প্রয়াগ ইউ ১০ (র্যান্টি হ্যাটট্রিক-সহ ৫, কার্লোস ২, রফিক, তুলুঙ্গা, স্টিভন আত্মঘাতী)
সিকিম ইউ ১ (নিমা) |
র্যান্টি মার্টিন্স-কার্লোস হার্নান্ডেজ যুগলবন্দির আলোয় যুবভারতীতে যখন ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে, সঞ্জয় সেন তখন সেই বর্ণচ্ছটা থেকে অনেক দূরে, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে।
মাঠের মহানায়কদের ছেড়ে প্রয়াগের সদ্য প্রাক্তন কোচ সিনেমার দুই মহানায়ক অমিতাভ-শাহরুখদের দেখতে ব্যস্ত। সেখান থেকেই ফোনে সঞ্জয় বললেন, “আমি ফেড কাপে যে টিম খেলিয়েছিলাম সেটাই তো দেখলাম ও খেলাচ্ছে। সে দিন গোল পায়নি, আজ পাচ্ছে। কুড়ি মিনিট মতো টিভিতে খেলা দেখলাম। নতুন কিছুই তো দেখলাম না। তাই সুইচ অফ করে ফিল্ম ফেস্টিভাল দেখতে চলে এলাম।”
আপনার কোচিং জীবনে এটাই কি সবথেকে বড় ব্যবধানে জয়? এই চমকপ্রদ ফল আশা করেছিলেন? স্কুলের কড়া অঙ্ক-মাস্টারের মতো চশমা চোখে বসে থাকা এলকো সাটোরি প্রশ্নকর্তার দিকে তাকান। “আমার কোচিং জীবনে এটাই সবথেকে বড় ব্যবধানে জয়। একবার ৬-০ জিতেছিলাম। ১০ গোল কিছুটা বিস্ময়ের তো বটেই, কিন্তু আরও অনেক দূর যেতে হবে। আমি আকাশে উড়তে ভালবাসি না। বাস্তবের জমিতে থাকতে চাই,” উচ্ছ্বাস থেকে এ ভাবেই দূরে চলে যান ডাচ কোচ।
সঞ্জয় থেকে এলকো। দক্ষিণ কলকাতার চেতলা থেকে নেদারল্যান্ডসের সোয়ামেন। চিন্তার বা পথের ব্যবধান যত মাইলই হোক, প্রয়াগের দায়িত্বের ব্যবধান তো মাত্র দু’দিনের। |
ব্যাকভলিতে দু’নম্বর গোল। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
আটচল্লিশ ঘণ্টায় কী এমন ‘মিডাস টাচ’ দিলেন উইম কোভারম্যান্সের বন্ধু, যে আঠাশ বছরের যুবভারতীতে সর্বাধিক গোলে জেতার রেকর্ড তৈরি হল?
এভাররেডি থেকে প্রয়াগ ইউনাইটেডটিমের গত ১৮ বছরের সঙ্গী সহকারী কোচ অঞ্জন নাথ কেমন যেন সম্মোহিত এলকোর ড্রেসিংরুমের প্রস্তুতি দেখে। “কেমন যেন একটা শক্তি আছে এলকোর মধ্যে। অসম্ভব কমান্ডিং। মাত্র দু’টো পরিবর্তন করলেন দলে। আর বোর্ডে এঁকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর বললেন জিতে ফিরতেই হবে।”
ভাইচুং ভুটিয়ার খেলোয়াড় জীবনে যে লজ্জা কখনও বইতে হয়নি, টিম-মালিক হয়ে সেটাই বইতে হল শনিবার। তবে সিকিমের গায়ে কলঙ্ক লাগার পিছনে ফিলিপ ডি’রাইডারের দলের জঘন্য ফুটবল যদি প্রধান দায়ী হয়, তা হলে তার সলতে পাকানোর কাজটা ড্রেসিংরুমে সেরে এসেছিলেন প্রয়াগের নতুন ডাচ কোচ।
৪-৪-১-১ ফর্মেশনে দল নামিয়ে চমকে দিলেন এলকো। শুধু এক দিন চোখের দেখাতেই গোলমেশিন র্যান্টির দশ হাতের মধ্যে টিমের সেরা পাসার কার্লোসকে রেখে দিয়েছিলেন তিনি। মাঝমাঠে ফিরিয়ে এনেছিলেন লালকমল ভৌমিককে। আর তাতেই পাড়ার ফুটবলের মতো ফল!
র্যান্টির অসাধারণ ব্যাকভলির গোল, কার্লোসের বিপক্ষ গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে করা বুদ্ধিদীপ্ত গোল, তুলিঙ্গার পাস ধরে সাপের ছোবলের মতো গোলে র্যান্টির হ্যাটট্রিকএ সবই দেখা গেল পরিবর্তনের প্রয়াগে। গোলমেশিন র্যান্টির একের পর এক গোল আর বিশ্বকাপার কার্লোসের তিরিশ-চল্লিশ গজের মাপা পাসগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, মঞ্চে মান্না দে-র গানের সঙ্গে যেন সঙ্গত করছেন রাধাকান্ত নন্দী।
কখনও কোচের পছন্দের তিকিতাকা ফুটবল, কখনও হাউটন আমলের লং বল, বাদ গেল না কিছুই। রং-মশালের নানা আলোর মতো বদলাচ্ছিল স্ট্র্যাটেজিও। কেরলের ভিনীতকে উপরে তুলে ৪-৩-৩ বা কার্লোসকে নামিয়ে এনে ৪-৫-১ ভাঙাগড়া চললই। আর এই আগুনের মধ্যে পড়ে অসহায় দেখাল ভাইচুংয়ের দলকে। তাঁর দলের দুই গোলকিপার কোরীয় উন টে এবং বাংলার মনতোষ ঘোষদু’জনেই পাঁচ গোল হজম করে ছুঁলেন ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে। নিট ফল, রাইডারের চাকরি নিয়ে টানাটানি। র্যান্টিদের প্রাক্তন কোচ সঞ্জয়ের কাছে প্রস্তাব গিয়েছে। তিনি রাজি নন।
গোলের বর্ণচ্ছটায় ময়দানের নতুন বিদেশি কোচ এলকোর অভিষেকের দিনে, আর পুরোনো এক বিদেশি কোচের বিদায়ঘণ্টা বেজে উঠল। |
ফেড কাপে যে টিম খেলিয়েছিলাম সেটাই তো দেখলাম ও খেলাচ্ছে। সে দিন গোল পায়নি, আজ পাচ্ছে। কুড়ি মিনিট মতো টিভিতে খেলা দেখলাম। নতুন কিছুই তো দেখলাম না। তাই সুইচ অফ করে ফিল্ম ফেস্টিভাল দেখতে চলে এলাম। |