গ্রামটির নাম আমোদপুর। পরিচিতি যদিও কালীর গ্রাম হিসেবেই। ছোট-বড় মিলিয়ে পুজোর সংখ্যা অন্তত ৮০। তার মধ্যে ৫০টিই পারিবারিক। গ্রামে দেবী কালী পূজিতা হন কোথাও বড়মা, কোথাও মেজোমা, কোথাও সেজো মা বা ছোট মা নামে।
মেমারির ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মনীন্দ্রকুমার নন্দীর দাবি, “গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বেহুলা নদী। বর্তমানে জীর্ণ, লুপ্তপ্রায় এই নদীতে এক সময় বিশাল বিশাল জাহাজ চলত। প্রথমে দক্ষিণ পাড়ায় শুরু হয় বিশাল কালীপুজো। দক্ষিণপাড়ার ওই কালীকে ডাকা হত ‘বড়মা’ নামে।” ভক্তদের দাবি, তাঁর পুজো হচ্ছে প্রায় তিনশো বছর ধরে। |
আর এক বাসিন্দা নবকুমার নাথের মতে, “অতীতে বেহুলা নদীর পাড়ে ছিল বিরাট শ্মশান। সেখানে থাকতেন এক সাধক। তাঁরই উদ্যোগে প্রথমে সেখানে কালীপুজো শুরু হয়।”
বড়মার পুরোহিত শৈলেন ভট্টাচার্য বলেন, “এখানে পুজো চলে তিন দিন ধরে। চতুদর্র্শী না পড়লে দেবীর চক্ষুদান হয় না। আজও মশালের আলোয় ভাসান দেওয়া হয় প্রতিমাকে। রীতি মেনে ভাসানের সময়ে পোড়ানো হয় ঘুঁটের মশাল। বিসর্জনের পথে দেবীকে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যান ৩২ জন বেহারা।”
এই রীতি মেনেই গ্রামের ৮৫টি পুজো মণ্ডপ থেকে গ্রামের মানুষের কাঁধে চড়েই বিসর্জনের জন্য বেরোন দেবী। এই ১৮টি পাড়ার মণ্ডপগুলি বেহুলা নদীর চারপাশে। প্রতিটি প্রতিমাকে নিয়ে হয় শোভাযাত্রা। এক সময়ে বর্ধিষ্ণু পরিবারের লোকজনের হাতে শোভা পেত বন্দুক থেকে শুরু করে নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। সেগুলি থেকে ছোঁড়া হত গুলি। সে সব কথা অবশ্য এখন অতীত।
বড়মার তরুণ ম্যানেজার সুজিত সরকারের কথায়, “গ্রামবাসীর বিশ্বাস, পুজোর সময়ে মণ্ডপে উপস্থিত থাকলে সারা বছর দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।” |