কালীপুজোর দু’দিন আগেই হুড়মুড়িয়ে নেমে এল শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। একই সঙ্গে সে গড়ে ফেলল এক নতুন রেকর্ড। আবহাওয়া দফতরের হিসেবে, গত দশ বছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এত নীচে কখনও নামেনি। অর্থাৎ এ বার পাকাপাকি ভাবে ইনিংস শুরু করার আগেই বড় রানের ইঙ্গিত দিল শীত।
আলিপুর হাওয়া অফিসের হিসেবে, এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। এর আগে গত বছর এ দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় এক ডিগ্রি কম ছিল। তা ছাড়া, গত এক দশকে এই সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কখনও স্বাভাবিকের নীচে নামেনি।
লক্ষ্মীপুজোর পর দিন কয়েক কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া পেলেও তামিলনাড়ুর মামল্লপুরমে আছড়া পড়া ঘূর্ণিঝড় ‘নীলম’-এর দাপটে তা উধাও হয়েছিল। ওই ঝড়ের দাপটে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে অবস্থান করায়, শীতের বদলে বৃষ্টি সইতে হয় শহরবাসীকে। আবহবিদেরা বলছেন, নীলম ও তার প্রভাবে তৈরি হওয়া অক্ষরেখা, এর জোড়া ফলাতেই বেড়ে গিয়েছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, গত সোমবারেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩.৬ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি বেশি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সে রকমই
চলছিল। গতিপ্রকৃতি বদলায় শুক্রবার থেকে। আলিপুরের এক আবহবিদ জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে শুক্রবার প্রথম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নামে। শনিবার তা এক ঝটকায় স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ ডিগ্রি কমে যায়। এ দিনও একই অবস্থা রয়েছে।
কেন কমছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা? |
আবহবিদেরা বলছেন, পাকিস্তান থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে উত্তুরে হাওয়া ঢোকা শুরু হয়েছে। তার জেরে তাপমাত্রা কমেছে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। লখনউয়ে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিল্লিতে ১৩.৯ ডিগ্রি। তাপমাত্রা কমেছে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও। রাঁচিতে এ দিন তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে যা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভুবনেশ্বরের তাপমাত্রা ছিল ১৬.৪ ডিগ্রি।
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “তাপমাত্রা আপাতত এ রকমই থাকবে। কালীপুজোয় শীতের আমেজ মিলবে।” বাতাসে আর্দ্রতা আরও কিছুটা কমবে বলে আবহবিদেরা জানিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে কালীপুজোর রাতে হিম পড়তে দেখা যায়নি। কিন্তু এ বার ইতিমধ্যেই গভীর রাত বা ভোরের দিকে হিম পড়ছে। জমছে কুয়াশাও।
পাকাপাকি ভাবে শীত পড়তে আর কত দিন?
গোকুলবাবু জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই পাকাপাকি ভাবে শীত পড়ছে না। আস্তে আস্তে তাপমাত্রা কমবে। তবে উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স এলাকায় শীতের সূচক অনুকূল রয়েছে। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ির কিছু এলাকা-সহ উত্তরবঙ্গের অনেক জায়গাতেই শীতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে শীত আসতে এখনও কিছু দিন লাগবে।
শীত পাকাপাকি ভাবে না পড়লেও এ দিন থেকেই হিমেল হাওয়ার সঙ্গে উৎসবের মেজাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। রবিবার ছিল ধনতেরস বা ধনত্রয়োদশী। সেই উৎসবে সামিল হতে বাঙালি-অবাঙালি সব সম্প্রদায়ের মানুষই বাজারমুখো হয়েছেন। বৌবাজার বা বড়বাজারের মতো যে এলাকাগুলিতে গয়নার দোকান রয়েছে, সেখানে রীতিমতো কেনাকাটার ভিড় জমেছে। কালীপুজো বা লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতেও রাস্তায় বেরিয়েছেন মানুষ। শনিবার থেকেই কলকাতার বহু কালীপুজো কমিটি তাদের পুজোর আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। আলোর মালায় সেজে উঠেছে দোকানপাটও। |