বিপুল আর্থিক ক্ষমতার চূড়ায় বসে থাকা উন্নত দুনিয়াকে পিছনের সারিতে হটিয়ে দিতে খুব বেশি দেরি নেই ভারত-চিনের মতো তথাকথিত পিছিয়ে থাকা দেশগুলির।
পাকাপাকি ভাবে দরিদ্র, এমনকী অনুন্নত রাষ্ট্রের তকমাই যাদের ভবিতব্য বলে এই সে দিন পর্যন্ত মনে করতেন বেশ কিছু অর্থনীতিবিদও। কিন্তু দুনিয়ায় কোনও কিছুই যে অভ্রান্ত নয়, এ বার সেই ইঙ্গিত মিলল ইউরোপেরই গবেষণা সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর সমীক্ষায়।
প্যারিস ভিত্তিক ওইসিডি জানিয়েছে, চিন এবং ভারতের মিলিত জাতীয় আয় ধনী দেশগুলির জোট জি৭-এর সম্মিলিত জাতীয় আয়কে অতিক্রম করবে ২০২৫ সাল নাগাদই। যদিও ২০১০ সালে চিন-ভারতের জাতীয় আয় জি৭-এর মোট আয়ের অর্ধেকেরও কম ছিল।
চিনা অর্থনীতি সম্ভবত এ বছরেই টপকে যাবে ইউরোপীয় অঞ্চলকে। জাপানের অর্থনীতিকে ভারত পিছনে ফেলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। আর, ২০৩০ সালের মধ্যেই এশিয়ার এই দুই রাষ্ট্র ভারত ও চিনের অর্থনীতির আয়তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় অঞ্চল ও জাপানের সম্মিলিত অর্থনীতিকেও ছাপিয়ে যাবে। ৪২টি প্রধান রাষ্ট্রের জাতীয় আয়ে ২০৩০ নাগাদ চিন ও ভারতের অবদান হবে যথাক্রমে ২৮% ও ১১%। সে জায়গায় আমেরিকার অবদান থাকবে ১৮%, ইউরোপের ১২%। জাপান ৪% অবদান নিয়ে একেবারে তলানিতে।
২০২০ পর্যন্ত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মধ্যে আর্থিক বৃদ্ধিতে শীর্ষে থাকবে চিন। তার পর তাকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া, কারণ তখন থেকেই বিপুল সংখ্যক বয়স্ক জনসংখ্যা নিয়ে কিছুটা ঢিমে তালে এগোবে চিন। একই কারণে তাদের সঞ্চয়ের হার এখন জাতীয় আয়ের ৫০% ছাড়ালেও ২০৬০-এর মধ্যে তা নামবে প্রায় ১০ শতাংশে।
অন্য দিকে, ইতিমধ্যেই এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে উঠে আসা ভারতকে ২০১৫-র মধ্যে আর্থিক অনুদান বন্ধ করছে ব্রিটেন। একদা ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তার করা ব্রিটেন দ্রুত ভারতের উত্থান, পরমাণু কর্মসূচিতে তার সাফল্য ইত্যাদি দেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
২০০৫ সালে হিসাব করা ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতেই এই সব পূর্বাভাস দিয়েছে ওইসিডি। অন্য দিকে, আর্থিক সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর মতে, বাজারের বিনিময় হারের ভিত্তিতে হিসাব করলে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চিনকে নিয়ে গড়া ব্রিক্স গোষ্ঠী জি৭-কে টপকে যাবে ২০৩৭ সালের মধ্যে।
নিছক কবির কল্পনায় নয়, জগৎসভায় ভারতের শ্রেষ্ঠ আসন পাওয়া যে আর অবাস্তব নয়, ও ই সি ডি-র সমীক্ষা সেই দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে এটি ততটা তথ্যপ্রমাণ ভিত্তিক না-হলেও আর্থিক ক্ষমতার ভরকেন্দ্র যে উন্নত দুনিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বেশ দ্রুতগতিতে, তা অত্যন্ত স্পষ্ট। |