অলাভজনক কারখানা বন্ধ করতে চাইছেন মালিক, শ্রমিকরাই বাধা
‘তুমি থাকতেও পারছ না, তুমি যেতেও পারছ না।’ গানটি গেয়েছিলেন নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা বিভাস চক্রবর্তী, তাঁর ‘শোয়াইক গেল যুদ্ধে’ নাটকে। আজ তা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের ‘থিম সং।’
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে এবিজি হলদিয়া থেকে পাততাড়ি গোটাতে চাইছে, তাদের প্রস্থান বাধা পাচ্ছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরোধিতায়। একই কারণে বৈদ্যবাটির কন্ডোম প্রস্তুতকারক একটি সংস্থার কারখানা অচল ছয় বছর। কিন্তু মালিকপক্ষ তা তুলে দিতে পারছে না শ্রমিকদের বাধায়। শ্রমিকদের দাবি, সরকারকে কারখানা খোলার উদ্যোগ নিতে হবে। আর কারখানা না খোলার জন্য শ্রমিকদেরই দোষারোপ করছে সরকার।
২০০৬ সালে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়েছিল বৈদ্যবাটির পশুপতি সেহং লিমিটেড। কারখানা পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করতে চেয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রম দফতরে ‘ক্লোজার’-এর নোটিস পাঠিয়ে দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। ফলে কাজ হারাতে চলেছেন স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে একশোর কিছু বেশি শ্রমিক। সে কথা জানতে পেরে প্রতিবাদে সরব নকশালপন্থী ‘সংগ্রামী শ্রমিক সংগঠন’। গণ-কনভেনশন করে তারা দাবি করে, অবিলম্বে ‘ক্লোজার’-এর আবেদন নাকচ করতে হবে শ্রম দফতরকে। উৎপাদন পুনরায় চালু করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে, নিয়ম ভেঙে কারখানা বন্ধ করতে চান কারখানা কর্তৃপক্ষ, অভিযোগ শ্রমিকদের। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, আইন মোতাবেকই কারখানা বন্ধ করার ব্যবস্থা হচ্ছে।
কিন্তু রাজ্যের বন্ধ কারখানাগুলি খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে সরকার এ রাজ্যে ক্ষমতায় এল, তারা কেন এত দিনেও কারখানাটি খোলার ব্যবস্থা করতে পারল না? শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু শ্রমিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “সরকারে এসেই আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বসেছিলাম। কারখানা খোলার পরিস্থিতি ছিল।
কিন্তু শ্রমিক সংগঠনের অবস্থানেই তা সম্ভব হয়নি। এখন কর্তৃপক্ষ কী চাইছেন, তা কাগজপত্র দেখে বলা সম্ভব হবে। তবে সরকার চায় কারখানা ফের খুলুক।”
বৈদ্যবাটিতে দিল্লি রোডের ধারে পশুপতি সেহং লিমিটেড নামে কন্ডোম তৈরির কারখানাটি তৈরি হয় ১৯৯৪-৯৫ সালে। শ’খানেক স্থানীয় শ্রমিক চাকরি পেয়েছিলেন। আরও শ’দেড়েক শ্রমিক অস্থায়ী ভাবে কাজ করতেন। এ রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালেও যেত এই কারখানায় তৈরি কন্ডোম। কিন্তু, ২০০৬ সালে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের যুক্তি ছিল, শ্রমিক অসন্তোষ সামলানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া, ব্যবসাতেও মন্দা চলছে।
২০০৯ সালে শ্রমিকেরা গড়ে তোলেন ‘সংগ্রামী শ্রমিক সংগঠন।’ কারখানা চালু করার দাবিতে বহু আন্দোলন করেছেন শ্রমিকেরা।
মাঝে অনেকে স্বেচ্ছাবসর নেন। সংগঠনের দাবি, তাঁদের আন্দোলনের জেরেই বকেয়া বেতন দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
পাশাপাশি, ছ’বছরের বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও কর্তৃপক্ষ জমা দিয়েছেন। এমনকী, বন্ধ কারখানার ভাতাও চালু হয়েছে। তবে কারখানা খোলার জন্য গত চার বছরে বহু আলাপ-আলোচনার পরেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
সংগ্রামী শ্রমিক সংগঠনের দাবি, স্থায়ী শ্রমিকদের বদলে কম মজুরির অস্থায়ী শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতে চাইছিলেন কর্তৃপক্ষ। তাতে আপত্তি জানানোয় শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সংঘাত শুরু। কারখানা কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব ছিল, সব স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছাবসর নিতে হবে। পরে তাঁরাই অস্থায়ী হিসাবে কাজ করতে পারেন কারখানায়। এই প্রস্তাবে সায় দেননি শ্রমিকেরা। উল্টে তাঁদের দাবি, সব শ্রমিককে স্থায়ী করতে হবে।
শ্রমিক নেতা আভাস মুন্সি বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থায়ী শ্রমিকদের ঠিকা শ্রমিকে পরিণত করা চক্রান্ত করেছিলেন বেশি মুনাফার আশায়। আমরা কর্তৃপক্ষের এই অন্যায় আবদারে বাদ সেধেছি। মালিকপক্ষ সম্পূর্ণ অনৈতিক ভাবে লাভজনক একটি কারখানা বন্ধ করতে চাইছেন।” রাজ্য সরকারের জন্ম-নিয়ন্ত্রণ দফতরের বরাত ওই কারখানাকে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা।
কারখানা কতৃর্পক্ষের তরফে প্রকাশ খন্ডেলওয়াল বলেন, “শ্রমিক অসন্তোষ এবং অর্ডার না থাকার জেরে উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। এখনও পরিস্থিতি যা, কারখানা ফের চালু করার অবস্থায় নেই। শ্রমিকেরা যা দাবি করছেন তা সঠিক নয়। লাভ হলে কেউ কী কারখানা বন্ধ করে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.