ডুয়ার্সের গরুমারায় ‘সাফারি’র সময়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারায় কলকাতার এক মহিলা পর্যটক সহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির গরুমারা জাতীয় উদ্যানে বিচাভাঙায় কলাখাওয়া নজরমিনারের সামনে একটি গেটের মুখে ঘটনাটি ঘটেছে। দুর্ঘটনায় ১টি শিশু সহ ৬ জন জখম হন। ৩ জনের আঘাত গুরুতর। তাঁদের জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম শম্পা ভট্টাচার্য (৩০)। বাড়ি কলকাতার রাজপুরের শহিদ বিশ্বনাথ সরণি এলাকায়। গাড়ির চালক মুস্তাফা রহমানের (৪৫) ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, সন্ধ্যার সময়ে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ার কারণে বাঁক ঘোরানোর সময়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছিলেন। সে জন্য হয়তো বাঁক ঘোরাতে না-পেরে সোজা একটি গাছে ধাক্কা মারেন। চালকের জঙ্গলে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে প্রশিক্ষণ ছিল কি না পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ ছিল কি না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিন্নাগুড়ির বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র সাহা, কলকাতার শ্যামনগরের বাসিন্দা সোমনাথ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী রুবি দেবী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সাফারির গাইড উত্তর ধূপঝোরার বাসিন্দা গোবিন্দ মাহাতোও গুরুতর জখম। গাড়িতে ছিলেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা তথা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক কালীদাস ভট্টাচার্যও। তাঁর কথায়, “বিকেল বেলায় গাড়ি নিয়ে সাফারিতে বের হলাম। জঙ্গলের ভেতরে দুটি নজরমিনারে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাই। এর পরে আদিবাসী নাচ দেখার জন্য জঙ্গলের বিচাভাঙায় যাওয়ার পথে হঠাৎ একটি বাঁকে গাড়ির গতি বেড়ে গেল। তার পরেই গাড়িটি সোজা গিয়ে গাছে ধাক্কা মারল। ঘটনাস্থলেই মহিলা পর্যটক জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। আমাদের সকলেরই হাত-বুকে কেটে গিয়ে রক্ত বের হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ‘গাইড’ গোবিন্দবাবু। তিনি বললেন, “গাড়িটি ভালই চলছিল। আমি সামনের আসনেই বসেছিলাম। জঙ্গলের ভেতরে ফাঁকা রাস্তায় গতিও বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎই একটা বাঁকে বা দিকে না ঘুরে গাড়িটি সোজা যেতে শুরু করায় পাশে বসা চালককে প্রশ্ন করব ভাবছি। তখনই জোরে একটা গাছে ধাক্কা লাগল। ছিটকে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। তার পরে আর কিছু মনে নেই।” কলকাতার শ্যামনগরের বাসিন্দা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত স্টেট ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্মী সোমনাথবাবু ও তাঁর স্ত্রী রুবি দেবী এবং মেয়ে জামাই সুমন্ত্র ও শম্পা ভট্টাচার্য এবং তাদের ৫ বছরের মেয়ে সোমাকে নিয়ে রবিবারই কলকাতার থেকে গরুমারায় পৌঁছন। তাঁরা মূর্তি এলাকার একটি রিসর্টে উঠেছিলেন। একই রিসর্টে ছিলেন ব্যারাকপুরের কালীপ্রসাদবাবু এবং তাঁর বন্ধু সুভাষবাবু। সুমন্ত্রবাবুর তেমন চোট না লাগলেও তাদের শিশুকন্যা সোমার মাথার পেছনে আঘাত লেগেছে। এ দিকে এ দিনের দুর্ঘটনার পরে জঙ্গল সাফারির জিপসি গাড়িগুলি কতটা নিরাপদ তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন ট্যুর অপারেটারদের সংগঠন। আসোসিয়েশন ফর কনজারেভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, “যতদূর জানি, সেনাবাহিনীর নিলাম করা মারুতি জিপসি দিয়েই সাফারি হচ্ছে। সবই ২০-২৫ বছরের পুরোনো গাড়ি। তা দিয়ে জঙ্গল সাফারি করা কতটা নিরাপদ সে প্রশ্ন আমরা গোড়াতেই তুলেছি। বন দফতর আমাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেছে।” জলপাইগুড়ি জেলার বন্যপ্রাণী (২) বিভাগের ডিএফও সুমিতা ঘটক বলেন, “এখন কলকাতায় রয়েছি। তবে ঘটনাটি শুনেছি। খুবই দুর্ভাগ্যজনক।” |