পরিকল্পনা ছাড়াই নয়া যন্ত্র বসিয়ে ঝঞ্ঝাটে বিমানবন্দর
রচ বাঁচানোর জন্য বসানো হল বহুমূল্য যন্ত্রটি। কিন্তু তাতে লাভের বদলে উল্টে লোকসানের আশঙ্কা দেখছেন বিমানসংস্থাগুলির কর্তারা। অভিযোগ উঠছে, সাতপাঁচ না ভেবেই কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যন্ত্রটি বসিয়ে ফেলেছেন।
ঘন কুয়াশায় নির্বিঘ্নে বিমান চলাচলের জন্য সম্প্রতি কলকাতা বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়েতে বসানো হয়েছে ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস)। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সাধারণ ভাবে ২৪০০ মিটার উপর থেকে পাইলট রানওয়ে পরিষ্কার দেখতে পেলে তবেই বিমান নামাতে পারেন।
কিন্তু, আইএলএস বসানো থাকলে সেই দূরত্ব কমে দাঁড়ায় ৮০০ মিটার। ফলে, প্রধানত কুয়াশার সময়ে এই যন্ত্র রাখা হলে বিমান ওঠানামায় সুবিধা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে ঘুরতে না হওয়ায় বিমানের জ্বালানি খরচও কমে।
কলকাতা বিমানবন্দরে প্রথম রানওয়ের দু’দিকে ইতিমধ্যেই আইএলএস বসেছে। কিন্তু, প্রথম রানওয়ে বন্ধ রেখে কখনও সারাইয়ের কাজ, কখনও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। ওই সময় দ্বিতীয় রানওয়ে থেকে বিমান ওঠানামা করে। কিন্তু সেখানে এত দিন ওই যন্ত্র না থাকায় গত শীতে দ্বিতীয় রানওয়েতে নামতে গিয়ে কুয়াশার জন্য অনেক বিমানকেই আকাশে চক্কর কাটতে হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মুখ ঘুরিয়ে অন্য বিমানবন্দরেও চলে যেতে হয়েছে।
এই সমস্যার সমাধানের জন্যই দ্বিতীয় রানওয়েতেও আইএলএস বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। রানওয়ের এক প্রান্তে সেই যন্ত্র বসেছেও। বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা জানিয়েছেন, নভেম্বরের শেষেই চালু হয়ে যাবে সেই আইএলএস।
কিন্তু তার আগেই দেখা দিয়েছে ঝামেলা। সেটা কী?
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এই সমস্যা হল দ্বিতীয় রানওয়ের সমান্তরাল ট্যাক্সি-ওয়ে (যেটিকে চিহ্নিত করা হয় ‘আলফা’ নামে) নিয়ে। আইএলএস বসলে বিমান নিয়ে এ বার রানওয়ের অনেক কাছে নেমে আসবেন পাইলট। কিন্তু ওই সময়ে রানওয়ের প্রায় গা-ঘেঁষে থাকা আলফায় বিমান থাকলে তাঁর মনে হতে পারে, রানওয়েতেই কোনও বিমান রয়েছে। ফলে বিমান পরিবহণের নির্দেশিকা অনুযায়ী, এমন বিভ্রান্তিকর অবস্থায় আলফা ব্যবহারই করা যাবে না। ফলে মাথায় হাত পড়েছে বিমানসংস্থার কর্তা-ব্যক্তিদের।
কেন?
বিমানসংস্থার কর্তারা বলেছেন, আলফা ব্যবহার করা না গেলে সেখান থেকে অনেকটা দূরে ‘ফক্সটর্ট’ ট্যাক্সি-ওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে বিমানকে। সেখান থেকে দ্বিতীয় রানওয়েতে পৌঁছতে অনেক বেশি সময় লাগবে। তখন প্রতি ঘণ্টায় রানওয়েটি থেকে ১২ থেকে ১৪টি বিমান ওঠানামা করতে পারবে, যেখানে এখন ঘণ্টায় ওঠানামা করে প্রায় ২৫টি বিমান।
কলকাতা বিমানবন্দরেরই এক কর্তার কথায়, “অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করার জন্য বেশি জ্বালানি পুড়বে। দেরি হবে গন্তব্যে পৌঁছতে। অন্য বিমানবন্দর থেকে সংযোগকারী বিমান ধরতে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন যাত্রীরা। আখেরে আর্থিক ক্ষতি হবে বিমানসংস্থাগুলির।” আবার আইএলএস না বসলে বিমানকে যদি অন্যত্র চলে যেতে বা আকাশে অপেক্ষা করতে হয়, তা হলেও ক্ষতি হবে বিমানসংস্থার।
বিমানসংস্থার কর্তাদের অভিযোগ, পরিকল্পনা না করে ওই যন্ত্রটি বসানোর জন্যই এই সমস্যা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, দ্বিতীয় রানওয়েতে আইএলএস বসানোর আগে ফক্সটর্ট ট্যাক্সি-ওয়েটিকে যদি বাড়িয়ে ওই রানওয়ের উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে মিশিয়ে দেওয়া হত, তা হলে কোনও সমস্যাই হত না। এখন যা বন্দোবস্ত, তাতে ফক্সটর্ট থেকে কোনও বিমানকে আলফা ট্যাক্সি-ওয়ে হয়ে দ্বিতীয় রানওয়ের মাঝামাঝি জায়গায় উঠতে হয়। তার পর ওড়ার জন্য যেতে হয় রানওয়ের শেষ প্রান্তে। তাতে অনেকটা সময় লাগে।
মাটিতে-আকাশে অপেক্ষারত বিমানের ভিড়ও বাড়ে। কিন্তু ফক্সটর্টকেই যদি একেবারে দ্বিতীয় রানওয়ের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া যেত, তা হলে বিমানগুলি ওড়ার আগে বিনা বাধায় একেবারে রানওয়ের ওই প্রান্তে গিয়েই উঠত। ফলে এক দিকে রানওয়ে বেশিক্ষণ খালি থাকায় বিমান ওঠানামার হার বাড়ত। অন্য দিকে, আইএলএস ব্যবহার নিয়েও বিভ্রান্তিরও কোনও অবকাশ থাকত না। কিন্তু বিমানসংস্থার কর্তারা বলছেন, যন্ত্রটি বসানোর আগে এ সব পরিকল্পনাই করেননি কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা অবশ্য বলছেন, “ডিজিসিএ-এর অনুমতিক্রমে ওই সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
দ্বিতীয় রানওয়ে চালু থাকার সময়ে পাইলটদের সতর্কবার্তা পাঠিয়ে আলফা ব্যবহারের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। ফক্সটর্ট ট্যাক্সি-ওয়ে সম্প্রসারণের প্রস্তাবিত নকশাও অনুমোদনের জন্য দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। যদিও অনুমোদন এলে তা কার্যকর করতে কেটে যাবে কয়েক বছর। এই অবস্থায় যদি ডিজিসিএ আলফা ব্যবহারের অনুমতি না দেয়, তা হলে ক্ষতির মুখে পড়বে বিমানসংস্থাগুলি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.