এ যেন আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীর ‘দুর্লভ’ ছবির সুলভ প্রাপ্তি। যা দেখে চোখ কপালে উঠে গিয়েছে বিশেষজ্ঞদেরও। ‘অবিশ্বাস্য’ মনে হলেও অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রমাণ আপনার চোখের সামনে হাজির যে। ৩০ পাউন্ড মূল্যের ক্যামেরায় তোলা পৃথিবীর স্পষ্ট ছবি সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে দেখিয়ে দেবেন ইংল্যান্ডের ওয়ারসেস্টারশায়ারের বাসিন্দা অ্যাডাম। অ্যাডাম কাডওয়ার্থ। না, তিনি কোনও মহাকাশ বিজ্ঞানী নন।
এমনকী এখনও পর্যন্ত প্রথাগত লেখাপড়াও শেষ করেননি বছর উনিশের এই যুবক। কিন্তু এই বয়সেই ‘হোম-মেড’ বেলুনের সঙ্গে উড়িয়ে দিয়েছিলেন নিজের সাধের ক্যামেরাটিকে। বৃহস্পতিবার সেই ক্যামেরায়ই ধরা পড়েছে পৃথিবীর ছবি। যে ছবি তুলতে নাসা বিপুল অর্থ ব্যয় করে তৈরি করে অত্যাধুনিক ক্যামেরা, সে ছবি ধরা পড়েছে একটি সাধারণ ‘সেকেণ্ড-হ্যান্ড’ ক্যামেরায়। অ্যাডামের দাবি, গোটা অভিযানটিতে খরচ হয়েছে সাকুল্যে ২০০ পাউন্ড। অবস্থা দেখেশুনে চক্ষু চড়কগাছ বিশেষজ্ঞদের। তবে যাঁর জন্য এত বিতর্ক, সেই অ্যাডাম কিন্তু এই ‘নজিরবিহীন’ সাফল্যে আশাতীত খুশি। বেশ প্রত্যয়ের সুরে জানিয়েও দিলেন ঠিক কী ভাবে এই ‘সাশ্রয়ী’ অভিযান পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
অ্যাডাম জানিয়েছেন বাড়িতেই একটি বিশেষ ধরনের বাক্স তৈরি করেন তিনি। যার মধ্যে ছিল রেডিও, মাইক্রোপ্রসেসর, এবং জিপিএস। একই সঙ্গে এই বাক্সের মধ্যেই রাখা ছিল অ্যাডামের ক্যামেরাটি। তবে পুরো অভিযানটির উপর নজরদারি চালাতে সঙ্গে একটি ভিডিও ক্যামেরাও লাগিয়ে দেন অ্যাডাম। এ ছাড়াও আরও কিছু টুকিটাকি ‘কাজের জিনিস’ দিয়ে তৈরি হয়েছিল বিদ্যুৎ-প্রতিরোধী ওই বিশেষ বাক্স। সেই বাক্সটিকেই প্রায় দু’মিটার লম্বা একটি ল্যাটেক্স বেলুন এবং একটি প্যারাশুটের সঙ্গে জুড়ে দেন তিনি। পুরো যন্ত্রটির একটি নামও দেন এইচএবিই ফাইভ। এর পরে শুরু হয় ওড়ানোর পালা। ক্যামেরাসুদ্ধ প্যারাশুট উড়তে উড়তে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৩,৫৯২ মিটার উপরে পৌঁছয়। সেখান থেকেই পৃথিবীর অদ্ভুত সুন্দর ছবি তোলে সে। সাশ্রয়ী অভিযানের আক্ষরিক অর্থেই ‘আকাশছোঁয়া’ সাফল্য আসে। ছবি তোলার পরে যখন পৃথিবীর মাটিতে আছড়ে পড়ে এইচএবিই ফাইভ, তখন বাক্সে থাকা রেডিও ট্রান্সমিটারের সাহায্যেই তাকে অক্ষত উদ্ধার করেন অ্যাডাম। উদ্ধার হয় পৃথিবীর সুলভ ছবি ও কিছু ভিডিও। অ্যাডাম জানাচ্ছেন, নিতান্ত খেলার ছলেই বিষয়টি পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। তবে পরীক্ষার ফলাফলে নিজেই অবাক। তাঁর সবচেয়ে বড় আনন্দ, “যে কাজ করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, তা মাত্র ২০০ পাউন্ড খরচেই এ বার করা সম্ভব হবে।” থ্রি-ইডিয়টস ছবিতে র্যাঞ্চো প্রশ্ন করেছিল, “মহাকাশে লেখার জন্য বিশেষ পেন না বানিয়ে বিজ্ঞানীরা কেন পেন্সিল ব্যবহার করলেন না? পেন্সিল তো অনেক বেশি সাশ্রয়ী।” প্রায় একই ধরনের প্রশ্ন তুলছেন অ্যাডামও।
নিরুত্তর র্যাঞ্চোর অধ্যাপক প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাবড় বিজ্ঞানীরাও অ্যাডামকে এড়ান কি না, সেটাই দেখার। |