এক বছর আগে। কালীপুজোর চাঁদা তোলাকে ঘিরে গণ্ডগোল। আর তাতেই বেশ কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতী হামলা চালিয়েছিল সিউড়ির একটি সরকারি আবাসনে। অথচ ওই আবাসের অনতি দূরেই ছিল সিউড়ি পুলিশ লাইন। তাতেও অপরাধ রুখতে পুলিশ কার্যত ঢাহা ফেল করেছিল।
পুলিশ থাকে, সান্ত্রী থাকে। তবু প্রতি দীপাবলী ও কালীপুজোকে ঘিরেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় জোর করে চাঁদা আদায়, জুয়ার ঠেক, ইভটিজিং বা পাড়া মাথায় তোলা বেআইনি শব্দবাজির দাপট রুখতে বহু ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয় পুলিশ-প্রশাসন।
এ বার কী হবে?
পুলিশের দাবি, শব্দবাজি ও জুয়ায় লাগাম টেনে সুষ্ঠু ভাবে কালীপুজো সম্পন্ন করতে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বীরভূম থেকে ১০০০ লিটার বেআইনি মদ, ৬ কুইন্টাল নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৪৬টি বোমাও। দুর্গাপুজোর পর থেকে এখনও পর্যন্ত গোলমাল পাকাতে পারে এই আশঙ্কায় জেলা জুড়ে ধৃতের সংখ্যা ৪৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া জেলার নতুন পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মার দাবি, ‘‘জেলার যে সমস্ত জায়গায় বড় কালীপুজো হয়, সেখানে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কালীপুজো ও দীপাবলী উপলক্ষে প্রত্যেকটি থানায় পুলিশি ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে। নিষিদ্ধ শব্দবাজি রুখতে পুলিশি অভিযানও চালু রয়েছে।”
মহিলাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বাড়িতে নজরদারি করবে পুলিশ। কোথাও কোনও গণ্ডগোলের খবর পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক থানাকেই। যে সমস্ত অঞ্চলে দ্রষ্টব্য কালীপুজো রয়েছ, সেখানে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। থাকবে আলাদা পুলিশ ক্যাম্প। তারাপীঠ ও মুরারই থানার জাজিগ্রামে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুধু রামপুরহাট মহকুমারই পাঁচটি থানায় কোনওটিতে দশ জন করে, কোনওটিতে বারো জন করে বাড়তি পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া রামপুরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি মাড়গ্রাম থানার রামদামপুর গ্রাম থেকে সাড়ে সাতশো জাল বিদেশি মদ উদ্ধার হয়েছে। আবার জেলা আবগারি দফতর ও পুলিশ একযোগে অভিযান চালিয়ে রামপুরহাট থানার বাহ্মণীগ্রাম থেকে ১০০০ লিটার বেআইনি মদ উদ্ধার করেছে। উৎসব উপলক্ষে লাভপুর, ময়ূরেশ্বর ও নানুর থানা এলাকাতেও ভ্যানের মাধ্যমে নজরদারি চালাবে পুলিশ। সেখানে ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলিকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। কোনও সমস্যা দেখা দিলে তাঁরাই থানায় ফোন করে জানাবেন। নিষিদ্ধ শব্দবাজি না রাখার জন্য সতর্ক করা হয়েছে দোকানগুলিকেও।
অন্য দিকে, আসন্ন উৎসবে বিশৃঙ্খলা এড়াতে শনিবারই বোলপুরের এসডিপিও প্রশান্ত চৌধুরী বোলপুর থানার আইসি, মহকুমাশাসক, বোলপুর পুরসভার পুরপ্রধান ও এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন। প্রশাম্তবাবু বলেন, “নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটকানো ও শব্দদূষণ রোধ করবার জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিং প্রতিরোধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” ইতিমধ্যেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বোলপুর এলাকা থেকে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোলপুর থানার আইসি কমল বৈরাগ্য ও শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পার্থসারথি মণ্ডল। এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে বলেও পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
বোলপুরের মহকুমাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “আলোর উৎসবে যাতে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এ দিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে যে ১৬ নভেম্বর পযর্ন্ত কালীপুজোর বিসর্জনের শেষ দিন ধার্য করা হয়েছে। বাসিন্দারা বলছেন, “এ বারের পরীক্ষায় পুলিশ ফেল করে না পাশ, বলবেন মা কালী!” |