কোন ফুটবলার সেরা সেটা কী ভাবে নির্ধারণ করব? সেই প্লেয়ারের মধ্যে কয়েকটা গুণ খোঁজা দরকার। ১) ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, ২) পাসিং দক্ষতা, ৩) পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলা পাল্টানোর ক্ষমতা। ৪) টিম-ম্যান কি না।
এই চারটে মাপকাঠিতে ফেলে আমি র্যান্টি মার্টিন্সকে ভারতে খেলতে আসা বিদেশি স্ট্রাইকারদের মধ্যে সর্বকালের সেরা বলতে রাজি নই। কারণ, মজিদ বাসকার, চিমা ওকোরি, এমেকা এজুগোদের আমি দেখেছি। এটা বলছি না যে, এরা সকলেই সম্পূর্ণ স্ট্রাইকার ছিল। কিন্তু র্যান্টির আগে ওদের রাখব।
এটা মানতে কোনও অসুবিধা নেই র্যান্টি খুব উঁচু মানের স্ট্রাইকার। বল কন্ট্রোল ভাল। গোল করার জায়গায় খুব ভাল পৌঁছে যেতে পারে। গোল করার ক্ষমতা খুব ভাল। ডান পায়ের শুটিং ক্ষমতা বেশি। তবে সত্যিকারের শক্তিশালী ডিফেন্সের বিরুদ্ধে র্যান্টি খুব সুবিধা করতে পারে না। মনোরঞ্জন-পারমারদের সময়ে ও এতটা সফল হত বলে মনে হয় না।
র্যান্টির সঙ্গে তুলনা করতে পারি ব্যারেটোর। আমি র্যান্টিকে ব্যারেটোর খুব কাছেই রাখব। ব্যারেটো খুব ভাল স্কোরার বলছি না। তবে ওর মতো ভাল স্কিমার খুব কম দেখা যায়। নিজে অনেক গোল যেমন করেছে। |
সতীর্থদের দিয়ে তার থেকেও বেশি গোল করিয়েছে। আর ব্যারেটোর সবচেয়ে বড় গুণও আদর্শ টিম ম্যান। র্যান্টি সেটা নয়। শনিবারই তো ইপিএলে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের খেলাটা দেখছিলাম।
রুনি নিজেদের হাফে নেমে এসে ট্যাকল করে বল কেড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এ ধরনের খেলা ব্যারেটো বহু খেলেছে। র্যান্টি নয়। তার মানে বলছি না যে র্যান্টি খারাপ।
মজিদ-চিমাদের কথায় আসি। মজিদের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল পাস করার আর অন্যের পাস বোঝার ক্ষমতা। সেই সঙ্গে দুর্দান্ত বল কন্ট্রোল। খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করার নিজস্ব দক্ষতা ছিল। গোল করার পাশাপাশি করানোতেও যথেষ্ট দক্ষ ছিল। আমার এখনও মনে আছে ১৯৮৩-এর ফেডারেশন কাপ ফাইনাল। ও তখন মহমেডানে। আমি তো মোহনবাগানেই। আমরা প্রায় ওর কাছেই হেরে গিয়েছিলাম। আমাকে বেশ কয়েক বার বিট করেছিল। তবে কি ওর কিছুই খামতি ছিল না? ছিল। ওয়ার্কলোড নেওয়ার ব্যাপারটা ওর মধ্যে ছিল না। মজিদকে টিম-ম্যানও বলতে পারব না। |
চিমার বিরুদ্ধে এত ম্যাচ খেলেছি, যে ওর গুণগুলো খুব ভাল ভাবে জানি। চিমা মানেই পাওয়ার। অসম্ভব শক্তি ছিল ওর। তার সঙ্গে ড্রিবল। দু’পায়েই ও রকম জোরালো শট নিতে কাউকে খুব একটা দেখা যায় না। সামনে দু’জন ডিফেন্ডার এলে ইনসাইড ড্রিবল করে টপকে যাওয়াএ রকম ড্রিবলিং ক্ষমতা র্যান্টির নেই। শারীরিক ক্ষমতার দিক দিয়েও চিমা অনেক এগিয়ে।
এমেকার কথাও বলতে হয়। এমেকাও খুব জোরে শট নিতে পারত। দুর্দান্ত হেড করত। অল্প দিন ভারতে খেললেও ওর দক্ষতা অনেকের থেকে বেশিই ছিল।
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, গুরদেব সিংহ, পারমার, মহেশ লোটলিকরএই সব উঁচুমানের ডিফেন্ডারদের বিরুদ্ধে চিমা-মজিদদের খেলতে হয়েছে। এখন ভারতীয় ফুটবলে ওই মানের ডিফেন্ডার কোথায়? শনিবার র্যান্টির বিরুদ্ধে আনোয়ার ছিল। ওর তো জাতীয় দলে খেলারও অভিজ্ঞতা আছে। র্যান্টি যাদের বিরুদ্ধে এত গোল করেছে তারা কিন্তু মোটেই খুব ভাল মানের ডিফেন্ডার নয়। আমার মনে হয় না, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ও এক ম্যাচে তিনটে গোল করতে পারবে। |