গ্রামে দুর্গাপুজোর তেমন রেওয়াজ নেই। কিন্তু কালীপুজো হয় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই। তাই কালীপুজোই শারদোৎসব মঙ্গলকোটের মাজিগ্রামে। মঙ্গলবার থেকে সেই উৎসবেই মজেছে গোটা গ্রাম।
আষাঢ় মাসের নবমী তিথিতে শাকম্ভরী দেবীর পুজো হয় এই গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েকশো বছর আগে গ্রামের সর্দারপাড়ার বাসিন্দারা স্থানীয় একটি পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে পাথরের একটি মূর্তি কুড়িয়ে পান। সেই মূর্তি ‘শাকম্ভরী’ নামে পরিচিত হয়। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মতে, “মূর্তিটি আসলে দুর্গার। শাকম্ভরী পুজোর কিছু দিনের মধ্যেই হয় দুর্গাপুজো। তাই পরপর দু’বার পুজো না করে কালীপুজো চালু হয়। গ্রামে শারদোৎসব হয় না। কয়েকটি বাড়িতে ঘটে পুজো হলেও মূর্তি আসে না।”
বাসিন্দারা জানান, দুর্গাপুজো হয় না বলে, কালীপুজোটাই আড়ম্বরে পালন করেন তাঁরা। আত্মীয়ের বাড়িতে তত্ত্ব পাঠানো থেকে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়, সবই কালীপুজোকে ঘিরে। গ্রামের পুরনো পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম চক্রবর্তী বাড়ির পুজো। বছরভর মন্দিরে পূজিত হন দেবী। বিসর্জনের পরে খড়ের কাঠামো পুকুর থেকে তুলে এনে মন্দিরে রাখা হয়। তাতেই দেবীর পুজো হয়। চক্রবর্তী বাড়ির অন্যতম সদস্য, কাটোয়া মহকুমাশাসক দফতরের কর্মী বিমল চক্রবর্তী বলেন, “কালীপুজোকে ঘিরেই আমাদের সারা বছরের অপেক্ষা। অন্য জায়গায় দুর্গাপুজোয় বিজয়া হয়। আমাদের কালী পুজোয়।”
এই গ্রামে শ্যামা বাড়ি ও মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো হয় পাশাপাশি দুই মন্দিরে। একই চত্বরে দু’টি মন্দির থাকলেও পুজোর নিয়ম আলাদা। এই গ্রামে ‘ধরণী পুজো’ও হয় সারা বছর ধরে। সে ক্ষেত্রে বিসর্জন দেওয়া হয় না দেবী মূর্তি। কালীপুজোর আগে বিসর্জন দেওয়া হয়। তার পরে আবাহনের জন্য তৈরি হয় নতুন দেবীমূর্তি। সারা বছর ধরে পুজো হয় সেই মূর্তিই। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মদনমোহন পাঁজা বলেন, “দেবীর মূর্তি সারা বছর রেখে পুজোর আদেশ স্বপ্নে পেয়েছিলেন আমার মা। তাই মূর্তির বিসর্জন হয় না।” মাঠ পাহারার টাকা জমিয়ে সর্দার পাড়ার যুবকেরা দেবীর পুজো করেন। নতুন করে মন্দির তৈরি করা হয়েছে দেবীর জন্য। পাড়ার বাসিন্দা দীনবন্ধু মাঝি বলেন, “বছর সাত-আটেক আগেও তালপাতার ছাউনি দিয়ে পুজো করা হত।”
বিসর্জনের দিন গ্রামের প্রতিটি উদ্যোক্তা শোভাযাত্রা করে দেবীকে কালীসায়র পুকুরে নিয়ে যান। গ্রামের একটি সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদক তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিসর্জনের আগে শাকম্ভরী তলায় প্রতিটি প্রতিমা রেখে বাজি ফাটানোর প্রথা এখনও চলে আসছে। |