বাজির ছোট কারখানা
সমস্যা বহু, তবু বৈচিত্র্য এনে টিকে থাকার চেষ্টা
র্থ নেই। লোকবল নেই। নামীদামি সংস্থার মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগও নেই। আছে শুধু টিকে থাকার অদম্য ইচ্ছা। আর তাকে হাতিয়ার করেই আতসবাজির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বুদবুদের মালাকার পরিবার। লগ্নির অভাব ও নানা নামী সংস্থার বাজির দাপটে যখন এমন ছোটখাট সংস্থাগুলি সমস্যায় জেরবার, আতসবাজিতে নানা ধরনের পরিবর্তন এনে কিস্তিমাত করে চলেছে বুদবুদের পরিবারটি।
দুর্গাপুর মহকুমায় সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত একমাত্র আতসবাজি তৈরির কারখানাটি রয়েছে বুদবুদের কোটা গ্রামের মালাকার পরিবারে। কারখানা বলতে অবশ্য বাড়ির পাশের একটি ঘর। সেখানেই প্রায় ১২০ বছর ধরে বাজি তৈরি করছেন বাড়ির সদস্যেরা। পরিবারের বর্তমান সদস্য অশোকচন্দ্র মালাকার জানান, তাঁর দাদু সূর্যনারারায়ণ মালাকার প্রথম এই কাজ শুরু করেছিলেন। এখন অশোকবাবুই কাজ দেখাশোনা করেন। তুবড়ি থেকে রঙবেরঙের মশাল, নানা রকম বাজিই তৈরি হয়। অশোকবাবুর মতে, আগে শুধু দুর্গাপুজো বা কালিপুজোতেই বাজির চাহিদা থাকত। কিন্তু এখন যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানেই বাজি পোড়ানো হয়। সে দিক থেকে বিচার করলে বাজির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
কাজে ব্যস্ত বুদবুদের মালাকার পরিবারের সদস্যেরা।— নিজস্ব চিত্র।
তবে অশোকবাবুর দাবি, চাহিদা বাড়লেও বাজারে প্রতিযোগিতায় নেই তাঁরা। তিনি জানান, শুধু ‘অর্ডার’ মতো বাজি তৈরি করে দেন। তাঁর কথায়, “এখন এই কাজে সে ভাবে কর্মী পাওয়া যায় না। বাজারে কোনও নতুন বাজি দেখলে তা কিনে এনে কী ভাবে তৈরি করা হয়েছে দেখি। তার পরে সেটি আমরা আমাদের মতো করে তৈরি করি। নতুন নতুন বাজি তৈরি না করলে তো মানুষ নেবে না।” এ ভাবে টিকে থাকলেও তাঁর মতে, বাজারের অন্য নামীদামি সংস্থার তৈরি করা বাজির সঙ্গে তাঁরা কখনও প্রতিযোগিতায় আসতে পারেন না। কারণ, অর্থ ও লোকবলের অভাব।
নানা রকম আতসবাজি তৈরি করে বড় সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার কোনও ইচ্ছা আছে কি না, সে প্রশ্নে অশোকবাবু বলেন, “যদি সরকারের তরফে কোনও দিন অনুদান পাই, সে ক্ষেত্রে আসরে নামতেই পারি।” তাঁর দাবি, এখন কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। তার উপরে বাজারে অনেক সস্তায় বাজি পাওয়া যায়। কাজেই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে লগ্নিও বাড়াতে হয়েছে তাঁদের। নতুন নতুন বাজি তৈরি করতে গেলে খরচও বাড়ে। অশোকবাবুর দাবি, শব্দবাজি তৈরিতে খরচ কম ছিল। লাভ ছিল বেশি। কিন্তু সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে তাঁরা আর শব্দবাজি তৈরি করেন না। তার বদলে নতুন ধরনের আতসবাজি তৈরি করে চাহিদা মেটাচ্ছেন।
বুদবুদের মালাকার পরিবার নানা ভাবে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে গেলেও আসানসোলে পার্থ মালাকারেরা বাজি তৈরি বন্ধ করে দিয়েছেন বছর ছয়েক আগে। তাঁরা এখন শুধু ডাকের সাজ তৈরি করেন। বাজি ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার কারণ সম্বন্ধে পার্থবাবুর দাবি, যোগ্য কারিগরের অভাবেই এমন সিদ্ধান্ত। ভাল কারিগর আনতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন, তা তাঁদের নেই। তবে তাঁর বক্তব্য, “অন্য নামী সংস্থার তুলনায় আমাদের তৈরি বাজির গুণগত মান অনেক ভাল ছিল। এক সময়ে সরকারি নানা অনুষ্ঠানেও বাজি সরবরাহ করা হয়েছে।” তাঁর আক্ষেপ, এ সব সত্ত্বেও কোনও সরকারি অনুদান মেলেনি। তাই সরকারি লাইসেন্স জমা দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।
শত সমস্যায় দৌড় শেষ করতে হয়েছে পার্থবাবুর মতো অনেককেই। দীপাবলির রাতের আকাশে আলোর ফোয়ারায় টিমটিম করে জ্বলছে শুধু বুদবুদের মালাকারদের মতো কয়েক জন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.