সৌমিত্র কুন্ডু • শিলিগুড়ি |
এবার মাঠ-ঘাট, পুকুর সাজতেও সরকারি খরচে ত্রিফলা আলো! শিলিগুড়ির নৌকাঘাট মোড় থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ যাতায়াতের রাস্তায় গেলেই ওই দৃশ্যের দেখা মিলবে। প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ করে ওই কাওয়াখালি এলাকায় ওই আলো লাগাচ্ছে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ)। অথচ ওই এলাকায় আলো বসানোর ব্যাপারে এসজেডিএ-এর বোর্ড মিটিঙে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, শিলিগুড়িতে আগে বিস্তীর্ণ এলাকায় যে সংস্থাটি ত্রিফলা আলো বসিয়েছিল, তাদের দিয়েই আগের চেয়ে অনেক কম দরে একই কাজ করানো হচ্ছে। এসজেডিএ-এর সদস্যদের অনেকেই ওই ঘটনার আড়ালে লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। সদস্য তথা তৃণমূলের নেতাদের একাংশ বিষয়টি দলের প্রদেশ নেতাদের অনেককেই জানিয়েছেন। দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের অনেকেই জানান, কাওয়াখালিতে মাঠে-ঘাটে, পুকুরে ত্রিফলা আলো লাগানোর পরে লেনদেন সহ নানা অভিযোগ নিয়ে গোটা শিলিগুড়িতে চলছে নানা জল্পনা।
এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে তৃণমূলের কোনও নেতা কিংবা এসজেডিএ-এর সদস্য-সদস্যারা মুখ খুলতে চাননি। |
কাওয়াখালি এলাকা সাজাচ্ছে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি
উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
এসজেডিএ’র সদস্যদের অন্যতম শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, চেয়ারম্যান নান্টু পাল প্রায় একযোগে বলেছেন, “কাওয়াখালিতে ত্রিফলা আলো বসানো নিয়ে কিছু বলতে পারব না।” জলপাইগুড়ির তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি তথা এসজেডিএ সদস্য চন্দন ভৌমিক বলেন, “বাগডোগরার দিকে জাতীয় সড়কের দুধারে ত্রিফলা আলো লাগানোর বিষয়টি বোর্ড মিটিংয়ে অনুমোদিত হয়। তা বাতিল হয়েছে কি না জানি না। কাওয়াখালি এলাকায় আলো লাগানোর ব্যাপারেও কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” সম্প্রতি এসজেডিএ-এর টেন্ডার কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী জোৎস্না অগ্রবালও। কাওয়াখালিতে ত্রিফলা আলো বসানোর বিষয়ে জ্যোৎস্না দেবীর বক্তব্য, “মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।” এজেডিএ সূত্রের খবর, মাল্লাগুড়ি থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারে ওই আলো লাগাতে আড়াই মাস আগেই এসজেডিএ সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওই কাজের বরাত দেয় এমএস কোম্পানি নামে একটি সংস্থাকে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ওই আলো বসানোর অনুমতি দেয়নি। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, ওই সংস্থাটি ত্রিফলা আলো কাওয়াখালির নানা এলাকায় বসিয়ে দিচ্ছে।
এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অনুমতি না-মেলায় দার্জিলিং মোড় থেকে বাগডোগরার রাস্তায় ত্রিফলা আলো লাগানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেই কাজ করা যায়নি। ওই আলো কাওয়াখালির রাস্তায় লাগানো হচ্ছে। তৃতীয় মহানন্দা সেতু লাগোয়া এলাকায় মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি নালার জল শোধনের জন্য প্ল্যান্ট করা হচ্ছে। তার জন্য দুটি পুকুর করা হয়েছে। পুকুর ঘিরে পার্ক তৈরি করে এলাকা সাজিয়ে তোলার জন্য ত্রিফলা আলো লাগানো হচ্ছে। তবে বিস্তারিত কী ভাবে কী হচ্ছে নথিপত্র দেখেই বলতে হবে।” বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত না-নেওয়া হলেও অনেক কাজ শুরুর পরে অনুমোদন করানো হয় বলে দাবি করেছেন এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমার। এসজেডিএ সূত্রের খবর, আগে হিলকার্ট রোডের একাংশে, বিধান রোডে ত্রিফলা আলো লাগানোর কাজ করেছে এমএস কোম্পানি। জলপাইগুড়িতেও গোশালা মোড় থেকে বিডিও অফিস পর্যন্ত তারা ওই আলো লাগিয়েছে। ত্রিফলা আলো লাগানোর ক্ষেত্রে তাদের কাজের মান নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদেই ওই কোম্পানিকে একাধিক কাজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সংস্থার কর্ণধার সুব্রত দত্ত বলেন, “নিয়ম মেনে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েই কাজ পেয়েছি। এ ছাড়া আর কিছু বলার নেই।” ত্রিফলা আলো লাগানোর কাজ যারা করছেন তাদের মধ্যে তাঁদের কাজের মান সব চেয়ে ভাল বলে সুব্রতবাবু দাবি করেছেন।
কাওয়াখালি পোড়াঝাড় ভূমি রক্ষা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক যুগল সরকার এই দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “এখানে পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত আলো রয়েছে। পুনর্বাসন প্রকল্পের অন্যান্য সুযোগ না-দিয়ে ফের আলো লাগানোয় অনেক কথা হচ্ছে।” স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অধীর বর্মন বলেন, “সোডিয়াম ভেপার রয়েছে। তার পরেও আমাদের না-জানিয়ে আলো লাগানো হচ্ছে। কিছু বলার নেই।” |