শিলিগুড়ির শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের ভবনের অনুমোদিত কোনও নকশা রয়েছে কি না তা নিয়ে পুরসভার অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ সূত্রের খবর, বহু ফাইলপত্র ঘেঁটেও ওই ভবনের পুরানো কোনও নকশার হদিস এখনও মেলেনি। তা হলে খোদ মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত কোন যুক্তিতে ওই চার তলা ভবন সংস্কারের অনুমতি দিয়েছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। এমনকী, প্রয়োজনীয় নকশা ছাড়া ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণ চলতে থাকলে পুরবোর্ডের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলেও কাউন্সিলরদের একাংশের মত। এমতাবস্থায়, ওই ভবন নির্মাণ করিয়ে নথিপত্র পরীক্ষার দাবিতে সরব হয়েছেন কাউন্সিলরদের অনেকেই।
যে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নির্মাণ হচ্ছে তার মুখপাত্র মতিলাল গুপ্ত বলেছেন, “আমরা কোনও বেআইনি কাজ করছি না।” তাঁরা মেয়রের অনুমতি সাপেক্ষে সংস্কার করছেন বলে দাবি করেছেন। যদিও মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী রবিবার বলেছেন, “আমি সংস্কারের অনুমতি দিয়েছিলাম। সেই অনুমতি নিয়ে বেআইনি নির্মাণ হলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।” আজ, সোমবার মেয়র ওই নির্মাণ বন্ধের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, মেয়র পারিষদ সীমা সাহা আগেই বিধিভঙ্গের অভিযোগে ওই ভবন পুনর্নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন। তার পরেও মেয়রের অনুমতি রয়েছে জানিয়ে নির্মাতারা কাজ চালিয়ে যাওয়ায় পুরসভায় চলছে নানা জল্পনা। ইতিমধ্যেই মেয়রের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের একাংশ কোন স্বার্থে ওই অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করার দাবি তুলেছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, মহাবিদ্যালয় অন্যত্র সরানোর পরে ওই চারতলা ভবনে বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি দোকান নির্মাণ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। অথচ মহাবিদ্যালয়ের জায়গায় বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ার জন্য নতুন করে কোনও নকশা জমা পড়েছে কি না তাও পুরসভার কাছে স্পষ্ট নয়। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, অতীতে স্কুল কিংবা কলেজ ভবন থাকায় সে ভাবে নকশার ব্যাপারে খোঁজখবর করা হয়নি। কিন্তু, বাণিজ্যিক ভবন করতে হলে পার্কিংয়ের জায়গায় বিধি মেনে রাখাতে হবে। সে জন্যই নয়া নকশা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানান, ওই ভবন সংক্রান্ত নকশার খোঁজ চলছে। তা না-পেলে নির্মাতা সংস্থার কাছে নকশার প্রতিলিপি চাওয়া হবে বলে পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে।
যে ওয়ার্ডে ওই নির্মাণ চলছে, সেখানকার কাউন্সিলর নান্টু পাল কিছুদিন আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। নান্টুবাবু বলেন, “মেয়র অনুমতি দিয়ে থাকলে আমার কিছু বলার নেই।” উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে সেবক রোডের একটি হোটেলে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ ওঠে। সেই সময়ে নান্টুবাবু ছাড়াও কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক, সিপিএম কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল ওই বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন। সম্প্রতি শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের একাধিক বাণিজ্যিক ভবন, বর্ধমান রোডের একটি পাঁচ তলা বাণিজ্যিক ভবন তৈরির ক্ষেত্রেও বিধিভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। তা নিয়েও কাউন্সিলরদের একাংশ সরব হন। এত অভিযোগ ওঠার পরেও পুরসভা সত্যাসত্য খতিয়ে দেখে নিজেদের অবস্থান জনসমক্ষে জানাচ্ছে না কেন তা নিয়ে শহরবাসীদের মধ্যেই চলছে নানা আলোচনা। |