অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মফস্সলের সিনেমা হল।
দেব কিংবা সোহমের জন্য নয়। মারকাটারি আইটেম নাম্বারের জন্যও নয়। বক্স অফিস মাত করছে ‘বক্স’। হল কর্তৃপক্ষের পোশাকি ভাষায়, ‘স্পেশাল সিট।’
প্লাইউড দিয়ে তিন দিক ঘেরা। আসন মাত্র একটি। তাতে পাশাপাশি দু’জন বসতে পারেন। বক্স-এর ভাড়া সাধারণ টিকিটের থেকে চড়া। তরুণ-তরুণীরা সিনেমাহলে এসেই কাউন্টারে মুখ লাগিয়ে বক্স-এর টিকিট খোঁজেন। হল মালিকের মুখের হাসি চওড়া হয়। শহরের মাল্টিপ্লেক্স জোগান দিচ্ছে পপকর্ন, বার্গার, কোল্ড ড্রিংক। মফস্সলের সিনেমা হল দিচ্ছে কেবল আড়ালটুকু। হাওড়ার বাগনানের একটি সিনেমা হলে দেখা গেল এই ব্যবস্থা। তিনতলার এই প্রেক্ষাগৃহে প্রথম দু’টি তলে বসতে পারবেন প্রথম শ্রেণি এবং ব্যালকনির দর্শকেরা। তিনতলায় রয়েছে একটি ছোট এনক্লোজার। এখানেই তিরিশটি বক্স। এক-একটি বক্সে দু’জন করে বসতে পারেন। একটি বক্সের দর্শকযুগল পাশের বক্সের দর্শকদের দেখতে পাবেন না। একটি বক্সের ভাড়া ১২০ টাকা।
সিনেমাহলের মালিক ফটিক চাউলিয়া বলেন, “শুরু থেকেই তৃতীয় তলে স্পেশ্যাল টিকিটের বিনিময়ে বসার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আসন ঘিরে দেওয়া হয়েছে বছরখানেক হল।” জানা গেল, বাগনানের আরও দু’টি সিনেমাহলে বেশি দামের টিকিট কেটে ঘেরাটোপে একান্তে বসে সিনেমা দেখার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এর সুফল ফলেছে বলেও ফটিকবাবুর দাবি। তিনি জানান, বক্সগুলি প্রায় সব শোয়ে ভর্তি থাকে। এতে হল রক্ষণাবেক্ষণের খরচটা অন্তত উঠে যায়।
কারা আসেন বক্সগুলিতে? দুপুরের শোয়ে এই সিনেমাহলে গিয়ে দেখা গেল মূলত তরুণ-তরুণীরাই বক্সগুলিতে ভিড় করেছেন। অনেকে পরিবার নিয়েও বক্সগুলিতে আসেন বলে হল কর্তৃপক্ষ জানান। |
রাজ্যে সিনেমা হলের অবস্থা শোচনীয়। এক সময়ে রাজ্যে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে আটশো। বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিনশোতে। তথ্যটি জানা গিয়েছে ইন্ডিয়ান অ্যান্ড ইস্টার্ন মোশন পিকচারস অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা) সূত্রে। সঙ্কট থেকে বাঁচতে কলকাতায় সিনেমাহলগুলিকে নতুন করে সাজিয়েছেন অনেকে। শহরে অনেক সিনেমা হল পরিণত হয়েছে মাল্টিপ্লেক্সে। মফস্সলের সিনেমা হল মালিকদের সেই সঙ্গতি নেই। ফটিকবাবু বলেন, “সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই আমরা হলগুলির সংস্কার করেছি। তার সঙ্গে বিশেষ দর্শকদের একটু ব্যক্তিগত স্পেস দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। নিজেদের মতো করে তাঁরা যেন সিনেমা দেখতে পারেন।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা সমাজসেবী মানস বসু বলেন, “অনেকে বক্স ব্যবস্থাকে অন্য চোখে দেখতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বক্সে যে দর্শক আসবেন তিনি তো টিকিট কেটেই ঢুকবেন। এতে আখেরে সিনেমা শিল্পেরই লাভ।”
বক্স-এর দাওয়াইটি অবশ্য নতুন নয় বলে জানালেন ইমপার সদস্য তথা প্রযোজক বিপ্লব চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “২০০৬ সালে উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুরে এক প্রেক্ষাগৃহে আমার একটি ছবি চলেছিল ১২ সপ্তাহ। প্রথম কয়েক সপ্তাহ চলার পরে যখন ভিড় থিতিয়ে আসে তখন ছবিটিকে বাঁচিয়েছিলেন বক্সের দর্শকরা। এই সিনেমাহলটিতেও তিন দিক ঘেরা কিছু বক্স রয়েছে।”
ইমপা-র প্রদর্শন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত শান্তনু রায়চৌধুরী বলেন, “রাজ্য জুড়ে সিনেমাহলগুলিতে দর্শক কমছে। ফলে দর্শক টানার জন্য শহরের সঙ্গে গ্রামের সিনেমাহলগুলিও নানাভাবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এটা সেই রকমই একটা উদ্যোগ।” তিনি অবশ্য বলেন, “বক্সগুলিকে যদি একটু আলাদা ভাবে অলঙ্করণ করা যায়, ঠান্ডা পানীয় সরবরাহ বা বাতানুকুল ব্যবস্থা করা যায় তা হলে কিন্তু এগুলি মাল্টিপ্লেক্সের মাত্রাই পাবে।” তবে কেবল কয়েকটি বক্স তৈরি করে যে সিনেমা শিল্পকে বাঁচানো যাবে না, তা মনে করিয়ে দেন ফটিকবাবু। “আমাদের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে,” বলেন তিনি।
যত দিন সরকার পাশে না দাঁড়াচ্ছে, তত দিন পাশাপাশি বসার জায়গাটুকুই ভরসা।
|
দু’দিন ব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হল হলদিবাড়িতে। শনিবার দুপুরে চলচ্চিত্রপ্রেমী সংগঠন ‘উর্মিকা’ আয়োজিত এই উৎসবের উদ্বোধন করেন হলদিবাড়ির বিডিও দিব্যেন্দু মজুমদার। দু’দিনের উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ দিয়ে শুরু করে পরেশ মুকাশি, মনি কাউল এবং রোহিত রায়ের ছবি দেখানো হবে। এ ছাড়া রামগোপাল ভার্মার ‘নো স্মোকিং’ এবং নির্বাক যুগের চলচ্চিত্র ‘পুষ্পক’ দেখানো হবে। রামকিঙ্কর বেজকে নিয়ে ঋত্বিক ঘটকের অসমাপ্ত তথ্যচিত্র এবং ‘কনভারসেশন উইথ যশ চোপরা’ তথ্যচিত্র দু’টি দেখানো হবে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স অব ইন্ডিয়ান’ সিনেমা দেখানো হবে। আয়োজক সংস্থার সম্পাদক দেবতনু ভট্টাচার্য জানান, রবিবার দুপুর ১টা থেকে দেখানো শুরু হবে। |