গেরুয়া পাঞ্জাবি। সাদা ধুতি। গায়ে উত্তরীয়। কপালে তিলক। ভাবে গদগদ হয়ে সবে কীর্তন শুরু করতে যাচ্ছেন ‘মহারাজ’। হেন কালে তাঁকে জাপ্টে ধরল দর্শকাসনে বসে থাকা কিছু লোক। ভাবের ঘোরে না কি? অন্য শ্রেতারা ‘কী হল-কী হল’ করে উঠতেই জাপ্টে ধরা দলের ঘোষণা, ‘‘আমরা পুলিশ।” মঙ্গলবার রাতে উত্তরবঙ্গের ফালকাটার আড়াই মাইল এলাকার একটি কীর্তন-আসর থেকে এ ভাবেই ধরা হল উত্তর ২৪ পরগনার দাগী দুষ্কৃতী প্রভাস ঢালিকে।
কীর্তনের আসরে প্রভাসের কদর তার গানের গলা আর আবেগের জন্য। আর পুলিশের খাতায় তার নাম গোটা দশেক খুন, আরও নানা অপরাধে অভিযুক্ত হিসেবে। আলিপুরদুয়ারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশ্বচাঁদ ঠাকুর জানান, এ বার বছর পঁয়তাল্লিশের প্রভাসকে ধরা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের এক পরিবারের তিন জনকে খুনের মামলায়। পুলিশের দাবি, চলতি বছরের ১০ এপ্রিল বারাসাত থানার খামারপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত ঝামেলার জেরে বিনয় বিশ্বাস নামে এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর মা-বাবাকে খুন করে প্রভাস। বিনয়বাবুর স্ত্রী দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হলেও বেঁচে যান। গা-ঢাকা দেওয়া প্রভাস গত মাস চারেক ঘাঁটি গেড়েছিল আলিপুরদুয়ারের শালকুমার হাটে। বুধবার আলিপুরদুয়ার আদালতে পেশ করে প্রভাসকে ‘ট্রানজিট রিমান্ড’-এ আজ, বৃহস্পতিবার বারাসতে আনা হচ্ছে বলে জানান উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন। |
ধৃত প্রভাস ঢালি। নিজস্ব চিত্র |
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সাইকেল চুরি দিয়ে অপরাধ জগতে ‘হাতেখড়ি’। গাইঘাটার মানিকহিরা গ্রামের প্রভাস ঢালি এর পরে ভেড়ে সুটিয়া-গণধর্ষণ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী নামে এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীর দলে। পরে নিজেই দল গড়ে। লোকমুখে সে সময় তার নাম ‘মহারাজ’। ২০০০ নাগাদ নদিয়ার গাংনাপুর থেকে শুরু করে বনগাঁ, চাঁদপাড়া, ঠাকুরনগরে প্রভাসের ভয়ে কার্যত ‘বাঘে মোষে এক ঘাটে জল খেত’। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওর নেটওয়ার্ক ছিল চমকে দেওয়ার মতো।”
২০০২-এর জুনে মানিক-হিরা গ্রামের গোপাল মাঝিকে খুনের দায়ে ১০ বছর জেল হয় প্রভাসের। জেল থেকে বেরিয়ে গাইঘাটার পাশাপাশি বিরাটি, বাগুইআটি, বারাসতেও ডেরা বাঁধে প্রভাস। বারাসতের কেমিয়া খামারপাড়ায় সম্প্রতি জমি কেনাবেচার ব্যবসায় জড়ায়। অভিযোগ, জমি নিয়ে ঝামেলার জেরেই সে খুন করে বিনয় বিশ্বাস ও তাঁর পরিবারকে। পরে দেয় গা-ঢাকা। মোবাইল-টাওয়ারের সূত্রে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ জানতে পারে, প্রভাস উত্তরবঙ্গে। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার ডিএসপি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি দল প্রভাসকে ধরতে আলিপুরদুয়ারে পৌঁছয়। ওই দিনই ফালাকাটা থানার যোগেন্দ্রপুর গ্রামে কীর্তনের আসরে গাওয়ার কথা ছিল প্রভাসের। পুলিশ সেখানে দর্শক সেজে থাকায় ‘মহারাজ’ আর গান ধরার সময় পায়নি। |