সম্পাদকীয় ২...
প্রথম আলো
কিছু কিছু কাজ আছে, যাহারা জানান দিয়া আত্মসম্পাদন করে। আর, কিছু কিছু কাজ আছে, যাহারা সম্পাদিত হওয়ার অর্থই তাহাদের বিস্মৃত হইয়া থাকা। গৃহকর্ম এমনই গোত্রের কাজ। গৃহকর্ম সুসম্পাদিত হইলে ভাবিয়াও দেখার প্রয়োজন হয় না কাজগুলি কে করিল, কেমন ভাবে করিল, কখন করিল। কিন্তু কোনও কারণে তাহাতে ছেদ পড়িলে মাথায় বাজ ভাঙিয়া পড়ে, জীবন অচল হয়, কেহ বা কাহারা বিষম ফাঁকি দিতেছে বলিয়াই এই দুর্দৈব, এই ভয়ঙ্কর উপলব্ধি শরীর-মন জুড়িয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। বিষয়টি গুরুতর হইলেও লঘু স্বরে বলাই শ্রেয়, কেননা ইহার মধ্যে পুরুষতান্ত্রিকতার এমনই এক দুষ্ট ফাঁদ আছে, যাহা পারাইয়া আলাপ করিতে চাহিলে লঘুপদে বিচরণই শ্রেয়। আদি কাল হইতে পুরুষতন্ত্রের সুপ্রচলিত প্রকরণ: নারীর কাজকে ‘কাজ’ না বলিয়া ‘দায়’রূপে বর্ণনা। রন্ধনাদি না হইলে জীবননির্বাহ হইবে কী করিয়া? সন্তানপালন না করিলে পরিবারের দেখভাল হইবে কী রূপে? ইহারা ‘স্বতঃসিদ্ধ’, তাই প্রতি-যুক্তি দিবার অবকাশ থাকে না যে, ‘চলে না’ যদি, তবে পুরুষের চলিতেছে কী করিয়া? যুক্তি নিয়ন্ত্রণকে বাধা দেয়, স্বতঃসিদ্ধ নিয়ন্ত্রণকে কায়েম করে। যুক্তি-প্রতিযুক্তির অঙ্গন হইতে যে এই সব কথা বাদ পড়িয়াছে, তাহা অপরিকল্পিত নহে।
কেন্দ্রীয় পরিবার ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী কৃষ্ণ তিরথ সম্প্রতি একটি জাতীয় সমীক্ষার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন, যাহাতে গ্রামীণ ও নাগরিক, উভয় পরিসরেই ঘরের ঘরনিরা ঠিক কত সময় কোন কাজে ব্যয় করেন, কতখানি কায়িক শ্রম করেন, তাহার বিস্তারিত তথ্য সংগৃহীত হইবে। ইহা হইতে জাতীয় অর্থনীতিতে মহিলাদের শ্রমের অবদানের একটি ধারণা লাভ করা যাইবে, যে ধারণার সামাজিক মূল্য অপরিসীম। ব্যক্তিগত স্তরেও এই ধারণা মূল্যবান, কেননা এই তথ্য না থাকিলে পরিবার-ভিত্তিক আয়ের সঙ্গতি বিচার করা সম্ভব নয়। মহিলাদের জন্য যে সকল নূতন ভাবনা সূচিত হইতেছে, যেমন ঘরনির জন্য মাসিক আয়ের ব্যবস্থা, তাহার জন্যও এই তথ্য আবশ্যক। অর্ধেক সমাজকে ক্ষমতা ও অধিকার দিতে সমাজ যদি প্রস্তুত থাকে, তবে এই পথের বিকল্প নাই।
তবে উদ্দেশ্য পরের কথা। প্রাথমিক এবং সর্বাপেক্ষা গুরুতর কথাটি হইল, সমাজের যে প্রধান কাজ এত দিন সম্পূর্ণত অজ্ঞান এবং অনবধানের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, এই প্রথম তাহার উপর আলো ফেলিবার প্রস্তুতি হইতেছে। বৃহত্তর সমাজ ও অর্থনীতির প্রশ্নে এই কাজের গুরুত্ব তো অপরিসীম বটেই। মৌলিক মানবিকতার প্রশ্নেও ভারত এক পা অগ্রসর হইবে, যদি এই জাতীয় সমীক্ষার কাজটি যথার্থ ভাবে সম্পাদিত করা যায়। তবে কি না, পুরুষতান্ত্রিকতার যে স্পর্ধা ও অবজ্ঞা এই কাজকে অ-কাজ নাম দিয়াছে, তাহার জন্যই আজ ইহাকে কাজ হিসাবে গণ্য করিয়া সমীক্ষা চালানো অত্যন্ত দুরূহ, প্রায় অসম্ভব ঠেকিবে। গণতান্ত্রিক অধিকারের যুক্তিতে সেই বাধা সবলে শক্ত হাতে উড়াইয়া দিতে পারিলে তবেই একমাত্র সাফল্যের আশা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.