বেনিয়মে থাকছে জরিমানাও
আতঙ্ক কাটাতে কমানো হচ্ছে
মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ
স্ট্র্যান্ড রোডে ঋষভ অগ্রবালের অফিসের ছাদে মোবাইল ফোনের একটি টাওয়ার রয়েছে। তাঁর ধারণা, সেই টাওয়ারের বিকিরণের ফলে তাঁর নানা রকমের সমস্যা হচ্ছে। ঋষভ অভিযোগ জানিয়েছেন টেলিকম দফতরে।
একই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার পঞ্চসায়রের পাশের কলোনিতে। এখানে পাশাপাশি তিনটি টাওয়ার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, টাওয়ার থেকে নির্গত তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ থেকে ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে তাঁদের। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পুরসভা, মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত ছুটেছেন তাঁরা। ওই এলাকার বাসিন্দা জ্যোতিশঙ্কর ভৌমিক জানান, এখনও টাওয়ারগুলি চালু রয়েছে এবং তাঁদের আতঙ্কও কাটেনি।
শুধু এই দু’টো ঘটনাই নয়, বিভিন্ন জনবহুল এলাকা থেকে এ রকমের নানা অভিযোগ জমা পড়ছিল টেলিকম দফতরের কাছে। তার পরেই সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটাতে এবং বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে মোবাইল টাওয়ার থেকে বিকিরণের মাত্রা এ বার প্রতি বর্গ মিটারে ৪ ওয়াট থেকে কমিয়ে ০.৪ ওয়াট করতে বলেছে টেলিকম দফতর। কলকাতায় ২৬ অক্টোবর দফতরের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সমস্ত মোবাইল পরিষেবা সংস্থাকে ডেকে ওই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশ কার্যকর করবে টেলিকম এনফোর্সমেন্ট রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং (টার্ম) সেল। টেলিকম দফতর জানিয়েছে, কোনও টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা ০.৪ ওয়াটের বেশি থাকলে বন্ধ করে দেওয়া হবে সেই টাওয়ার। সে ক্ষেত্রে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে পরিষেবা সংস্থার।
বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি-র গবেষণার রিপোর্ট জানিয়েছে, টাওয়ারের মাত্রাতিরিক্ত বিকিরণ জীবজগতের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অভিযোগ, বিকিরণের জেরে পশু-পাখি-পতঙ্গদের আচরণ বদলে যাচ্ছে। দ্রুত কমছে তাদের সংখ্যাও। নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে চড়াই পাখির বাসা, মৌমাছির চাক। কমছে শালিক, টুনটুনি, বুলবুলি, ময়না, টিয়ার সংখ্যা। কিন্তু এ রাজ্যে সরাসরি মানবদেহে বিকিরণের প্রভাব এখনও পরিলক্ষিত হয়নি বলেই বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।
কতটা বিপদ ডেকে আনছে এই বিকিরণ? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিও ফিজিক্স ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক দেবতোষ গুহ জানান, একটি মোবাইল টাওয়ারের তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের মাত্রা ঠিক কতটা হওয়া উচিত, তার বিজ্ঞানভিত্তিক মাপকাঠি এখনও তৈরি হয়নি। তাঁর কথায়, “গ্রামের খোলা মাঠে টাওয়ারের বিকিরণ আর শহরে জনবহুল এলাকায় বিকিরণের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। শহরের জনসংখ্যা, টাওয়ারের উচ্চতা, অ্যান্টেনার অভিমুখের উপরেও নির্ভর করবে সেই মাত্রা।” সেই বিকিরণ মানবদেহে প্রভাব ফেলছে, এমনটাও মানতে চাননি দেবতোষবাবু।
রাজ্যে মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা
২৮,০০০
কলকাতায় টাওয়ারের সংখ্যা
১৪,০০০
তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল:
৪ ওয়াট/বর্গ মিটার
বিকিরণের মাত্রা কমিয়ে করা হল
০.৪ ওয়াট/বর্গ মিটার
এ ব্যাপারে চিকিৎসকরা কী বলছেন? ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে। রান্নাঘরে যে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করা হয়, তারও প্রভাব রয়েছে। তবে দু-এক বছর নয়, একটানা দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে এর প্রভাব বোঝা যাবে।” বিকিরণের মাত্রা বেঁধে দেওয়ায় সেই প্রভাব কমতে বাধ্য বলেও মনে করেন তিনি।
একই মত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সৈকত গুপ্তের। তাঁর কথায়, “এখনও মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণের প্রভাবে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এমন প্রমাণ আমার হাতে নেই। সবে ১৫-২০ বছর আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি। প্রভাব পড়েছে কি না, তা বুঝতে আরও ৩০-৪০ বছর দেখতে হবে।”
শুধু ক্যানসার নয়, মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ থেকে স্মৃতিভ্রংশের মতো রোগও নাকি দেখা দিচ্ছে! যদিও স্নায়ু-রোগ বিশেষজ্ঞ জি আর বিজয়কুমারের কথায়, “এখনও কোনও প্রত্যক্ষ প্রমান মেলেনি।” একই মত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু গোস্বামীরও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা কমালে ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে। টার্ম সেল-এর ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (ডিডিজি) অতনু ঘোষও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আরও বেশি টাওয়ার বসাতে হবে বলে তাঁর দাবি। ভোডাফোন, এয়ারটেল, এয়ারসেল-এর মতো বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থা সেলুলার অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া-র সদস্য। সেই অ্যাসোসিয়েশনের ডিজি রাজেন ম্যাথিউ বলেন, “ভারতের প্রায় ৯৫ শতাংশ টাওয়ারেরই বিকিরণের মাত্রা ০.৪ ওয়াটের কম। জনবহুল এলাকার কিছু টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা হয়তো বেশি। সেগুলি কমাতে হলে নতুন টাওয়ার বসাতে হবে। খরচ বাড়বে পরিষেবা সংস্থাগুলির।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.