নিয়োগের সুপারিশ ঘিরে ফের বিতর্কের মুখে পার্থ
লোবা-কাণ্ডের রেশ না-কাটতেই ফের বিতর্কে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজের নির্বাচনী এজেন্টকে সরস্বতী প্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ পাঠ্য পুস্তক নিগমের অন্যতম ডিরেক্টর করতে চেয়ে সরকারকে সুপারিশ পাঠিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। এবং যাঁর জন্য সুপারিশ, তিনি স্নাতকও নন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক! মন্ত্রীর সুপারিশ অনুযায়ী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে।
সরস্বতী প্রেসে রাজ্যের বাজেট থেকে শুরু করে ব্যালট পেপার-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় সরকারি নথি ছাপা হয়। পাঠ্য পুস্তক নিগমে ছাপা হয় স্কুল-শিক্ষা দফতরের যাবতীয় বইপত্র, যা সারা রাজ্যে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করে সরকার। বাজেট-ব্যালট ছাপার সরকারি প্রেসে নিজের নির্বাচনী এজেন্ট, এবং পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনার সংস্থায় এক জন উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণকে ডিরেক্টর করার সুপারিশ ঘিরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের একাধিক কর্তার বক্তব্য: ওই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাপকাঠি না-থাকলেও অতীতে কখনও এত কম শিক্ষাগত যোগ্যতার কাউকে বসানো হয়নি, এ ভাবে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক কর্মীকে আনারও নজির নেই।
অঞ্জন দাস পার্থ চট্টোপাধ্যায়
শিল্পমন্ত্রীর তরফে তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট অঞ্জন দাসের জন্য পাবলিক এন্টারপ্রাইজ দফতরে সুপারিশটি পাঠানো হয়েছে গত ২৪ সেপ্টেম্বর (মেমো নম্বর: এফ-২/এস এ-১৩৪/ডব্লু বি/১২)। উল্লেখ্য, এই দফতরের ভারও শিল্পমন্ত্রীর হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক পদে ‘গুণী’ ব্যক্তিদের বসানোর পক্ষে সদা সরব পার্থবাবুর তরফ থেকে এ হেন চিঠি পেয়ে দফতরের কর্তাদের অনেকেই বিস্মিত। তাঁরা বলেছেন, মাস কয়েক আগে ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষিকা নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখন পার্থবাবু সংবাদ মাধ্যমে আরাবুলের ‘কৃতকর্মের’ নিন্দা করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, আরাবুলের মতো নিছক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ কোনও ব্যক্তি কী ভাবে কলেজ পরিচালনার মাথায় বসেন, তা নিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন তুলেছিলেন এই পার্থবাবুই। পাশাপাশি কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে মনোনীত ব্যক্তির নিদেন স্নাতক হওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও। কিন্তু অঞ্জনবাবুর জন্য পাঠানো সুপারিশটি ওঁদের এই সুরের সঙ্গে আদৌ মেলে না বলে মনে করছেন সরকারি কর্তাব্যক্তিদের একাংশ। শিল্পমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্য মারফত পাবলিক এন্টারপ্রাইজ দফতরে পাঠানো সুপারিশটির সঙ্গে অঞ্জনবাবুর বায়ো-ডেটাও রয়েছে। সেখানে অঞ্জনবাবুর দাবি, তিনি সিকিমের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূর-শিক্ষার মাধ্যমে স্নাতকস্তরের পাঠ নিচ্ছেন। যার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের একাধিক কর্তার প্রশ্ন, “যিনি এখনও গ্র্যাজুয়েশন করে উঠতে পারেননি, তিনি পাঠ্য পুস্তক নিগমের মাথায় বসেন কী ভাবে?”
জীবনপঞ্জিতে নিজের ‘স্ট্যাটাস’ সম্পর্কে অঞ্জনবাবু সরকারকে জানিয়েছেন, ২০০১, ২০০৬ এবং ২০১১-য় তিনি ১৫৪ নম্বর বেহালা (পশ্চিম) কেন্দ্রে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। বতর্মানে তিনি সুন্দরবন পরিকাঠামো উন্নয়ন পষর্র্দের অন্যতম ডিরেক্টর, সেই সঙ্গে সুন্দরবন উন্নয়ন পষর্র্দের অন্যতম সদস্যও বটে।
এই সুপারিশ ঘিরেই যাবতীয় বিতর্ক।
নির্বাচনী এজেন্টের নিয়োগ-সুপারিশ প্রসঙ্গে পার্থবাবুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমি সরাসরি কোনও নিয়োগের জন্য সুপারিশ করি না। এমন কিছু হয়ে থাকলে খোঁজ নেব।” শিল্পমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের অবশ্য দাবি, “প্রেসের কাজে অঞ্জনের পারিবারিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তৃণমূলে অনেক ভাল ছেলে আছে। অঞ্জন তাদেরই এক জন।”
পদ দু’টোয় অঞ্জনবাবুকে বসানোটা কি অবৈধ?
পাবলিক এন্টারপ্রাইজের কর্তারা জানিয়েছেন, দুই প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান বা ডিরেক্টর নিয়োগ করে দফতরের সচিবালয়। তাঁদের নির্দিষ্ট কোনও যোগ্যতার কথা স্পষ্ট ভাবে বলা নেই। ঠিক যে ভাবে কলেজ পরিচালন সমিতির মাথায় যাঁরা বসবেন, তাঁদেরও যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ঘটনা হল, সরস্বতী প্রেস ও পাঠ্য পুস্তক নিগমে অতীতে কখনও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এই সব দায়িত্বে আনা হয়নি। বরং প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে কর্তাদের দাবি। কী রকম?
যেমন বর্তমানে সংস্থা দু’টির চেয়ারম্যান যিনি, সেই এসপি সেনগুপ্ত এক বহুজাতিকে উচ্চ পদে কাজ করে এসেছেন। ডিরেক্টরেরাও হয় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট কিংবা ইঞ্জিনিয়ার, অনেকেই বহুজাতিকের প্রাক্তন কর্তা। বেশ কিছু আমলাও বিভিন্ন সময়ে ডিরেক্টরের চেয়ারে বসেছেন। সরস্বতী প্রেস এবং পাঠ্য পুস্তক নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবোধ মজুমদার বলেন, “এখন পাবলিক এন্টারপ্রাইজ, শিল্প পুর্নগঠন ও স্কুল-শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিবেরাই এখানে ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন।”
এক সরকারি কর্তার কথায়, “সরস্বতী প্রেস বা পাঠ্য পুস্তক নিগমে ডিরেক্টর হওয়ার জন্য প্রেসের কাজে অভিজ্ঞতার দরকার পড়ে না। সংস্থা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকাটাই বেশি জরুরি।”
তা হলে অঞ্জন দাসের নিয়োগ কতটা যৌক্তিক?
সুবোধবাবুর জবাব, “এ নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী সচিবালয়। আমাদের শুধু জানিয়ে দেওয়া হয়, নতুন কারা ডিরেক্টর হয়ে আসছেন।”
যাঁর জন্য সুপারিশ, তাঁর নিজের কী বক্তব্য?
রবিবার অঞ্জনবাবুকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, “মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছি, পরে ফোন করুন।” পরে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.