|
|
|
|
গোয়েন্দাদের সতর্ক-বার্তা উপেক্ষিত কেন, প্রশ্ন পুলিশেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাঁচি |
গোয়েন্দারা আগেই সতর্ক করেছিল। জেল থেকে আদালত বা আদালত থেকে জেলের পথে যে প্রিজন ভ্যানের উপর এমন হামলা মাওবাদীরা যে কোনও দিন করতে পারে, নির্দিষ্ট ভাবে এই মর্মেই গোয়েন্দারা রাজ্য পুলিশকে সতর্ক করেছিল। তারপরেও ঘটে গেল গিরিডি-র ঘটনা। জঙ্গলে নয়, রীতিমতো জনবসতি পূর্ণ এলাকায়, রাস্তায় ট্রাক দিয়ে প্রিজন ভ্যানের পথরোধ করা, তারপর তার চারপাশে কার্যত ‘কার্পেট বম্বিং’ ও পরে এলোপাথারি গুলি চালাতে চালাতে এসে বন্দি ৮ জঙ্গি-কমরেডকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় হতভম্ব পুলিশ বাহিনী। একই সঙ্গে প্রকট হয়েছে পুলিশ প্রশাসনে সমন্বয়ের অভাব।
সরকারি সূত্রের খবর, কালকের গিরিডির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়ে তিনি রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে ঘটনার সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, কাল বিকেলে আদালত থেকে আটজন মাওবাদী-সহ ৩২ জন বিচারাধীন বন্দিকে জেলে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের প্রিজন ভ্যানের উপর সুপরিকল্পিত আক্রমণ চালায় জঙ্গিরা। পুলিশ সূত্রের খবর, গিরিডির উদানাবাদের কাছে রাস্তায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে জঙ্গিরা প্রিজন ভ্যানটিকে থামতে বাধ্য করে। ভ্যানটি থামতেই ভ্যানের সামনে মুহূর্মুহূ বোমা পড়তে থাকে। সঙ্গে চলে অবিরাম গুলি। জঙ্গিদের গুলিতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান তিনজন পুলিশকর্মী এবং এক সাধারণ বিচারাধীন বন্দি। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও আটজন পুলিশ এবং দুজন বন্দি। প্রিজন ভ্যানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ পাল্টা আক্রমণের কোনও সুযোগই পায়নি। অবাধে প্রিজন ভ্যান থেকে আটজন জঙ্গিকে নিয়ে পালিয়ে যায় মাওবাদীরা। পালানোর আগে পুলিশের তিনটি রাইফেল এবং একটি কারবাইনও জঙ্গিরা ছিনিয়ে নেয়। উল্লেখ্য, বিচারাধীন জঙ্গিদের নিয়ে আদালতে যাওয়া-আসার পথে প্রিজন ভ্যানের উপরে মাওবাদীরা আক্রমণের ছক করেছে বলে চলতি মাসের গোড়াতেই পুলিশ প্রশাসনের কাছে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। গিরিডিতে ফেরার বিচারাধীন জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছেন বিহারের জুমাই সংলগ্ন গিরিডি এলাকার সিপিআই (মাওবাদী)-র জোনাল কমান্ডার সহদেব মাজি, এরিয়া কমান্ডার রমেশ মণ্ডল। এ ছাড়াও ছিলেন সংগঠনের আরও ছয় সক্রিয় কর্মী। ওই মাপের মাওবাদী নেতাদের নিয়ে যাতায়াতের সময় প্রিজন ভ্যানের সামনে-পিছনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কিন্তু কাল গিরিডির প্রিজন ভ্যানে কার্যত নিরাপত্তাই ছিল না। যার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক হামলা চালিয়ে কাজ হাসিল করেছে মাওবাদীরা।
এসবি-র সতর্ক বার্তার কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি গিরিডির পুলিশ সুপার ওঙ্কার অমল বেনুকান্ত। পাশাপাশি পুলিশের একাংশের বক্তব্য, স্পেশাল ব্রাঞ্চের সতর্কবার্তা কার্যকর করার দায়িত্ব একক ভাবে জেলা পুলিশের নয়। দায় এড়াতে পারে না রাজ্য পুলিশ প্রশাসনও। সে ক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ড পুলিশের সমন্বয়ের অভাবের ছবিটাও এই ঘটনায় স্পষ্ট।
আজ ঘটনার তদন্তে গিরিডি যান আইজি এম এল মিনা-সহ পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা। পুলিশ জানিয়েছে, কাল রাত থেকেই পলাতক মাওবাদী জঙ্গির তল্লাশিতে নামানো হয়েছে বিশাল যৌথ বাহিনী। আটক করা হয়েছে, মাওবাদীদের গাড়ি। জঙ্গিদের সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ যুবককে। |
|
|
|
|
|