শ্যামলেন্দু মিত্র • কলকাতা |
ক্রীড়ামোদীদের লাখ লাখ টাকার বিরিয়ানি খাইয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র।
গত ৩১ জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক সরকারি অনুষ্ঠানে ১৭ হাজার ক্রীড়ামোদীকে ঢালাও চিকেন বিরিয়ানি খাইয়েছিল রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদ। খরচ হয়েছিল ১৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু সেই খরচ সরকার মেটাবে কি না, তার ফয়সালা হয়নি। অর্থ দফতরে বিল আটকে রয়েছে। ফলে ন’মাসের উপর হয়ে গেল, টাকা পায়নি বিরিয়ানি সরবরাহকারী সংস্থা। বিরক্ত মদনবাবু জানিয়েছেন, সরকার না-দিলে তিনি নিজের পকেট থেকেই পাওনা মিটিয়ে দেবেন।
পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, রাজ্যের ২৯৪ জন বিধায়কের প্রত্যেকের নির্বাচনী এলাকার ছ’টি ক্লাবকে দু’লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। সেই মতো বিধায়কদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ১৭৬৪টি ক্লাবকে বাছাই করা হয়। গত ৩১ জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্রীড়া দফতরের অধীনস্থ রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদ। সেখানে নির্বাচিত ক্লাব-কর্তাদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। |
পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মদনবাবু অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভ্যাগতদের বিরিয়ানি খাওয়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। বিরিয়ানির বরাত দেওয়া হয়েছিল ক্রীড়া পর্ষদ অনুমোদিত এক কেটারিং সংস্থাকে। অনুষ্ঠানের দিন ইন্ডোর ছিল কানায়-কানায় ভর্তি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ক্লাবের বিস্তর সদস্য-সমর্থক এসে হাজির হন, ছিলেন বেশ কিছু মন্ত্রী-আমলা-সরকারি কর্মী ও প্রচুর ক্রীড়া-অনুরাগী। মদনবাবুর নির্দেশে সব মিলিয়ে ১৭ হাজার জনকে সে দিন বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়।
আর সেই চিকেন বিরিয়ানি খেয়ে সকলে সে দিন ক্রীড়ামন্ত্রীকে ধন্য ধন্য করেছিলেন।
কিন্তু মন্ত্রী তখনও জানতেন না, এই বিরিয়ানি-ই পরে তাঁর ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়াবে! বিরিয়ানির খরচ বাবদ ক্রীড়ামন্ত্রীর পাঠানো ১৪ লক্ষ টাকার বিল ন’মাস আটকে রেখেছে অর্থ দফতর। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এই মুহূর্তে দেশের বাইরে। তাঁর সচিবালয় থেকে বিল আটকে রাখার কথা স্বীকার করে বলা হয়, বরাত দেওয়ার আগে অর্থ দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের জৌলুস বাড়াতে গিয়ে এ হেন ফ্যাসাদে পড়ে ক্রীড়ামন্ত্রী যারপরনাই ক্ষুব্ধ, বিরক্তও। “অর্থ দফতর বিল মেটাচ্ছে না। আটকে রেখেছে।” বলছেন তিনি। মদনবাবুর ঘোষণা, “টাকা না-দিলে না দেবে! আমি যখন খাইয়েছি, তখন দাম আমি-ই না হয় মেটাব। নিজের পকেট থেকে টাকা দেব।” ক্রীড়ামন্ত্রী এ-ও জানান, “আমি তো ওদের খেপে-খেপে টাকা মিটিয়ে দিচ্ছি। দরকার হলে রসিদ এনেও দেখাতে পারি।” বিরিয়ানি সরবরাহকারী কী বলছেন?
সংস্থাটির মালিক নিমাই পাল বাগবাজারের অফিসে বসে বলেন, “ক্রীড়ামন্ত্রী ভাল মানুষ। যথেষ্ট সহানুভুতিশীল। মন্ত্রী বলেছেন, অর্থ দফতর টাকা না-দিলে উনিই অন্য ভাবে দিয়ে দেবেন।”
নিমাইবাবুর আক্ষেপ, “ক্রীড়া দফতরের সঙ্গে আমরা বহু বছর যুক্ত। তবে এ বার অনেক দিন হয়ে গেল, পেমেন্ট আটকে রয়েছে।” ক্রীড়া পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “৩১ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে ওরা প্যাকেটপিছু ৯০ টাকায় বিরিয়ানি দিয়েছিল।
অথচ এখনও টাকা পায়নি! এটা ঠিক নয়।” |