দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্র থেকে উপেক্ষিত ছিল কাশ্মীর উপত্যকা। কিন্তু সময় বদলেছে। রোজকার অশান্তি আর রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই চেনা ছবিটাও আস্তে আস্তে পাল্টাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ফের ভিড় করছেন ভূস্বর্গে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে কাশ্মীর এখনও সেই তিমিরেই। তার একটা বড় কারণ ছিল বিদেশি পর্যটকদের জন্য তৈরি ভ্রমণ নির্দেশিকা। বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তৈরি করেছিল ওই সব নির্দেশিকা। আর সেগুলিই আন্তর্জাতিক পর্যটকদের উপত্যকায় টেনে আনার ক্ষেত্রে মূল বাধা ছিল। কিন্তু সেই ছবিটাও এ বার বদলানোর দিকে। গত বছরই জার্মান সরকার দেশের নাগরিকদের শ্রীনগর যাওয়ার অনুমতি দেয়। সেই শুরু। ধীরে ধীরে অন্য দেশও একই পথ অনুসরণ করছে। সম্প্রতি তালিকায় নতুন নাম সংযোজন হয়েছে জাপান আর ব্রিটেনের। এই দু’টি দেশের সরকারও এত দিন ধরে চলে আসা ওই নির্দেশিকা তুলে নিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে ভূস্বর্গের ফেরার রাস্তাটাও পরিষ্কার হচ্ছে। |
কিন্তু এত সবের মধ্যেও একটা কাঁটা রয়েই গিয়েছে। সেটা হল উপত্যকার পরিবেশ রক্ষার সমস্যা। বিশেষত শ্রীনগরের অন্যতম মূল আকর্ষণ ডাল লেকের। ডাল লেকে বর্তমানে মোট ৭৪০টি হাউসবোট আছে। লেকের আশপাশে প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কম করে ২০০০টি হোটেল আছে। এবং সব ক’টি থেকে আবর্জনা গিয়ে মেশে ডাল লেকেই। এর আগে অনেক বারই জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট হাউসবোটের আবর্জনা অন্যত্র ফেলার জন্য নানা নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে সেটা কোনও বারই হয়ে ওঠেনি। রাজ্যে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, কেউই এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে ডাল লেকের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
কাশ্মীরের ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রউফ ত্রাম্বু বললেন, “আমাদের পরিবেশ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। আর তার জন্য একটা সমাধান সূত্রও বার করতে হবে।” কিন্তু সেই সমাধান সূত্রটা ঠিক কী, সে নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। শ্রীনগরে হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মহম্মদ আজিম তুমানও দায় চাপালেন অন্যর ঘাড়েই। বললেন, “আমাদের শুধু দোষ দিলে তো চলবে না। এই অবস্থার জন্য প্রত্যেকেই দায়ী। শ্রীনগরের এই সম্পদকে বাঁচাতে প্রয়োজন সকলের মিলিত উদ্যোগ।” তবে তুমানের বক্তব্য, কাশ্মীর নিজে এতই সুন্দর যে তার সৌন্দর্যই বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।
কাশ্মীর উপত্যকাকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার অনেক কিছু চিন্তা-ভাবনা করছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী নাওয়াঙ্গ রিগজিন জোরাও। তাঁর কথায়, “কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রাজ্যের পর্যটন পরিকাঠামো সুদৃঢ় করার চেষ্টা হচ্ছে। অতীতে কাশ্মীর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের নিজের করে নিয়েছে। আমাদের সরকার সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে।”
এর আগে বিদেশি পর্যটকদের কাছে কাশ্মীরের মূল আকর্ষণ ছিল ট্রেকিং। অনেকেই লাদাখে ট্রেকিং করতে যাওয়ার আগে শ্রীনগর হয়ে যেতেন। রাজধানী শ্রীনগর বরাবরই আকর্ষণের মূল কেন্দ্রে ছিল, এখনও তা-ই আছে। ব্রিটিশ সরকারও জার্মানির মতো আপাতত শ্রীনগর জেলার জন্যই তাদের নিয়ম শিথিল করেছে। কিন্তু কাশ্মীরিরা চাইছেন শুধু শ্রীনগরই নয়, পহেলগাম, সোনমার্গ, গুলমার্গের মতো এলাকাতেও বিদেশি পর্যটকরা আসুন। তা হলেই ধুঁকতে থাকা রাজ্যের পর্যটন শিল্প আশার আলো দেখতে পাবে। |