ভাইয়ের পাতে হরেক রকম সন্দেশ। তাতে যদি আবার নলেন গুড়ের ছোঁয়া থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই। নলেন গুড়ের এই ছোঁয়া দিয়েই এ বার বাজিমাত করতে নেমেছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা।
কালীপুজোর পর দিন বিসর্জন পর্ব মিটতে না মিটতেই মিষ্টির দোকানে ভিড় জমান মানুষজন। ক্রেতার চাহিদা সামাল দেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেন ব্যবসায়ীরা। অন্য সব উৎসবে প্রচুর মিষ্টি বিক্রি হলেও সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় ভাইফোঁটা। কোথায় কী মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছে, কোন দোকানে বিশেষ কী তৈরি হয়েছে, সে নিয়ে মানুষের উৎসাহ থাকে তুঙ্গে। |
কালনা শহরের ভিতরে রয়েছে দু’টি ছানার বাজার। সেখান থেকে ছানা কিনে শুরু হয়ে যায় মিষ্টি তৈরি। ব্যবসায়ীরা জানান, এ বার ইতিমধ্যে গ্রাম বাংলায় যেমন শীতের পরিবেশ নেমে এসেছে, গত কয়েক বছর ভাইফোঁটার সময়ে তা হয়নি। তাই ইচ্ছা থাকলেও অন্য বার ভাইদের পাতে নলেন গুড়ের সন্দেশ তুলে দেওয়া যায়নি। এ বার অবশ্য সে আক্ষেপ কিছুটা হলেও মিটেছে। বনগাঁ, দাঁইহাট, পাটুলি-সহ নানা জায়গা থেকে এসে পৌঁছেছে নলেনগুড়। তাই দোকানে মিলছে নলেনগুড়ের সন্দেশ। ব্যবসায়ীদের দাবি, তা বিক্রিও হচ্ছে হুহু করে।
কালনার বৈদ্যপুর মোড়ে একটি মিষ্টি দোকানের মালিক মনোজিৎ মোদক বলেন, “কম চিনির মিষ্টির দিকে ইদানীং ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি। তাই মাখা সন্দেশে কম চিনি দেওয়া হয়। তবে এ বার তাতে নলেন গুড় দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে আড়াই কুইন্ট্যাল মাখা সন্দেশ তৈরি করা হয়েছিল। বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে সব শেষ।” ব্যবসায়ীদের দাবি, ভাইফোঁটার আগে ছানা, চিনি-সহ মিষ্টি তৈরির নানা উপকরণের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। তা সত্ত্বেও ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে মিষ্টির দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা হয়েছে।
বৈদ্যপুর মোড়েই আর একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে জলভরা সন্দেশ, আমসত্ত্ব বরফি, আপেল সন্দেশ, কালাকাঁদ-সহ প্রায় একশো কুড়ি রকমের মিষ্টি। এখানকার কাটা মৌচাক, ম্যাজিক রোল, আতা সন্দেশ, ভাইফোঁটা লেখা সন্দেশ-সহ বেশ কিছু মিষ্টিতে রয়েছে নলেন গুড়। দোকানের মালিক বিকাশ ঘোষের কথায়, “হাতের কাছে এ বার নলেন গুড় রয়েছে। ক্রেতাদের তা থেকে বঞ্চিত করব কেন? তবে নলেন গুড়ের পাশাপাশি ক্ষীরের তৈরি মিষ্টিরও ভাল চাহিদা রয়েছে।”
কালনার সাহু সরকার মোড়ে একটি বড় মিষ্টির দোকানে সারা বছরই ভিন্ন রকমের মিষ্টি তৈরি হয়। ৪০ টাকা দামের মিষ্টিও রয়েছে এখানে। ভাইফোঁটা উপলক্ষে তৈরি হয়েছে ক্রিমচাঁদ, ক্রিমরোল, ম্যাঙ্গোচাপ, নলেন গুড়ের জলভরা, জেলি সন্দেশ, ইন্দ্রাণী ভোগ, পোস্ত কদম, ক্ষীর কদম, রসমাধুরী-সহ দেড়শো রকমের মিষ্টি। নলেন গুড়ের মাখা সন্দেশই তৈরি হয়েছে তিন কুইন্ট্যাল। দোকানের কর্ণধার দেবাশিস সাহার কথায়, “এ বার সবাই চাইছে, ভাইয়ের পাতে যেন আলাদা আলাদ ধরনের অনেক মিষ্টি তুলে দেওয়া যায়। তাই অনেক রকম মিষ্টি তৈরি হয়েছে। নানা ধরনের ক্রেতার কথা মাথায় রেখে একই রকম মিষ্টি নানা দামেও রাখা হয়েছে।” ভাইদের প্রতি তাঁর সতর্কবার্তা, “অনেক মিষ্টির মধ্যে ক্ষীরের পুর রয়েছে। সাবধানে কামড় না দিলে তা ছিটকে গায়ে পড়তে পারে।” নিভুজিবাজারের একটি মিষ্টি দোকানের মালিক দেবরাজ বারুই বলেন, “বনগাঁ বাজারে যে নলেন গুড় পাওয়া যাচ্ছে, তা নিয়ে আসা হয়েছে। আশা করি, ভাইদের তৃপ্তি দিতে পারব।” |