সম্পাদকীয় ১...
রূপকথার জমি
মাদের সহিত মুখ্যমন্ত্রীর তো প্রায় দেখাই হয় না। এই উপলক্ষে দেখা হইয়া গেল।’ মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মিলনীর নিমন্ত্রণ রক্ষা করিয়া এক শিল্পপতি কথাগুলি বলিলেন। বিজয়া সম্মিলনীর এই দেখাসাক্ষাতের পরিসর হওয়ারই কথা ছিল। পরিসরটি জরুরি। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সহিত শিল্পপতিদের দেখা হওয়া এই ক্ষীণপ্রাণ রাজ্যের স্বাস্থ্যের পক্ষে সুসংবাদ। সম্মিলনীর পূর্বাহ্ণে মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করিলেন, তাহাও সুলক্ষণ। নিশ্চয়ই রাজ্যের শিল্প-ভবিষ্যৎ বিষয়েই আলোচনা হইয়াছে সম্মিলনীতে কোন কোন প্রশ্ন করা চলিবে না, তাহা বলিয়া দেওয়ার জন্য বৈঠক ডাকা হয় নাই। হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিডস’-এর আয়োজন করা হইতেছে। পশ্চিমবঙ্গ মানেই যে নির্বিকল্প শিল্পশ্মশান নহে, এই কথাটি শিল্পমহলের নিকট বিশ্বাসজনক ভাবে বুঝাইয়া বলিবার চেষ্টা রাজ্য সরকার করিবে বলিয়াই আশা। অভিমুখটি ইতিবাচক। দুর্জনে হয়তো বলিবে, অকর্তব্য লইয়া মুখ্যমন্ত্রীর উৎসাহের তীব্র এবং লাগাতার সমালোচনা হওয়াতেই তিনি শিল্পের দিকে তাকাইয়াছেন। যদি তাহাই হয়, মন্দ কী? সমালোচনায় ক্ষুব্ধ না হইয়া যদি কেহ নিজের ভুল শুধরাইয়া লহেন, তাহা ইতিবাচক মানসিকতারই প্রকাশ। সমালোচকরা আরও একটি প্রসঙ্গ টানিয়া আনিতে পারেন। দিনকয়েক পূর্বে কলিকাতায় এক বণিকসভার সম্মেলন ছিল। সেই সম্মেলনে রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। প্রশ্ন উঠিতেই পারে, যে রাজ্য শিল্প টানিতে আগ্রহী, তাহার প্রশাসনের এই উদাসীনতা শোভা পায় কি? হয়তো তখনও মুখ্যমন্ত্রী এতখানি আগ্রহী হন নাই। কিন্তু যাক সে কথা।
বিজয়া সম্মেলন সুমিষ্ট স্বাদেই শেষ হইয়াছে। মুশকিল হইল, সম্মেলনে শুভেচ্ছা বিনিময় হইতে পারে, কিন্তু শিল্প হয় না। শিল্পের কিছু অপরিহার্য চাহিদা আছে, যেগুলি না মিটিলে হাজার সদিচ্ছাতেও শিল্প হইবে না। তাহার মধ্যে প্রধানতম জমি। শিল্পপতিদের এই উদ্বেগের কথা মুখ্যমন্ত্রী জানেন বলিয়াই বোধ হয়। তিনি বলিয়াছেন, তাঁহার ল্যান্ড ব্যাঙ্ক হইতেই জমির ব্যবস্থা হইবে। মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের এই রূপকথাটি, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, শিল্পমহল তেমন বিশ্বাস করে না। তাহার কারণ, বাস্তবের জমিতে রূপকথা দাঁড়ায় না। সরকারের হাতে যে জমি আছে, তাহা শিল্পের অনুপযোগী। শিল্পের জন্য একলপ্তে জমি প্রয়োজন, এবং এমন অঞ্চলে প্রয়োজন যেখানে শিল্প সম্ভব। শিল্প গড়িতে হইলে কেন সিঙ্গুরেই গড়িতে হইবে, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নহে, তাহা মুখ্যমন্ত্রীকে বলিয়া দেওয়ার প্রয়োজন নাই, শিল্পপতিদেরও নহে। ল্যান্ড ব্যাঙ্কের গল্পে এই সমস্যার সমাধান হইবে না। লক্ষণীয়, শিল্পপতিদের আপ্যায়ন করিবার দিনেই মুখ্যমন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রী জানাইয়া দিয়াছেন, সরকার কোনও অবস্থাতেই জমি অধিগ্রহণ করিবে না। এই অনড় অবস্থানে শিল্পের ঠাঁই কোথায় হইবে, বিজয়ার মিষ্টিমুখ সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই। পারিবার কথাও ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী একটি ভিন্ন সমাধানসূত্র দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, যে কোনও সমস্যাতেই শিল্পপতিরা সরাসরি তাঁহার সঙ্গে যোগাযোগ করিতে পারেন। তিনি ফোন নম্বর জানাইয়া দিয়াছেন, এখন সমস্যায় পড়িলে শুধু ডায়াল করিবার অপেক্ষা। পশ্চিমবঙ্গে যে তিনিই সব, এই কথাটি মহাকরণের আসবাবপত্রগুলিও জানে। মুখ্যমন্ত্রী সেই জানাতে নিজের শিলমোহর লাগাইয়া দিলেন। তবে এই অবস্থাটি প্রশাসক হিসাবে দক্ষতার পরিচায়ক, এমন দাবি করা চলে না। যে মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের হাতেই সব করিতে হয়, তাঁহার অধীনে মন্ত্রী, সচিব, আমলা, দফতর কী করিতে আছে? শিল্প সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার সমাধান সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতেই হওয়ার কথা। পশ্চিমবঙ্গে হয় না। তাহাতে দফতরগুলির দায় যতখানি, মুখ্যমন্ত্রীর দায় কিছু কম নহে। এই রাজ্যে সবেতেই তিনি। ফলে, যে কাজগুলি তাঁহারই করিবার কথা, সেগুলি অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলিত থাকিয়া যায়। বিজয়া সম্মিলনীতে যে শিল্পপতি আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সহিত দেখাই হয় না তাঁহার আক্ষেপের কারণ এইখানেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজের কাজ করুন। অন্যদেরও কাজ করিতে দিন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.