এখন কলকাতায় সরকারি হলে কখন কোন নাটক দেখানো হবে তার বেশির ভাগটা কার্যত তিনিই ঠিক করছেন’, অপির্তা ঘোষ সম্পর্কে এই মন্তব্যটি (‘কোন হলে কী নাটক...’, ৫-১১) ঠিক নয়। একটি কমিটি মধুসূদন মঞ্চ, গিরিশ মঞ্চ, শিশির মঞ্চ এবং মিনার্ভা থিয়েটারে একসঙ্গে তিন মাসের জন্য অভিনয়ের দিন বণ্টনের সুপারিশ করে থাকেন নাট্যদলগুলির আবেদনের ভিত্তিতে। কমিটির সদস্য মনোজ মিত্র (পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সভাপতি), রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, মণীশ মিত্র, সোহিনী সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার এবং হলগুলির প্রশাসনিক আধিকারিকরা। চেয়ারপার্সন অর্পিতা ঘোষ। সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার মিটিংয়ে বসে যৌথ ভাবে কমিটিই নেয়, কেউ অনুপস্থিত থাকলে তার দায়িত্ব না কমিটির, না চেয়ারপার্সনের। সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও অঙ্ক কাজ করে না। প্রতিবেদনে ‘ছড়ি ঘোরাচ্ছেন অর্পিতাই’ কিংবা প্রতিবেদনের শিরোনামে ‘কোন হলে কী নাটক, ঠিক করেন অর্পিতাই’ মন্তব্যগুলি অপমানজনক এই ধরনের উক্তি অর্পিতা এবং কমিটির অপর সদস্যদের পক্ষে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরও শিশু-কিশোর আকাদেমির চেয়ারপার্সন বদলের প্রসঙ্গটি তুলে অর্পিতা ঘোষকে আক্রমণ করা হয়েছে, একটি পত্রিকায় দেখলাম অর্পিতা সেই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যও রেখেছেন। কিন্তু বিস্মিত হলাম যে, কেউই বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করলেন না।
আগের আমলে গঠিত আকাদেমিগুলির গঠনতন্ত্র বিচার করলে দেখা যাবে যে, এগুলিতে গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ছিটেফোঁটাও ছিল না। সরকারই এগুলির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা যখন খুশি যাকে ইচ্ছে সদস্য হিসেবে রাখতে পারেন, সরাতেও পারেন। তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনাধীন আকাদেমিগুলির গঠন, স্থায়িত্ব, সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতি সব কিছুই গণতান্ত্রিক রীতিসম্মত। রাজ্যের স্বশাসিত আকাদেমির গঠনতন্ত্রও একই দোষে দুষ্ট।
সরকারও এই সুযোগটুকু নিয়ে তাঁদের পছন্দের মানুষকে বসাতে পারেন, আবার অপছন্দের মানুষকে সরাতেও পারেন। নিয়োগ বা মনোনয়ন সে ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক’ হয়ে পড়ে। আগের সরকারের কর্তাদের সঙ্গে এই নিয়ে আমার প্রবল মতবিরোধ ছিল, আমি নতুন মডেলে গঠনতন্ত্র তৈরি করার দাবি তুলেছিলাম। দুঃখের হলেও স্বীকার করতে হচ্ছে যে, যত বড় মানুষই হোন না কেন, সরকার বদলের পর তাঁর অপসারণকে বেআইনি বা রীতিবিরুদ্ধ বলা যাবে না, কারণ আমরা সবাই এই গঠনতন্ত্র মেনে নিয়েছি। লক্ষণীয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার পর চারিদিকে রব উঠে গেল, নৈতিকতার খাতিরে নাকি পূর্বতন রেলমন্ত্রীর গঠিত কমিটি থেকে সদস্যদের পদত্যাগ করা উচিত, কিন্তু কোন আইনে বা কোন রীতিপ্রথায় (কনভেনশন-এ), সেটা কেউ বলছেন না। তাঁদের এই দাবি যুক্তিযুক্ত মনে হলে শিশু-কিশোর আকাদেমির অদল-বদল নিয়ে কথা বলাটা অযৌক্তিক হয়ে পড়ে।
বিভাস চক্রবর্তী। কলকাতা-৯৫ প্রতিবেদকের জবাব: বিভাস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কলকাতার বেশির ভাগ হলে কখন কোন নাটক হবে তা অর্পিতা ঘোষ একা ঠিক করেন না, একটি কমিটি এ বিষয়ে যৌথ ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রাজ্যের সংস্কৃতিজগতে প্রচলিত ধারণা, বর্তমান সরকারের আমলে এই সিদ্ধান্তগুলির পিছনে অর্পিতার ভূমিকাই প্রধান। প্রসঙ্গত, বিভাসবাবু এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, কমিটিতে প্রধানত অল্পবয়স্করাই বেশির ভাগ দায়িত্ব সামলান।
