একশো দিনের প্রকল্পে অন্তত ১৫ দিন কাউকে কাজ দিতে না-পারলে তাঁকে বেকার ভাতা দিতে হবে। এবং তা দিতে হবে রাজ্যের কোষাগার থেকেই। বিষয়টি রেগা-আইনে থাকলেও আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। কিন্তু কেন্দ্র এ বার জানিয়ে দিয়েছে, আর গড়িমসি চলবে না। দ্রুত এই সংক্রান্ত বিধি তৈরি করতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক।
রাজ্যের কাছে এই নির্দেশ কার্যত মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা। কারণ, কেন্দ্র পর্যাপ্ত টাকা না দেওয়ায় রাজ্যে প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ জব কার্ডধারীর মাত্র ৫০ লক্ষকে নিয়মিত কাজ দেওয়া যায়। এই নির্দেশ মানতে গেলে বাকি ৬০ লক্ষ কার্ডধারীকে বসিয়ে বেকার ভাতা দিতে হয়, আর তার জন্য কেন্দ্র এক পয়সাও দেবে না। মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার যোজনা (সংক্ষেপে ‘রেগা’) আইনের ৭(১) ধারায় বলা আছে, কোনও জব কার্ডধারীর লিখিত আবেদনের জবাবে ন্যূনতম ১৫ দিনের কাজ দেওয়া না-গেলে প্রথম এক মাস দৈনিক মজুরি (১৩৬ টাকা)-র এক চতুর্থাংশ, অর্থাৎ ৩৪ টাকা ভাতা হিসেবে দিতে হবে। তার পরেও কাজ দেওয়া না-গেলে দৈনিক মজুরির অর্ধেক, অর্থাৎ ৬৮ টাকা দিয়ে যেতে হবে। এই ভাবে চলবে ১০০ দিন।
কী ভাবে এই টাকা দেওয়া হবে, কত দিনের ব্যবধানে দেওয়া হবে, কোন খাত থেকে এই টাকা দিতে হবে সে সব ঠিক করতে নিয়মবিধি তৈরির দায়িত্ব রাজ্যের। ২০০৫ সাল থেকে রেগা প্রকল্প শুরু হলেও এ পর্যন্ত ভাতা দেওয়ার নিয়মবিধি তৈরি করেনি রাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকার এ বার সময়সীমা বেঁধে দিল। রেগা-আইনে বলা আছে, কেন্দ্রের পাঠানো টাকা কেটে বেকার ভাতা দেওয়া যাবে না। রাজ্যের কোষাগার থেকেই তা দিতে হবে।এ নিয়ে নিয়মবিধি তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এর জন্য রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরকে আলাদা বাজেটও তৈরি করে দিল্লিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। ১১ অক্টোবর দিল্লির কৃষি ভবনে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব এস বিজয়কুমারের নেতৃত্বে ‘এমপাওয়ার্ড কমিটি’ বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নেয়।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য, এ রাজ্যে বৈধ জব কার্ডধারীদের সবাইকে কাজ দিতে গেলে যত টাকা লাগে, কেন্দ্র তা কোনও দিনই দেয়নি। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কথায়, কেন্দ্র চায় এ রাজ্যের ৩৪৪টি ব্লকের ১ কোটি ১০ লক্ষ জব কার্ডধারীর সকলেই বছরে ১০০ দিন কাজ পান। তৈরি হোক ১১০ কোটি কর্মদিবস। তার জন্য মজুরি বাবদ লাগবে ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। অথচ ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের সাত মাস কেটে গেলেও এ পর্যন্ত কেন্দ্র দিয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, যা প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ১৩.৭২ শতাংশ। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্র এই প্রকল্পে প্রতিটি রাজ্যের জন্য যে বার্ষিক বাজেট তৈরি করে, সেটাই তো ভীষণ কম। দেশের সব মানুষের কথা ভেবে যদি সরকারের সাধারণ বাজেট তৈরি হয়, তবে সব রাজ্যের জব কার্ডধারীর সংখ্যা ধরে কেন রেগা প্রকল্পের বাজেট করা হবে না?” রাজ্যের পঞ্চায়েত আধিকারিকদের বক্তব্য, রেগা-র প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্রের কাছ থেকে কখনওই পাওয়া যায়নি। বাম আমলেও নয়, এখনও নয়। এখন রেগা আইন মানার নামে রাজ্যের ঘাড়ে বেকার ভাতার বোঝা চাপানো হচ্ছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সবাইকে কাজ দেওয়া, বসিয়ে বেকার ভাতা দেওয়া নয়।” |