এক মাস ধরে রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেন দেরিতে চলায় রায়গঞ্জ মহকুমার যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। অভিযোগ, প্রতিদিনই প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি চলছে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে ট্রেনটি গভীর রাতে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও রাধিকাপুর পৌঁছচ্ছে। যাত্রীরা স্টেশনে নেমে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। রিকশা ও ট্যাক্সি না পেয়ে যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলেও অভিযোগ। বিষয়টি সরব রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ী সংগঠন ও যাত্রীরা সম্প্রতি আমার কাছে রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেন দেরিতে চলার অভিযোগ জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।”
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মালদহ সার্কেলের সিনিয়ার সেকশন বাস্তুকার সন্দীপ সিংহ বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে! রায়গঞ্জ মহকুমার সঙ্গে শিলিগুড়ির রেল যোগাযোগ গড়তে ২০১১ সালের রেল বাজেটে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার চালুর কথা ঘোষণা করেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেনের যাত্রার উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাধীনতার ছয় দশক পর রায়গঞ্জ মহকুমা থেকে শিলিগুড়ির রেল যোগাযোগ গড়ে ওঠায় সেই সময় খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে গোটা উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে। রেল সুত্রে জানা যায়, ৮ কোচের রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ডিএমইউ ট্রেনটি সপ্তাহে ৬ দিন যাতায়াত করে। রাধিকাপুর স্টেশন থেকে রবিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৬টায় ছেড়ে ট্রেনটি বেলা ১১টা ৩৫মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছনোর কথা।
শনিবার বাদে বিকাল সওয়া ৫টায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছেড়ে ট্রেন রাত ১০টা ৫০মিনিটে রাধিকাপুর স্টেশনে পৌঁছনোর নির্ধারিত সময় রয়েছে। যাতায়াতের পথে ট্রেন ডালিমগাঁও, কালিয়াগঞ্জ, বাঙ্গালবাড়ি, বামনগাঁও হল্ট, রায়গঞ্জ, ঝিটকিয়া হল্ট, কাচনা, দাচনা, বারসই, কিসানগঞ্জ, আলুয়া বাড়ি রোড, পোথিয়া, ভাইরাদপুর ছাড়া ঠাকুরগঞ্জ, পিপরিথান হল্ট, গলগলিয়া, অধিকারী, বাতাসি হল্ট, নকশালবাড়ি, বাগডোগড়া, মাটিগাড়া হল্ট, শিলিগুড়ি জংশন ও শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে দাঁড়ায়। অভিযোগ, এক মাস ধরে প্রতিদিনই ট্রেনটি সকাল ৬ টার পরিবর্তে তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি রাধিকাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ছে! অন্য দিকে, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেনটি নির্ধারিত বিকাল সওয়া ৫ টায় ছাড়লেও যাত্রাপথে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিনই ট্রেনটি রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও রাধিকাপুর পৌঁছচ্ছে বেশি রাতে।
রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী ও পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোম বলেন, “রায়গঞ্জের সঙ্গে শিলিগুড়ির রেল যোগাযোগ গড়ার দাবিতে বাসিন্দাদের নিয়ে ব্যবসায়ীরা গত ২০ বছরেরও বেশি সময় আন্দোলন করেছেন। ধারাবাহিক আন্দোলনের জেরে রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালু হলেও এক মাস ধরে দেরিতে চলায় যাত্রীরা চরম সমস্যায়। রায়গঞ্জের সাংসদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপাদেবীকে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানিয়েছি।” জেলা রেলযাত্রী সমিতির সম্পাদক তপন চৌধুরী বলেন, “নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে ট্রেনটি গভীর রাতে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও রাধিকাপুর স্টেশনে আসায় যাত্রীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। অবিলম্বে রেল কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময় মেনে ট্রেনটি না চালালে যাত্রীদের নিয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ করা হবে। |