পরনে কাঁচুলি-ঘাগরা থেকে কুঁচি দেওয়া
শাড়ি বদলাচ্ছে দেওয়ালি পুতুলও
ময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদল ঘটছে অনেক কিছুতেই। বদলাচ্ছে জীবনযাত্রা, বদলাচ্ছে উৎসবের নানা আঙ্গিকও। দীপাবলির অন্যতম অনুষঙ্গ দেওয়ালি পুতুলের চেহারাতেও এই বদলের ছাপ স্পষ্ট। আদ্যিকালের কাঁচুলি-ঘাগরা ছেড়ে এই পুতুল এখন ঘরের মেয়ের চেহারা নিয়েছে। আর তার হাত ধরেই মেদিনীপুরের কুমোরপাড়ার কারুশিল্প, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় নান্দনিক শিল্পকলায় পরিণত হয়েছে।
তবে পুতুলের উৎপত্তিস্থল হিসেবে উঠে আসে পুরুলিয়ার নাম। পুরুলিয়ার বলরামপুর ছাতাটাঁড়, কুক্কড়ু প্রভৃতি গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে দেওয়ালী পুতুল তৈরী হয়। বিহার থেকে এসে এই কুমোরেরা এই এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তারপরে সেখান থেকে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে দেওয়ালি পুতুলের চল ছড়িয়ে পড়ে। এমনটাই মনে করেন লোকশিল্পের অনেক গবেষক।
সেজে উঠছে পুতুল। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় দু’শ বছরেরও বেশি বয়স মেদিনীপুরের মির্জাবাজারের কুমোর পাড়ার। পাড়ার প্রায় একশো ঘর মাটি দিয়ে গেরস্থালির নানা জিনিসপত্র তৈরী করেন। এঁরাই এখন জোর কদমে দেওয়ালি পুতুল তৈরিতে ব্যস্ত। একদিকে চলছে সনাতনী পুতুল অন্যদিকে আধুনিক দেওয়ালি পুতুল। কাঁচা মাটির পুতুল তৈরী করে তা আগুনে পুড়িয়ে তারপরে রঙ করা হয়। জেলার বেশিরভাগ অঞ্চলেই দীপাবলীর দিনে বাড়ির সামনে মাটির ছোট বাড়ী তৈরী করার রীতি রয়েছে। পুতুল ছাড়াও প্রদীপ, মোমবাতি দিয়ে সাজানোও হয় এই বাড়ি। আগে দেওয়ালী পুতুলের চেহারাতে কিছুটা অবাঙালী শৈলীর ছাপ ছিল। অনেকের মতে বিহারি কুমোরদের হাতে তৈরি হত বলেই এই অবাঙালি ছাপ। আবার কারও মতে এই পুতুল নিতান্তই কুমোরপাড়ার নিজস্ব। সাধারণত কাঁচুলি-ঘাগরাই ছিল পোশাক। পুতুলের আদলটাও ছিল অন্যরকম। একটা উল্টানো গ্লাস বা খুরির উপরে কোমর থেকে উপরের অংশ বসিয়ে পুতুল তৈরী হতো। কখনো দু’হাতে দুটি প্রদীপ, কখনো দু’হাত মাথার উপরে তোলা তাতে সার দিয়ে প্রদীপ সাজানো থাকত। সাতটি প্রদীপ থাকতো বলে অনেক এলাকাতে এই পুতুল সাতবাহনিয়া নামেও পরিচিত। অনেক পুতুলে আবার কেরোসিনের লম্ফ লাগানোরও ব্যবস্থা থাকে।
এখন পুতুল তৈরিতে হাত লাগান বাড়ির মেয়ে-বউরাও। কাঁচা মাটি দিয়ে পুতুল গড়ে ভাঁটির আগুনে পোড়ানোর কাজ পুরুষেরা করলেও রঙ তুলি দিয়ে ‘ফিনিশিং টাচ’ দিচ্ছেন মেয়ে-বউরাই। পুরুষানুক্রমে পুতুল তৈরী করে আসছেন দীপেন কুমার দাস। তিনি জানান, ছয়ের দশকে গেরুয়া মাটি দিয়ে পুতুল রং হতো, চাল পুড়িয়ে, কেরোসিন তেল দিয়ে গুলে চোখ আঁকা আর চুল রং করা হতো। তবে এখন বাজারের রঙ দিয়েই কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই চেনা ছকের বাইরে নানান শৈলীর পুতুল তৈরী করছেন দীপেনবাবু। তাতে রাবণ, নারায়ণের দশ অবতার, অর্জুনের বিশ্বরূপ দর্শনের পাশাপাশি নানা আধুনিক শৈলীর দেওয়ালি পুতুলও রয়েছে। অরুণ পাল কবীর বেশ কয়েক বছর ধরেই পুতুলের চেহারাতে মানবীর রূপ এনেছেন। তার তৈরী পুতুল কলকাতায় পুূজো মণ্ডপের অলঙ্করণেও ব্যবহার হয়েছে। তাঁর পুতুলের টানা চোখ, কুঁচি দিয়ে পড়া শাড়ি আর খোলা চুল দেখে বাড়ির মেয়ে কথা মনে আসে। অরুণবাবুর মতে এই ধরনের পুতুলের চাহিদা বেশি। আর চাহিদা বেশি হলে দাম তো বেশি হবেই। একই সুর দক্ষিণ কুমোরপাড়ার গঙ্গাধর পালের কথাতেও। তিনি জানান, আগে হাতে পুতুল তৈরী করে হতো পোড়ানো হতো কিন্তু এখন ছাঁচে কাজ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই পুতুল বেশি নিঁখুত হচ্ছে। তবে বিক্রি দু’ধরনের পুতুলেরই রয়েছে।
বাজার ও সময়ের চাহিদা মেনে দেওয়ালি পুতুলের এই বিবর্তনে ঘুপচি ঘরের কুমোরপাড়ার শিল্প এখন ধীরে ধীরে পা বাড়াচ্ছে বাইরে। হাঁড়ি, ঘট, টব তৈরী করে দিন যাপন করা মানুষেরা দেওয়ালি পুতুলের রূপেই ফুটিয়ে তুলছেন তাঁদের ভাবনার নতুনত্ব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.