নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত করা হল ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক গোবিন্দ রায়কে। বুধবার ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির সদস্যদের সভায় গোবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এর পরেই ব্যাঙ্কের তরফে গোবিন্দবাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। এদিনের অনাস্থা সভায় পরিচালন সমিতির ১১ জন সদস্যের মধ্যে পাঁচ জন উপস্থিত ছিলেন। সভার নিয়ম অনুয়ায়ী এক তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত থাকায় সভায় ‘কোরাম’ হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। সভা শুরু হয়। উপস্থিতদের মধ্যে চারজনই তৃণমূল এবং কংগ্রেসের সমর্থক বলে পরিচিত এবং একজন ইঞ্জিনিয়ারিং সমবায়ের প্রতিনিধি। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতিতে থাকা বামপন্থীরা কেউ এদিনের সভায় উপস্থিত হননি। ফলে গোবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়।
গত সেপ্টেম্বর মাসে গোবিন্দবাবু ও তাঁর স্ত্রী সবিতা দেবীর বিরুদ্ধে সরকারি আলু কেনার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। গোবিন্দবাবু জলপাইগুড়ি ছেড়ে চলে যান। পুলিশ তাঁদের খোঁজে দিল্লি ও কলকাতায় যায়। এই পরিস্থিতিতেই গোবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির তৃণমূল ও কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন সদস্যরা। গোবিন্দবাবুর আগাম জামিনের পরের আবেদনের শুনানি ১৯ নভেম্বর। এদিনের সভায় গোবিন্দবাবু উপস্থিত হতে পারেন ভেবে পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন। ব্যাঙ্কের কার্যনির্বাহী আধিকারিক শুভ্রদেব দাস বলেন, “সভায় কোরাম হয়েছে। সদস্যদের ভোটে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান অপসারিত হয়েছেন।” ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতিতে বামপন্থীদের সংখ্যা ছিল ৬, কংগ্রেস ও তৃণমূলের তিন জন প্রতিনিধি এবং বাকি দুজন সরকার এবং বিভিন্ন সমবায় সংস্থার মনোনীত প্রতিনিধি। সরকার পরিবর্তনের পরে সরকারি মনোনীত সদস্যের পরিবর্তন হয়। ফলে দু’পক্ষের সংখ্যা প্রায় সমান হয়ে যায়। ব্যাঙ্কে এক সময়ে গোবিন্দবাবুর ঘনিষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হেমেন সরকারও গোবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করায় সংখ্যার বিচারে অপসারণ আগেই নিশ্চিত হয়ে যায়।
এদিন অসুস্থতার কারণে ভোট দিতে যাননি হেমেনবাবু। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের মনোনীত প্রতিনিধি সিপিএমের সদর দক্ষিণ জোনাল কমিটির নেতা বাদল গুহও এদিন অনুপস্থিত ছিলেন। বাদলবাবু বলেন, “যাঁরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন, তাঁদের এক সদস্যের বিরুদ্ধে আমার পদ্ধতিগত আপত্তি ছিল। তিনি বৈধ সদস্য নন, বলে আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম। তবু সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না করায় ভোট দিতে যাইনি।”ব্যাঙ্কের সরকার মনোনীত প্রতিনিধি তথা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদেশ কার্যকরী সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “গোবিন্দ রায় নানা দুর্নীতিতে ব্যাঙ্ককে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। তাঁকে অপসারণ করে বলা যেতে পারে পরিচালন সমিতি প্রায়শ্চিত্ত করল। কোনও এক অজানা কারণে গোবিন্দ বাবুর অনুগামীরাও এদিন ভোট দেননি। যাই হোক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এদিন ন্যায়ের জয় হল।” ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মিহির সেনগুপ্ত বলেন, “অন্যায় ভাবে সভা ডাকা হয়েছে। সভার সব নিয়ম মানা হয়নি। আমরা হাইকোর্টে যাব।” |