|
|
|
|
দৌরাত্ম্য পাচারকারীদের |
স্বরূপনগরের গ্রামে
বাংলাদেশি বালিকাকে গণধর্ষণ
নিজস্ব সংবাদদাতা • স্বরূপনগর |
|
|
চোরাচালান, গরু পাচার তো রয়েছেই, মহিলাদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগও প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে বসিরহাট মহকুমার সীমান্ত এলাকায়।
শুক্রবারই বসিরহাটের গ্রামে এক বালিকাকে অপহরণের পরে পাচার করতে না পেরে খুনের অভিযোগ ওঠে এক পড়শির বিরুদ্ধে। আগে সেই লোকটির বিরুদ্ধে নারী পাচারের অভিযোগও ছিল। শনিবার রাতে পাশের স্বরূপনগর ব্লকের সীমান্তবর্তী ভাদুড়িয়া গ্রামে বছর চোদ্দোর এক বাংলাদেশি কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল গরু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে। অসুস্থ হয়ে পড়া ওই কিশোরীকে রবিবার বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ দিন বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের ‘ভূমিকা’ নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তোলেন।
বসিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বসিরহাট ও তার আশপাশের এলাকা পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অহরহ মহিলাদের খুন ও ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।”
এসডিপিও (বসিরহাট) আনন্দ সরকার বলেন, “ওই বালিকার দিদি পাঁচ জনের নামে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। যত দ্রুত সম্ভব অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় বাড়ি ওই কিশোরীর। বছর দু’য়েক আগে সে বসিরহাটের মাটিয়ায় দিদির বাড়িতে আসে। শনিবার সকালে দুই বোন গিয়েছিল ভাদুড়িয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল ওই কিশোরীর। সেই মতো দিদি ও এক আত্মীয়ের সঙ্গে স্বরূপনগরের গাবর্ডা সীমান্তে যায় সে।
কিন্তু রাত ৮টা বেজে যাওয়ায় ফলে তার আর বাংলাদেশে যাওয়া হয়নি। ওই এলাকা থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে তারা বসিরহাটে ফিরছিল। অভিযোগ, ভাদুড়িয়া গ্রামে কয়েক জন মদ্যপ দুষ্কৃতী তাদের গাড়ি আটকে টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয়। তার পরে পাঁচ দুষ্কৃতী ওই কিশোরীকে একটি ফাঁকা বাড়িতে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। গ্রামবাসীরা খবর পেয়ে বেরিয়ে এলে ওই দুষ্কৃতীরা পালায়। আক্রান্ত মেয়েটিকে ওই গ্রামে তার আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোরের দিকে তাকে ভর্তি করানো হয় একটি স্থানীয় হাসপাতালে। এর পরে ঘটনাটির কথা জানানো হয় পুলিশকে।
গ্রামবাসীদের দাবি, গরু পাচারকারীরাই এই গণধর্ষণে যুক্ত। যে বাড়িতে ওই বালিকাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ, রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পড়ে রয়েছে মদের বোতল, দুষ্কৃতীদের ছেঁড়া জামা, মোবাইলের কভার। ওই কিশোরীর দিদি বলেন, “গাড়ি থেকে টেনে নামানোর পরে বোনটাকে বাঁচাতে ওদের অনেক হাতে-পায়ে ধরি। কেউ কথা শুনল না।” ওই গ্রামের বাসিন্দা, তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, “সীমান্তে গরু পাচার বেড়ে যাওয়ায় প্রায়ই নানা অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে। আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”
কতটা বেড়েছে গরু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য?
পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হিসেব বলছে, গত ৭ অগস্ট পাচারকারীদের হাতে জখম হন এক গ্রামবাসী। ওই একই দিনে কৈজুড়ি গ্রামের এক বৃদ্ধাকে গরুর পালের মুখে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে। চোট পেয়ে ওই বৃদ্ধা মারা যান।
গত এপ্রিলে এক জওয়ানকেও পিটিয়ে খুন করা হয়। রয়েছে গ্রামবাসীদের খেতজমি নষ্ট এবং বাড়ি ভাঙচুরের অজস্র অভিযোগও। এর সঙ্গে রয়েছে নারী পাচারের মতো অপরাধও। অবশ্য শুধু স্বরূপনগর নয়, এমন অপরাধ ছড়িয়ে পড়েছে বসিরহাট মহকুমা জুড়ে। মুম্বই থেকে যে সংখ্যায় এই অঞ্চলের মেয়েরা উদ্ধার হয়েছে, তাতে স্পষ্ট, যে গত চার-পাঁচ মাসে ওই এলাকায় নারী পাচার ভয়াবহ আকার নিয়েছে, জানালেন নারী পাচার প্রতিরোধকারী এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বৈতালি গঙ্গোপাধ্যায়।
কী করছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা?
স্বরূপনগরের বিধায়ক তৃণমূলের বীণা মণ্ডল বললেন, “পুলিশকে বলেছি, অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। যে করেই হোক রুখতে হবে গরু ও নারী পাচার।” একই কথা শোনা গেল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ওই দলেরই নারায়ণ গোস্বামীর গলায়ও। বিএসএফের দাবি, পাচার রুখতে সীমান্তে নজরদারি ইতিমধ্যেই বাড়ানো হয়েছে।
কিন্তু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য তাতে বন্ধ হচ্ছে কই? সেই প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীরা। |
|
|
|
|
|