সস্তা চলচ্চিত্রের নাটকীয় সংলাপকেও বোধহয় হার মানিয়ে দেবে এই চিঠি। যেখানে প্রথম ছত্রেই বাবাকে ‘গাধা’ বলে সম্বোধন করেছেন লেখক। শুনে শিউরে উঠবেন না। চমকের আরও বাকি। চিঠিটির লেখকের নাম চার্লস ডিকেন্স। আজ্ঞে হ্যাঁ, যে অলিভার টুইস্টের সঙ্গে আপনার বেড়ে ওঠা, তারই মানস পিতা ডিকেন্স নিজের বাবাকে ‘গাধা’ বলে সম্বোধন করেন। ১৩ নভেম্বর নিলামে উঠছে সে চিঠি।
শুনে হয়তো ডিকেন্স প্রেমীদের ভুরু কোঁচকাবে। কিন্তু যদি ১৭২ বছরের পুরনো সেই চিঠির প্রতিলিপি আপনার সামনে তুলে ধরা হয়, তা হলে আপনার অবিশ্বাস চলে যেতে বাধ্য। স্পষ্ট ভাষায় নিজের বাবাকে ‘গাধা’ বলেছেন তিনি। এবং একাংশের মতে, সেটাও অকারণে নয়। আসলে বিশেষজ্ঞদের দাবি, তাঁর অর্থলোভী বাবা জন ডিকেন্স ছেলের খ্যাতির ফায়দা নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ধার করতেন। শুধুমাত্র বিলাসব্যহুল জীবন কাটাতে এত টাকা ধার করে ফেলেছিলেন তিনি, যে তা মেটাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় ডিকেন্সকে। চরম বিরক্তি আর হতাশার জেরেই বাবাকে নিয়ে এ হেন মন্তব্য করেন তিনি। অন্তত তেমনটাই ধারণা একাংশের। এমনকী, কেউ কেউ বলেন, এই কারণেই বাবা-ছেলের সম্পর্কের এত অবনতি হয়েছিল যে ১৮৪০ সাল নাগাদ নিজের বাবা-মাকে ডিভনে পাঠিয়ে দেন ডিকেন্স।
তবে এর পরেও জন ঋণ নিয়ে যান। চার্লসও বাবার ঋণ পরিশোধ করতে থাকেন। ১৮৪২ সাল নাগাদ যখন ডিকেন্সের আইনজীবী তাঁকে বাবার ধার করা টাকা শোধ করার তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠান, অধৈর্য্য ডিকেন্স প্রত্যুত্তরে লিখেই ফেলেন, “আমার ধারণা, বাবা একটা আস্ত গাধা....”। একই সঙ্গে জানান, বাবার ধার শোধ করতে করতে তাঁর কাছে আর খুব অল্প অর্থই বাকি রয়েছে।
চিঠিটি সম্পর্কে ডিকেন্স-বিশেষজ্ঞ মাইকেল স্লেটারের মতও কিছুটা বাজার-চলতি ধারণার মতোই। তাঁর মতে, বাবার কারণে চার্লস ডিকেন্সকে ঠিক কতটা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল, সেটাই ফুটে উঠেছে চিঠিটিতে।
তবে বাবার সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরলেও ভাঙন ধরেনি। স্লেটারের দাবি, সৃষ্টির কাজে তাঁর এ হেন বাবাই অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ান পরে। বাবা-ছেলের সম্পর্কের ওই গোপন দলিল নিদেনপক্ষে ৩০০০ পাউন্ডে বিক্রি হবেই হবে, সে রকমই আশা করছেন নিলামের আয়োজকরা। |