ডাম্পা অভয়ারণ্য
জঙ্গলে সীমান্ত-বেড়ার বিরোধিতা
ন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষার স্বার্থে ব্যাঘ্র প্রকল্পকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব নাকচ করে দিল মিজোরাম সরকার। রাজ্যের ডাম্পা ব্যাঘ্র প্রকল্পটি বাংলাদেশের ভূমিতেও বিস্তৃত। অরক্ষিত এই সীমান্তে জঙ্গি ও চোরাকারবারিদের গতিবিধি বিএসএফ-এর চিন্তা বাড়াচ্ছে। তবে তা সত্ত্বেও বন্যপ্রাণীদের প্রাকৃতিক চারণভূমিকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব মেনে নিচ্ছে না মিজোরাম বন দফতর। জাতীয় বন্যপ্রাণী বোর্ড বিষয়টি নিয়ে এগোবার আগে রাজ্য সরকারের মতামত চেয়েছিল। আইজলে বৈঠকের পরে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে বেড়া বসানোর জন্য প্রাণীদের চারণভূমির ব্যাঘাত ঘটানো চলবে না।
ডাম্পা মিজোরামের বৃহত্তম অভয়ারণ্য। বাংলাদেশ ঘেঁষা, মামিট জেলার এই অভয়ারণ্যটি ১৯৪৪ সালে টাইগার রিজার্ভ-এর তালিকায় ওঠে। ১৯৮৫ সালে অভয়ারণ্যের তালিকায় ডাম্পার নাম নথিভুক্ত হয়। ২০০ থেকে ৮০০ মিটার উচ্চতা অবধি বিস্তৃত, ৫৫০ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অভয়ারণ্যে বাঘ ছাড়াও চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘ, হাতি, গৌর, সেরো, বার্কিং ডিয়ার, ভালুক, বুনো কুকুর, পাহাড়ি কচ্ছপ, শ্লথ, স্লো লরিস, বিন্টুরং, পাতা বাঁদর, পিগটেল ম্যাকাক, বৃহৎ কাঠবিড়ালি, সজারু, প্যাঙ্গোলিন, উলুক-সহ বিভিন্ন প্রাণীর বাস। এই বছর ডাম্পায় যে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তাতে বাঘের পায়ের ছাপ ও বিষ্ঠার নমুনা থেকে ৯টি বাঘ থাকার প্রমাণও মিলেছে।
ডাম্পার ফিল্ড ডিরেক্টর লানা জাথাং জানান, দুর্গম ডাম্পার বহু এলাকাই এখনও অজানা। কেবলমাত্র উত্তর অংশে ক্যামেরা ট্র্যাপিং হয়েছে। দক্ষিণের কাজ এখনও বাকি। মিজোরাম-বাংলাদেশের ৩১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের ৮০ কিলোমিটারই ডাম্পার মধ্যে। সে ক্ষেত্রে বাঘেদের বাংলাদেশের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। কেবল বাঘই নয়, অন্য সব প্রাণীই ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গলে ঘোরাফেরা করে। এই পরিস্থিতিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বেড়া বসাবার প্রস্তাব ২০০৭ সাল থেকে ঝুলে রয়েছে। মিজোরাম বন দফতরের যুক্তি, বাঘ বা অন্য প্রাণীদের স্বাভাবিক চারণভূমি দুই দেশের অরণ্য জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। রাজনৈতিক কারণে তাদের প্রাকৃতিক চলাচলের পথে বেড়া বসালে তা শেষ পর্যন্ত প্রাণী-অধিকারের পরিপন্থী হবে। বিষয়টি নিয়ে, ইতিমধ্যেই চার বার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দাখিল করেছে মিজোরাম সরকার।
কিন্তু জঙ্গি ও চোরাচালানকারীদের রুখতে, বিএসএফ-এর তরফে সম্প্রতি চাপ বাড়ানো হয়েছে। তাদের দাবি, অরণ্যের ১৫২০ হেক্টর জমিতে বেড়া বসানো প্রয়োজন। কেবল বেড়াই নয়, সীমান্ত টহলের জন্য ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সড়কও তৈরি করতে হবে। দিল্লিতে, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজন ও বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ অরণ্য ভাগ করে বেড়া বসাবার তীব্র বিরোধিতা করেছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, অনুপ্রবেশ রুখতে এই এলাকায় তিন সারির কাঁটাতারের বেড়া, লাগোয়া সড়ক ও অন্তত সাতটি সীমান্ত চৌকি বসানো আশু প্রয়োজন। নটরাজন জানান, এক দিকে দেশের নিরাপত্তা, অন্য দিকে প্রাণীস্বার্থের দাবি। চাপে পড়ে ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ নিমরাজি হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, প্রস্তাবটি মিজোরাম সরকারের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।
মিজো সরকারের উত্তর, ডাম্পার ব্যাঘ্র প্রকল্প ব্যবহার করে অনুপ্রবেশ বা চোরা কারবার চলার কোনও নির্দিষ্ট তথ্য বা প্রমাণ বিএসএফ দেখাতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ৩৩ জন জওয়ান-সহ এক একটি সীমান্ত ছাউনি অরণ্য পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করবে। জাথাং বলেন, “রাজ্য ডাম্পার মধ্য দিয়ে বেড়া বসানোর বিরোধী। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বেড়া না বসানোই ভাল।” বাঘ বিশেষজ্ঞ রঞ্জিৎ সিংহ ও রাজেশ গোপালেরও তাই মত। কিন্তু বিএসএফ-এর বক্তব্য, আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী কাঁটাতারের ভিতর দিকেই রাস্তা তৈরি করতে হবে। সব মিলিয়ে, বল ফের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও বন মন্ত্রকের কোর্টেই ফেরত পাঠিয়েছে মিজো সরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.