নাগরিকদের উদ্যোগে বন্ধ হল পুকুর বোজানো
হরের মাঝখানে ইন্দিরা পল্লির লাগোয়া একটি পুকুরে মাটি ফেলা হচ্ছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। ওই পুকুরের আশপাশে অনেক বাড়ি। রয়েছে যাতায়াতের রাস্তাও। তাই তা নজরে পড়েছিল সকলেরই। কিন্তু কেউই বুঝতে পারছিলেন না, কে ওই পুকুর বোজানোর হোতা। তখন পুকুর ঘিরে যাঁদের বাড়ি, তাঁদেরই কেউ কেউ প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। মহকুমাশাসক সঙ্গে সঙ্গে সে কথা জানান পুরসভাকে। পুরসভাও সময় নষ্ট করেনি। তারা উদ্যোগী হয়ে মাটি ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত বেঁচেই গিয়েছে ওই জলাশয়টি।
পুকুরের পাশেই বাড়ি অর্ধেন্দু দাসের। তিনি বলেন, “এ যাত্রা বেঁচে গেলাম। পুকুরটা ভরাট হয়ে গেলে গোটা এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেত।” রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের বিডিও বুদ্ধদেব দাস বলেন, “পুকুরটির যেটুকু অংশ ভরাট করা হয়েছে, সেখান থেকে মাটি তুলে ফেলতে হবে মালিককেই।”
ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
বিডিও বুদ্ধদেববাবু বলেন, “৭৭ শতকের ওই পুকুরটি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে নথিভুক্ত রয়েছে বামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। তিনি মারা গিয়েছেন। তাই তাঁর পুত্রকেই শো কজ করা হয়েছে।” বামাচরণবাবুর ছেলের এখন শহরে নেই। তাঁর পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, বিক্রি করে দেওয়া পুকুর ভরাটের দায়িত্ব যিনি কিনেছেন, তাঁরই।” জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “যতদূর মনে হচ্ছে, ওই পুকুরটি ভরাট করে বাড়ি বানানোর কথাই চেষ্টা হচ্ছিল। সরকারি রেকর্ডে ওই পুকুরের মালিক বলে যাঁর কথা লেখা রয়েছে তিনি প্রয়াত। তাঁর ছেলে পুকুরটি বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু কে সেই পুকুর কিনেছেন, তা জানা যায়নি। তবে সেই ক্রেতাই যে পুকুরটি ভরাট করার চেষ্টা করছিলেন, তা মনে হচ্ছে। পুরসভার তরফে ইতিমধ্যেই বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।”
ওই পুকুরে কেউ স্নান করেন না। বাসন মাজার মতো কাজই হয়। কিন্তু পুকুরের গুরুত্ব তার থেকে অনেক বেশি। অর্ধেন্দুবাবু বলেন, “পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে জলাশয়কে বাঁচিয়ে রাখা দরকার।” শহরের বাসিন্দা প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক কাশীনাথ ভকত বলেন, “শহর যত বেড়েছে, জলাশয় ততই নষ্ট করা হয়েছে।” তিনি জানান, চল্লিশ বছর আগে যখন তিনি শহরে এসেছিলেন, তখন অন্তত ৭৫টিরও বেশি ছোট বড় পুকুর ছিল। তিনি বলেন, “তার অর্ধেকই বুজিয়ে দিয়ে বাড়ি করা হয়েছে।” কিন্তু পুকুর না বুজিয়ে পাশে জমি কিনে বাড়ি করা কী যেত না? কাশীনাথবাবু বলেন, “আসলে শহরের লোক থাকতে চান শহরের কেন্দ্রের কাছাকাছি। শহরের দূরে জমি কিনে বাড়ি করতে আগ্রহী নন কেউই। সেক্ষেত্রে পুকুর বুজিয়ে জমি পেয়ে তাতে বাড়ি করলে জমির দাম যেমন শস্তা পড়ে, তেমনই শহরের মাঝখানেও থাকা যায়। এ বার শহর যত ছড়িয়েছে, ততই ওই সব পুকুরের উপরে কোপ পড়েছে।” তার সঙ্গে রয়েছে ইটভাটার দাপট। খড়খড়ির মতো জলাশয় চুরি হয়ে গিয়েছে ইটভাটার জন্য। প্রশাসন এতদিন কিছুই দেখেনি। তিনি বলেন, “পুকুর চুরি কথাটা যে সত্যিই ঘটে তা আমরা দিনের পর দিন চোখের উপরেই দেখেছি।”
তবে এখন এলাকার লোকজনই জলাশয় বোজানোর চেষ্টা হলে আপত্তি তোলেন।
ওই এলাকারই বাসিন্দা সিপিএমের অম্বুজাপদ রাহা বলেন, “আমাদের বাড়ির পাশের একটি পুকুরও বোজানোর চেষ্টা হচ্ছিল মাস চারেক আগে। সেই সময়েও পুরসভাকে জানানো হয়। কিন্তু জলাশয় বোজানোর ব্যাপারে প্রশাসন ও পুরসভার যে উদ্যোগ দরকার, তা সব সময়ে থাকে না। তা ছাড়া, বহু জলাশয় নোংরা আবর্জনায় ভরে থাকে। তাতেও পরিবেশের খারাপ হয়।” কিছু দূরেই সব্জি বাজারের পাশে দু’টি পুকুর রয়েছে, দু’টিই খুব খারাপ অবস্থায়। সেই নোংরা আবর্জনা পরিষ্কারের গরজ নেই মালিকের। স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর বিকাশ নন্দ বলেন, “এই সব জলাশয়ের নোংরা পরিষ্কারের জন্য বহু বার পুরসভাকে বলা হয়েছে। এলাকার যত নিকাশি নালার জল গিয়ে পড়ছে ওই পুকুরে। কচুরিপানাও রয়েছে। তাই মশাও বাড়ছে।” স্থানীয় বাসিন্দা সরকারি আইনজীবী অশোর সাহা বলেন, “জলাশয় ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য সাজা ও জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে।”
পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “জলাশয় পরিষ্কার রাখা ও বাঁচিয়ে রাখা দু’টি ব্যাপারেই আমরা সজাগ রয়েছি। একটু তৎপরতা অবশ্য দরকার।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.