|
|
|
|
আহত দুই পুলিশকর্মীও |
সিপিএমের বিক্ষোভ থেকে রণক্ষেত্র থানা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দলীয় কর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে থানায় বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়লেন সিপিএম কর্মী সমর্থকেরা। অভিযোগ, জখম হয়েছেন দুই পুলিশকর্মীও। বুধবার দুপুরে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানা চত্বরের ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “একটা গোলমাল হয়েছে। ঠিক কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখেই পদক্ষেপ করা হবে।” সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য পুলিশকর্মীদের মারধরের কথা মানতে নারাজ। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয় পাল বলেন, “এমন ঘটনার কথা জানা নেই। এলাকার মানুষ কী দিয়ে মারধর করবে?” তাঁর অভিযোগ, “পুলিশই বরং একের পর এক মিথ্যে মামলায় দলীয় কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার করছে।”
|
|
মার খাচ্ছেন পুলিশকর্মী (বাঁ দিকে), কোতোয়ালি চত্বরে চলছে বিক্ষোভ। ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল।
|
গত শুক্রবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের আয়ুব খান নামে এক সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুুলিশের দাবি, আয়ুব খানের বাড়ি থেকে দেশি বন্দুক মিলেছে। আদালতের নির্দেশে আয়ুব এখন জেল হেফাজতে। তাঁকে গ্রেফতারের প্রতিবাদেই এ দিন থানায় বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম কর্মী সমর্থকেরা। বেনাডিহি, রানিপাটনা প্রভৃতি এলাকা থেকে দলের লোকজন গাড়িতে করে মেদিনীপুরে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। কোতোয়ালি থানার সামনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। একটি ফটক পেরিয়েই এই ফাঁকা জায়গায় ঢুকতে হয়। সাধারণত, বিক্ষোভ- কর্মসূচীর সময় ফটকটি বন্ধ থাকে। থানার বাইরেই বিক্ষোভ- কর্মসূচী হয়।
কিন্তু এ দিন ফটকটি খোলা ছিল। সেই সুযোগে থানা চত্বরে ঢুকে পড়েন সিপিএম কর্মী সমর্থকেরা। সামনে ছিলেন মহিলারা। ফলে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকেও। দলীয় কর্মীরা দাবি তোলেন, জেলার কোনও পদস্থ পুলিশ আধিকারিককে এসে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাঁদের একাংশ জোর করে থানায় ঢোকার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ। গোলমাল চলাকালীন পুলিশ বাধা দিতে গেলে সন্ন্যাসী আড়ি ও বলাই পান নামে দুই পুলিশ কর্মী প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। |
|
আহত পুলিশকর্মী সন্ন্যাসী আড়ি (বাঁ দিকে) ও বলাই পান। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
জখম অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থ করা হয়। বলাইবাবু কনস্টেবল। সন্ন্যাসীবাবু হোমগার্ড।
সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ মূলত দু’জনের বিরুদ্ধে। কোতয়ালি থানার আইসি জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল বিধায়কের কথায় আইসি মিথ্যে মামলা সাজিয়েছেন। স্থানীয় সিপিএম কর্মী গৌর মাইতি বলেন, “১ নভেম্বর রাতে পুলিশ ওই কর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে আনে। ২ তারিখের বদলে ৩ তারিখ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।” তাঁর অভিযোগ, “ওই কর্মীর কাছ থেকে কিছুই মেলেনি। তবুও পুলিশ বন্দুক উদ্ধারের গল্প তৈরি করেছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয় পালও বলেন, “জেলে আটকে রাখতেই মিথ্যে মামলা সাজানো হয়েছে। তৃণমূল বিধায়কের কথায় আইসি এ কাজ করেছেন।” আইসি’র অপসারণের দাবিও তুলেছেন তাঁরা।
তবে মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক মৃগেনবাবু পাল্টা বলেন, “এক সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করার কথা শুনেছি। তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। পুলিশ পুলিশের কাজ করেছে। এ নিয়ে আমার সঙ্গে কারও কথা হয়নি।” একই বক্তব্য পুলিশেরও। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত আয়ুবের বাড়ি থেকে দেশি বন্দুক মিলেছে। নির্দিষ্ট অভিযোগেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচীর নামে যে ভাবে থানা চত্বরে ঢুকে পুলিশ কর্মীদের মারধর করা হয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয় বলেও দাবি পুলিশের।
দীর্ঘক্ষন ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচী চলায় থানায় পৌঁছন ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) মনোজিৎ সমাদ্দার। সিপিএম এবং পুলিশ উভয় পক্ষ থেকেই তাঁর কাছে অভিযোগ জানানো হয়। আলোচনার পর ডিএসপি’র কাছে লিখিত অভিযোগপত্রও জমা দেন সিপিএম নেতৃত্ব। পরে অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস পেয়ে থানা চত্বর ছাড়েন দলীয় কর্মী সমর্থকেরা। |
|
|
|
|
|