিনপিং কত জন সদস্যকে তাঁর পাশে পাবেন, তা নিয়ে এখন থেকেই সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ পলিটব্যুরো এবং স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাঁরা আসতে চলেছেন বলে অনুমান, তাঁদের অধিকাংশই সে ভাবে জিনপিংয়ের কাছের লোক নন।
নতুন নেতৃত্বকে নিয়ে কিছুটা চিন্তায় রয়েছে ভারতও। জিনতাওয়ের আমলে গত দশ বছরে ভারতের সঙ্গে চিনের রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেকটাই ভালর দিকে গিয়েছে। বেড়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্কও। শুধু এ বছরই দু’দেশের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি-রফতানি হয়েছে। জিনতাও বা জিয়াবাও, নিজেদের শাসনকালে বেশ কয়েকবার ভারতেও এসে ছিলেন। কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্ট জিনপিং বা ভাইস প্রিমিয়ার কেকিয়াং এক বারও আসেননি। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্যার খুঁটিনাটি তাঁরা কতটা জানেন, সে প্রশ্ন উঠছে। তবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের আশা, জিনপিং বা কেকিয়াং এর আগে ভারতে না এলেও ভারত সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহালই থাকবেন। নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননও বেজিং যাবেন বলে ঠিক রয়েছে। |