গরুমারায় গন্ডার গুনল অসমের দল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি ও ফালাকাটা |
বিষ্ঠা পরীক্ষার মাধ্যমে গণ্ডারসুমারি হল গরুমারার জঙ্গলে। এই প্রথম দেশের মধ্যে কোনও বনাঞ্চলে ওই পদ্ধতিতে গন্ডার গণনা হল। চলতি বছরে প্রথাগত পদ্ধতিতে দেখা গিয়েছে, গরুমারায় ৪২টি গণ্ডার রয়েছে। বিষ্ঠা পরীক্ষার পর অসমের বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন, গরুমারায় গন্ডারের সংখ্যা ৪৩। বিষ্ঠার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাণিসুমারির চল এদেশে নতুন। ২০১০ সালে বক্সার জঙ্গলে বাঘের বিষ্ঠা সংগ্রহ করে অসমের ‘আরণ্যক’ সংস্থার পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পূর্ব ভারতে এ ধরনের পরীক্ষাগার আর নেই। বন্য প্রাণীদের বিষ্ঠা নিয়ে গবেষণা চালানো রসায়নবিদ ও বিশেষজ্ঞ উদয়ন বরঠাকুর জানান, অন্তত ১৫ বাঘ রয়েছে সেখানে। এশিয়ার একশৃঙ্গী গন্ডারের সংখ্যা, বংশধারা ও চারণ চরিত্র গবেষণা করতে বিশেষ একটি প্রকল্প হাতে নেয় ‘ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশন’ ও আরণ্যক। উদয়নবাবু ছাড়াও সামিল হন বিভাব তালুকদার, বিনোইন গুসেন্স, টেরি রথ ও মনিকা স্টুপস-এর মতো বিশেষজ্ঞরা। বিষ্ঠা থেকে ডিএনএ বের করে লিঙ্গ নির্ধারণ, বংশধারা, চারণ এলাকা নির্ণয় করার পদ্ধতি বের করেন তাঁরা। গত বছর হায়দরাবাদের ‘সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির’ পরীক্ষাগারে বক্সার বাঘের বিষ্ঠা পরীক্ষার পর জানা যায়, সেখানে ২০টি বাঘ রয়েছে। ১৬ টি পুরুষ ও চারটি স্ত্রী।একশৃঙ্গি গন্ডারের বিচরণ ক্ষেত্র বলে খ্যাত জলদাপাড়ায় ২টি বাঘ থাকার প্রমাণ মেলে। গত বছর গরুমারা থেকে গন্ডারের ৬০ টুকরো বিষ্ঠা সংগ্রহ করে অসমের ওয়াইল্ড লাইফ জেনেটিক্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। উদয়নবাবু বলেন, উচ্চ ‘পলি মরফিক মাইক্র স্যাটেলাইট মার্কার’ দিয়ে প্রতিটি মলকে চিহ্নিত করা হয়। ‘সেক্স ক্রোমোজোম মার্কার’ দিয়ে বিষ্ঠার লিঙ্গ নির্ধারণ হয়। মলের মধ্যে গ্যাসট্রো ইনটেসটানাল পেশি তন্তু ও কোষ থাকে সেখান থেকে ডিএনএ মেলে। বিষ্ঠা যত টাটকা হয়, তত ভাল।” তিনি বলেন, “ওই জঙ্গলে পুরুষ ও স্ত্রী গন্ডারের আনুপাতিক হার ৪:১। অসমের কাজিরাঙাতে অবশ্য আনুপাতিক হার প্রায় সমান-সমান। উদয়নবাবু বলেন, “চোখে দেখে গণনার সময় লম্বা ঘাসের আড়ালে থাকা গন্ডারের লিঙ্গ নির্ধারণ করাটা সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে বিষ্ঠাই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।” এশিয়ান রাইনো স্পেশালিষ্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান বিভাব তালুকদার জানান, গরুমারায় স্ত্রী গন্ডারের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি হওয়াটা উদ্বেগজনক। গরুমারা ও জলদাপাড়া মিলিয়ে গন্ডারের জিনগত বৈশিষ্ট্য পরীক্ষার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বিভাববাবুরা। উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও আর্থিক কারণে পরে গরুমারা কিংবা জলদাপাড়ায় এ ধরণের সমীক্ষা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন রাজ্যের বন দফতরের প্রধান বনপাল সীতাংশুশেখর মণ্ডল। তাঁর কথায়, “ওই সংস্থা নিজেদের খরচে ওই পরীক্ষা করিয়েছেন। প্রথাগত গন্ডারসুমারিতে খরচ কম। গণনা সঠিক হয়। বিষ্ঠা পরীক্ষায় বড় খরচ পড়ে যাবে। এখনই তা ভাবতে পারছি না।” বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনও ওই সংস্থার প্রস্তাব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। তাঁর বক্তব্য, “বেসরকারি ভাবে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা গণনার জন্য আমরা খরচ করি না। তা নিয়ে কে কী বললেন সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না।” অথচ বন দফতর সূত্রের খবর, ফি বছর সঙ্গিনীর দখল নিয়ে গরুমারায় গন্ডারদের মধ্যে লড়াই হয়। এতে প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। আনুপাতিক হার সমান হলে ওই সমস্যা দূর হবে বলে বন দফতরের অনেকেই মনে করেন। সে জন্য পশ্চিমবঙ্গের বন বিভাগ স্ত্রী গন্ডার পেতে অসমের শরণাপন্ন হয়েছে। সেখানে গন্ডারের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। তবে অসমের প্রধান মুখ্য বনপাল সুরেশ চাঁদ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়ার মত স্ত্রী গন্ডার আমাদের হাতে নেই।” |