মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে পুজোর কয়েক দিন আগে উত্তর শহরতলির বিভিন্ন রাস্তার ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু পুজো মিটতে না মিটতেই ‘জোড়াতাপ্পি’ দেওয়া সেই রাস্তা ফের খানাখন্দে ভরা চেনা চেহারায়।
যেমন, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। বছর সাতেক আগেও গতির আর এক নাম হিসেবে পরিচিত ছিল এই রাস্তা। কিন্তু দীর্ঘদিন অবহেলা ও উপেক্ষার ফলে আজ তার সর্বাঙ্গে ক্ষত। তবে পুজোর আগেই রাজ্যের সমস্ত খারাপ রাস্তা সারানোর হিড়িকে তালিকায় ঠাঁই মিলেছিল কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ-সহ বিভিন্ন জেলার অন্যতম সংযোগকারী এই রাস্তার। নিমতা ও ঘোলার মধ্যে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তে তাপ্পি মারতে তৎপর হয় প্রশাসন। কিন্তু পুজো মিটতে না মিটতেই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি ফিরে আসতে শুরু করেছে চেনা ছবিতেই।
বি টি রোড ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর চাপ কমাতেই তৈরি হয়েছিল কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু গত দশ বছরে নিমতা থেকে কল্যাণী পর্যন্ত ওই রাস্তায় গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বাড়লেও রাস্তাটি সংস্কার বা সম্প্রসারণের কথা তেমন ভাবে ভাবেনি তৎকালীন সরকার। স্থানীয় বাসিন্দা ও গাড়িচালকদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে জোড়াতাপ্পি ছাড়া এক বারের জন্যও পুরোপুরি ভাবে মেরামতি হয়নি ওই রাস্তা। আরও অভিযোগ, রাস্তা চালু হওয়ার পরেই বসানো হয়েছিল টোল প্লাজা। কয়েক বছর আগে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হলেও সরকার পরিবর্তনের পরে ফের অস্থায়ী টোলপ্লাজা তৈরি করে কর আদায়
শুরু হয়েছে। |
এখানেই শেষ নয়। উত্তর শহরতলির গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়েই ফের শুরু হয়েছে খন্দপথের যন্ত্রণা। এই শিল্পাঞ্চলের ‘লাইফ-লাইন’ হিসেবেই পরিচিত বি টি রোডে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ গাড়ি যাতায়াত করে। বাসিন্দাদের কথায়, চার লেন হওয়ার পরে বি টি রোডে গাড়ি চলাচলের গতি বেড়েছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে মেট্রোর কাজের সমীক্ষার জন্য টিটাগড় থেকে ডানলপ পর্যন্ত অংশে খোঁড়াখুড়ি হতেই সেই গতি থমকেছে। রাস্তায় গর্ত খোঁড়া হলেও মেরামতি হয়নি। কোনও মতে মাটি দিয়ে গর্ত বোজানো হয়েছে। চলাচলের পথে ওই সব গর্তে চাকা পড়লে রীতিমতো লাফিয়ে ওঠে গাড়ি।
আগরপাড়া, সোদপুর, খড়দহ এলাকায় রাস্তাগুলিতেও অসংখ্য ছোট ও মাঝারি গর্ত। বড় গাড়িগুলি সেই গর্ত এড়িয়ে চললেও মোটরবাইক আরোহীদের জন্য তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তার উপরে বাতিস্তম্ভে লাগানো ভেপার লাইট অধিকাংশ সময়েই জ্বলে না। অভিযোগ, ভাঙাচোরা অন্ধকার রাস্তায় উল্টো দিকের গাড়ির জোরালো আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যাও কম নয়।
এই এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নীলগঞ্জ রোড। বেলঘরিয়া থেকে শুরু হয়ে পানিহাটি পর্যন্ত এই রাস্তা জুড়েও অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। সবচেয়ে ভয়ানক অবস্থা আগরপাড়া স্টেশনের কাছে মহাজাতি স্কুলের সামনে এবং বেলঘরিয়া প্রবর্তক কলোনি বাজারের সামনে। আগরপাড়ার বাসিন্দা সুপ্তশ্রী কর বলেন, “রাস্তা জুড়ে খানাখন্দ। গাড়িতে গেলে মনে হয় নৌকোয় রয়েছি। আর হেঁটে গেলে মনে হয় পাহাড়ে ওঠানামা করছি।” বেলঘরিয়া এম বি রোডের অবস্থাও তথৈবচ। নিমতার কালচার মোড়, বেলঘরিয়া পাওয়ার হাউস এলাকায় পিচ উঠে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত।
করুণ অবস্থা ব্যারাকপুর থেকে বীজপুর পর্যন্ত ঘোষপাড়া রোডেরও। শিল্পাঞ্চলের ঘনবসতির মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই রাস্তাটি অপরিসর। ভারী গাড়ির চাপে এই রাস্তাও ভেঙেচুরে বেহাল। একই অবস্থা ব্যারাকপুরের জে আর আর রোড, সেন্ট্রাল রোড, বরাহনগরের গোপাল লাল ঠাকুর রোড, মহারাজা নন্দকুমার রোড, ডানলপ মোড়ের আগে আর এন ঠাকুর রোড-সহ পলতা, ইছাপুর, শ্যামনগর, নৈহাটির রাস্তাগুলিরও। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ সিইএসসি, মেট্রো রেল, পানীয় জল, নিকাশি ও বিএসএনএল-এর কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুড়ি
করা হলেও তা ঠিক করে বোজানো হয়নি। জোড়াতাপ্পি দিয়ে কাজ সারা হয়েছে। তার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটছে
বলে অভিযোগ।
ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘কেন এত দ্রুত রাস্তাগুলি ফের ভেঙেচুরে গেল, সে বিষয়ে পূর্ত দফতরের কাছে রিপোর্ট চাইব। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি রাস্তাগুলিও দ্রুত মেরামত করা হবে।” |