জেলা সদরের একটি নার্সিংহোম। সেখানে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে চিকিৎসক-কর্মীদের উপরে তৃণমূলের এক ‘বহিষ্কৃত’ নেতা চড়াও হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বীরভূমের সিউড়ির ওই নার্সিংহোমের সিসিটিভি ফুটেজেও ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত এখনও পলাতক।”
এই ঘটনায় একই সঙ্গে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে বীরভূমে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বও। অভিযুক্ত ‘তৃণমূল নেতা’ আশিস দে সম্পর্কে সরাসরিই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। তিনি বলেন, “আশিসবাবুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলের নাম ভাঙিয়ে নানা রকম অপকর্ম করেন।” তৃণমূলেরই একটি অংশ এই ব্যাপারে দায়ী করতে চান জেলা সভাপতিকে অনুব্রত মণ্ডলকেই। সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপন ঘোষ সরাসরি অভিযোগ করেছেন, “আশিসবাবু জেলা সভাপতির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়
|
অভিযুক্ত আশিস দে |
আশিসবাবুকে বহিষ্কার করলেও প্রায় সর্বত্রই তিনি অনুব্রতবাবুর সঙ্গেই ঘোরেন।” অনুব্রতবাবু সেই ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকারও করেছেন। তবে সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, “কারও সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই পারে। তা বলে তিনি যদি কোনও অন্যায় করে থাকেন, তার দায় তো আমার নয়!” শতাব্দীর অবশ্য বক্তব্য, “দলের যাঁরা আশিসবাবুকে মদত দিচ্ছেন, তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ, দলের স্বার্থেই ওই ব্যক্তির সংসর্গ পরিহার করুন।”
সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল?
স্থানীয় সূত্রের খবর, সিউড়ি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই নার্সিংহোম মাত্র তিন মাস হল চালু হয়েছে। যে জায়গার উপর ওই নার্সিংহোম তৈরি, তা লিজ দিয়েছিল গত বারের কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সিউড়ি পুরবোর্ড। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই লিজ পেতে এবং পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ব্যাপারে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করেছিলেন আশিসবাবুই। তা হলে এই দিন সেখানেই কেন তিনি চড়াও হলেন? নার্সিংহোমটির মালিক জয়প্রকাশ খৈতানের অভিযোগ, “শুক্রবার সিউড়ি সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক এক জন সঙ্কটজনক রোগীকে নিয়ে এসেছিলেন। তাই আমরা বিশেষ অনুমতি দিয়ে তাঁকে ওই রোগীর চিকিৎসা করার সুযোগ করে দিই। তাতেই খেপে ওঠেন আশিসবাবু।” সেই রাতেই আশিসবাবু নার্সিংহোমে চড়াও হন বলে অভিযোগ। জয়প্রকাশবাবুর দাবি, “আশিসবাবু নার্সিংহোমে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চিকিৎসক-কর্মীদের উপরে চড়াও হন। এক কর্মীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকিও দেন।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি হাসপাতালের যে চিকিৎসক সেই দিন অসুস্থ রোগী নিয়ে ওই নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে আশিসবাবুর বিবাদ দীর্ঘদিনের। আশিসবাবুর বিরুদ্ধে তাঁকে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছিল। ওই চিকিৎসকের অভিযোগে পুলিশ তখন তাঁকে গ্রেফতারও করে। শুক্রবারের ঘটনার সম্পর্কে আশিসবাবুর দাবি, “আমি শুধু প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। ওই চিকিৎসকের নামে বহু অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর তাঁকে সাসপেন্ডও করেছে। তবুও তিনি ওই নার্সিংহোমে বেশ কিছু দিন ধরে চিকিৎসা করছেন।”
তা বলে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে প্রতিবাদ? ফোন বন্ধ করে দেন আশিসবাবু।
নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, ওই চিকিৎসক তাঁদের সঙ্গে যুক্ত নন। জয়প্রকাশবাবু বলেন, “ওই দিনই শুধু তাঁকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।” অন্য দিকে, ওই চিকিৎসকের সরকারি-বেসরকারি কোথাও চিকিৎসা করতে বাধা নেই বলে জানান রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তিনি বলেন, “সাসপেনশন অর্ডার তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।” ওই চিকিৎসক অবশ্য ফোন ধরেননি।
তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ঠিক কী, তা নিয়ে আশিসবাবু নিজে কিন্তু কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর বহিষ্কার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, অনুব্রতবাবু বলেছেন, “আশিসবাবু কোনও দিনই তৃণমূলের সদস্য ছিলেন না। তাই তাঁকে বহিষ্কারেরও প্রশ্ন ওঠে না।” স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, আশিসবাবু সম্বন্ধে দলের অবস্থান যাই হোক না কেন, তিনি নিজেকে বরাবরই তৃণমূলের নেতা বলেই পরিচয় দেন। এমনকী স্বপনবাবুও বলেন, “আশিসবাবু নিজেকে তৃণমূলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেও দাবি করে বেড়ান। দলের বিভিন্ন মিটিং মিছিলেও তাঁকে দেখা যায়।” |