|
ভারতের কালিদাস, জগতের তুমি’ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শেক্সপিয়রকে বরণ করেছিলেন এই ভাষায়। শেক্সপিয়রের সাহিত্য, শেক্সপিয়রের নাটক, শেক্সপিয়রের চর্চা বাংলায় চলবেই। গৌতম চক্রবর্তীর লেখা ‘পরিবর্তনের শেক্সপিয়ার’ (৩০-৯) শীর্ষক নিবন্ধটি সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিল। এ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই বাংলার শেক্সপিয়র অনুরাগীদের অবগতির জন্য। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম বাংলায় শেক্সপিয়রের পূর্ণাঙ্গ জীবনী বই লিখেছিলেন ঋষি দাশ। ‘শেক্সপিয়র’ শীর্ষক তাঁর ৩৮৪ পাতার বইখানি প্রকাশ করেছিলেন ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানির প্রকাশক প্রহ্লাদ প্রামাণিক। ঋষিবাবুর লেখা বইটি সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হত। বইটির তিনটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৫০, ১৯৬০ ও ১৯৮০ সালে। বাংলায় শেক্সপিয়র চর্চার জন্য ১৯৫২ সালে হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে গড়ে উঠেছিল ‘শেক্সপিয়র সোসাইটি’। এই পরিষদের সভ্য ছিলেন লীলা মজুমদার, উৎপল দত্ত, নীরেন্দ্রনাথ রায়, সুবোধ সেনগুপ্ত, ঋষি দাশ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। বাংলায় শেক্সপিয়রের প্রথম জীবনীকার ঋষি দাশ আজও জীবিত আছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানার অন্তর্গত পুয়াদা গ্রামে চির-উপেক্ষিত নবতিপর বৃদ্ধ লেখক এখন মাটির দাওয়ায় বসে ঘাসেদের ফুল ফোটানো দেখেন।
মৃণালকান্তি মাইতি। মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, ডিভিসি, বাঁকুড়া
|
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম পাঁচশো দিনের কাজের সমালোচনা করে অমিতাভ গুপ্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, মমতা ‘চূড়ান্ত সফল: উন্নয়নে নয়, রাজনীতিতে’। (‘২৭-৯) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম পাঁচশো দিনের কাজের হয়তো অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি, ব্যর্থতা ছিল। থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি ‘পশ্চিমবঙ্গকে অতলে নামিয়েছেন’, এই নেতিবাচক সিদ্ধান্ত মানতে কষ্ট হয়। যে দার্জিলিঙে পর্যটন ব্যবসা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছিল, সেখানে দার্জিলিং আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। জঙ্গলমহলে খুনের রাজনীতি প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে, সেই সঙ্গে সেখানে উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। এ বিষয়ে ‘তিন বছর পরে লালগড়ের পুজোয় রাবণ পোড়া’ শীর্ষক সংবাদে লেখা হয়েছে, ‘হিংসা থেমেছে এক বছরেরও বেশি। মাথাচাড়া দিতে পারেনি অশান্তি ডেকে আনা শক্তি...’ (৫-১০)। এ সব কথা কি মিথ্যা? ৩৪ বছরের বাম সরকার মাসপয়লায় কোনও শিক্ষকের বেতন দিতে পারেনি কোনও দিন। যেটা পেরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় বন্ধ হয়েছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, শস্য বিমা, কিষাণ মান্ডির চেষ্টা করা হচ্ছে এ সব উন্নয়ন নয়? সব রাজনীতি! মাত্র পাঁচশো দিনের একটা সরকারের কাজের মূল্যায়ন করে লেখক রায় দিয়ে দিলেন: মমতা উন্নয়নে নয়, রাজনীতিতে সফল!
রতন চক্রবর্তী। শিক্ষক, উত্তর হাবড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা |