ফি বছরের দস্তুর, বর্ষা আসার আগে তড়িঘড়ি সারানো হয় নদীবাঁধ। প্রবল বৃষ্টির তোড়ে বলাইবাহুল্য বাঁধ ভেঙে প্রায় প্রতি বছরই বন্যায় ভাসে আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। নিন্দুকেরা বলে, বাঁধ সারাইয়ের টাকা জলে ফেলাই বুঝি সরকারের উদ্দেশ্য। এতে শুধু ঠিকাদারদেরই পকেট ভরে। কাজের কাজ হয় না কিছুই। এ ভাবেই রাজ্যের বন্যার মানচিত্রে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে হুগলি জেলার এই প্রান্ত।
এ বছর সেই দস্তুর পাল্টাতে চায় আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন। আগামী বছর বর্ষা আসার আগেই বাঁধ সারানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। নভেম্বর মাসের শেষ থেকেই নদীবাঁধ সংস্কার হবে বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। ১৪ নভেম্বরের মধ্যে মহকুমার নদীগুলির বাঁধের দুর্বল এবং ভাঙা জায়গাগুলি চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন এবং সেচ দফতরকে প্রকল্প জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়। সেচ দফতর ১১টি জায়গা চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই প্রকল্প জমা দিয়েছে। অরিন্দমবাবু বলেন, “বাঁধের ভাঙনের চরিত্র অনুযায়ী কোথায় কী ভাবে সংস্কারের কাজ হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। কোথাও সরাসরি একশো দিনের প্রকল্পে বাঁধ সংস্কার হবে। আবার গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় সেচ দফতরের সঙ্গে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মেলবন্ধনে কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, ভেটিভার ঘাস রোপণ করে খানাকুলের বালিপুর, উদনা এলাকার বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে সাফল্য মিলেছে। আরও কিছু জায়গায় ভেটিভার রোপণ হবে। এতে আর্থিক সাশ্রয়ও হবে প্রচুর। |
চারটি নদী বয়ে গিয়েছে মহকুমার ৬টি ব্লকের মধ্যে দিয়ে। নদীগুলি হল, দামোদর, মুন্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর এবং রূপনারায়ণ। এ ছাড়াও আছে বেশ কিছু খাল। যেমন আমোদর, হরিণাখালি, তারাজুলি, সিঙ্গার, কানা দ্বারকেশ্বর, হরহরা, রামপুর প্রভৃতি। বর্ষায় ডিভিসি, মাইথন, পাঞ্চেত এবং কংসাবতী ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে প্রতি বছর বন্যাপ্লাবিত হয় এই মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত। ভৌগোলিক ভাবেই মহকুমার অবস্থান বন্যাপ্রবণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। মহকুমার ৬টি ব্লক খানাকুল ১ ও ২, পুড়শুড়া, আরামবাগ এবং গোঘাট ১ ও ২-এর মোট ৬৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৩টি পঞ্চায়েত এলাকাই বন্যা কবলিত হয়। এমনকী, আরামবাগ পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টি জলমগ্ন হয়।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রতি বছর নিয়ম করে বর্ষা আসার ঠিক আগে বাঁধ মেরামতের কাজ হয়। সদ্য অশক্ত বাঁধ সামান্য জলের তোড়েই ভেঙে গিয়ে এলাকা প্লাবিত হয়। মহকুমাশাসক আগাম বাঁধ সংস্কারে উদ্যোগী হওয়ায় এলাকায় সাড়া পড়েছে। বন্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। শ্রমিকেরাও খুশি, দেদার কাজ পাবেন বলে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, মহকুমার চারটি নদী বাঁধের মোট এলাকা নদীগুলির দু’পাড় নিয়ে প্রায় ২৪০ কিলোমিটারের মতো। এর মধ্যে সেচ দফতরের অধীন প্রায় ১০০ কিলোমিটার। বাদবাকি পঞ্চায়েত সমিতিগুলি দেখভাল করে। ব্লক প্রশাসনগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট নদী বাঁধের প্রায় ৪০ শতাংশ সংস্কার জরুরি। বাকি অংশ গত বছর বন্যা না হওয়ায় ছোটখাট মাটির কাজ করলেই অসুবিধা থাকবে না। এ দিকে, সেচ দফতর থেকে যে ১১টি জায়গা চিহ্নিত করে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, তাতে খরচ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৪৮ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা। যদিও টাকা এখনও কিছুই মেলেনি বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। মহকুমাশাসক জানান, সেচ দফতরের ওই হিসাব জেলায় পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি একশো দিনের কাজের প্রকল্পের তহবিল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে টাকা এনে কাজ শুরু হয়ে যাবে। |