বিনোদন একটা পাশ দিন, নক্ষত্র
দর্শনে হাপিত্যেশ জনতা

তিউতি জমে থাকা জটলাগুলো থেকে একটাই কাতর আর্তি, “একটা পাশ হবে দাদা? কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি!”
সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে করুণতর হল সেই অনুনয়, “পুলিশকে বলে একটু ঢোকার ব্যবস্থা করে দিন না দয়া করে। বেশি না, পাঁচ মিনিট দেখেই চলে যাব।” উত্তরের বারাসত থেকে দক্ষিণের বিষ্ণুপুর, শিক্ষিকা থেকে হাইকোর্টের আইনজীবী, কুতবউদ্দিন থেকে তাপসী পাল, সবারই এক কথা।
বাংলার আমজনতা এর আগে কবে এ রকম আগ্রহ দেখিয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার জন্য? আসলে শনিবার দুপুর থেকে সাধারণ মানুষের উৎসাহ যতটা ছিল চলচ্চিত্র উৎসব বা তার উদ্বোধন নিয়ে, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল এ দিনের মহাতারকা সমাবেশকে ঘিরে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের শম্ভু দেবনাথ ও অঞ্জু দেবনাথের হাতে ইন্ডোরে ঢোকার পাশ ছিল। কিন্তু তাঁদের জানার প্রয়োজনই নেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী ছবি দেখানো হবে। শুধু জানেন, “এক সঙ্গে অমিতাভ-শাহরুখ-মিঠুন। আর কিছু কি দরকার আছে?”
কিন্তু এমন উৎসাহীদের সবার পক্ষে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানের প্রবেশপত্র (১৫ হাজারের স্থান সঙ্কুলান) জোগাড় করা সম্ভব নয়। পাশ না-থাকা সত্ত্বেও হাজার দুয়েক মানুষ ভিড় করেছিলেন ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বাইরে। ভিতরে যেখানে অমিতাভ-শাহরুখ-মিঠুন, সেই জায়গায় ভিড় কেবল এটুকুর মধ্যে আটকে রাখার কৃতিত্ব অবশ্যই কলকাতা পুলিশের।
পাশ না-থাকা মানুষজনকে আকাশবাণী ভবনের সামনেই আটকে দিচ্ছিলেন তাঁরা। প্রবেশপত্র না-থাকলে কাউকেই অকল্যান্ড রোডের পশ্চিম দিকের ফুটপাথ ধরে যেতে দেওয়া হয়নি। এই ব্যবস্থার ফলেই ইন্ডোরের বাইরে বিশ্ঙ্খলা সৃষ্টিকারী জনসমুদ্র তৈরি হতে পারেনি। একটা সময়ে অবশ্য জনা কয়েক উৎসাহী যুবক আকাশবাণী ভবনের পাঁচিলে উঠে পড়েন। এমনকী, কেউ কেউ উঠে পড়েছিলেন রাস্তার ধারের গাছেও। নিরাপত্তার খাতিয়ে তাঁদের শেষমেশ নামিয়ে দেয় পুলিশ।
হঠাৎ অসুস্থ। স্টেডিয়ামের সামনে। —নিজস্ব চিত্র
নজরদারির ফাঁক গলে কেউ কেউ তা-ও ঢুকে পড়ে চলে গিয়েছিলেন ইন্ডোরের সামনে। আবার অনেকে সকাল থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। যদি কোনও ভাবে প্রবেশপত্র পাওয়া যায়, সেই আশায়।
পেশায় ইতিহাসের শিক্ষিকা, যাদবপুরের তাপসী পাল সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করছিলেন। “অমিতাভকে দেখব বলে টানা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোনও ভাবেই পাশ জোগাড় করতে পারলাম না,” বলেন তাপসী।
শাহরুখ খানের ভক্ত, হাওড়ার শিবপুরের রামকৃষ্ণ আদর্শ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাইনি গিয়াস বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন বেলা দেড়টা থেকে। তাঁর প্রশ্ন, “কেউ আমাদের পাশ জোগাড় করে দিতে পারেন না?” বেলুড়ের মায়া সামন্ত নিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সাত বছরের ছেলে সৌম্যব্রতকে। তাঁর কথায়, “তিন ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে। এ বার আমার ছেলে আমার উপর রেগে যাচ্ছে।”
উৎসাহী এই মানুষগুলোর জন্যই রাজ্য প্রশাসন মিলেনিয়াম পার্ক, ইডেন গার্ডেন্সের ৩ নম্বর গেটের গ্যালারির নীচে আর ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে জায়ান্ট স্ক্রিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল। বিকেল সাড়ে তিনটেয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের বলে যান, বাইরে ভিড় করে থাকা জনতার যেন জায়ান্ট স্ক্রিনে সম্প্রচার দেখার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা না-হয়। কিন্তু আর্টিস্ট ফোরাম-এর অভ্রদীপ্ত সিংহের কথায়, “দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে?”
সন্ধে সওয়া ৬টা নাগাদ ‘বিগ বি’-কে নিয়ে সিলভার গ্রে রঙের মার্সিডিজ বেন্জ হুস করে বেরিয়ে গেল। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের মুখে দাঁড়ানো বেহালার পারমিতা ঘোষ সঙ্গী অনিন্দ্য বসুকে বললেন, “বাড়ি চলো। ঈশ্বর দর্শন তো করে ফেললাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.