প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি বাড়াতে সম্প্রতি রাজারহাটে জমি বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বাড়ির সামনে বাস্কেটবলের মাঠে একটি নতুন ভবন তৈরির পরিকল্পনা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বাড়িটি হবে কুড়িতলা বা ২৫০ ফুট। বহুতল এই নতুন ভবনের চূড়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের মাথার আদলে। অর্ধচন্দ্রাকৃতি মাথার তলায় থাকবে একটি ঘড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক দূর থেকে চেনা যাবে এই ভবনের মাধ্যমেই।
দেড় বছর আগে রাজ্যে পালাবদলের পরে প্রেসিডেন্সির মানোন্নয়নে মেন্টর গ্রুপ তৈরি করে নতুন সরকার। তাদের সুপারিশে প্রেসিডেন্সির নতুন ক্যাম্পাস তৈরির জন্য রাজারহাটে ১০ একর জমি বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। এ বার কলেজ স্ট্রিটের মূল ভবনের সামনের ফাঁকা জায়গায় একটি বহুতল তৈরির পরিকল্পনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্থপতি পার্থ দাসকে পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের সামনে পাশাপাশি দু’টি খেলার মাঠ রয়েছে। তারই একটিতে তৈরি হবে ওই ‘আইকন’ ভবন। পাশের মাঠে যাওয়ার রাস্তা অটুট রাখতে নতুন ভবনের প্রথম চারতলা শুধু দেওয়ালের উপরে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকবে। তার উপর থেকে শুরু হবে মূল ভবনের বাকি ১৬ তলা। পার্থবাবুর কথায়, “প্রেসিডেন্সির আদলেই নতুন ভবনের চূড়া তৈরি হবে। তার মাথায় থাকবে ঘড়ি। নতুন বাড়িকেও দূর থেকে প্রেসিডেন্সি বলে চিহ্নিত করা যাবে।” লাইব্রেরি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে নতুন ভবনে। তবে বাকিটা চূড়ান্ত নয় বলে জানান উপাচার্য মালবিকা সরকার। |
কলেজ স্ট্রিট এলাকায় অতীতে সেনেট হল ভেঙে শতবার্ষিকী হল তৈরির সময়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই উদাহরণ টেনে শিক্ষামহলের বক্তব্য, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবন-সহ ওই এলাকায় পরপর হেরিটেজ ভবনগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য রেখেই নয়া বহুতল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “আমি স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ নই। সেনেট হল ভাঙার আমিও বিরোধী। কিন্তু প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দরকার। মূল ভবন এবং বাকি হেরিটেজ কাঠামোকে বজায় রেখে যদি নান্দনিক কিছু করা যায়, তবে আপত্তি থাকা উচিত নয়।” সৌগতবাবু বলেন, “রাজারহাটে নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হলেও আমাদের কাছে কিন্তু চিরকালই প্রেসিডেন্সি মানে কলেজ স্ট্রিটই থাকবে। সেখানে তাই পড়াশোনার জায়গা আরও বাড়া দরকার। তা ছাড়া, অতীতে প্রেসিডেন্সির বেকার ল্যাবকেও বাড়ানো হয়েছে। তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি।”
প্রেসিডেন্সির অতিরিক্ত জায়গা যে প্রয়োজন, তা মানছেন বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য বিকাশ সিংহও। তিনি বলেন, “নতুন ভবন তৈরির ভাবনা এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। জায়গা কিন্তু দরকার। তবে বিষয়টি যদি দৃষ্টিনন্দন না হয়, আমরাই তো মানব না। প্রেসিডেন্সি তো আমাদেরও নস্ট্যালজিয়া।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন নীতিন সোম মনে করেন, নতুন ভবন তৈরির সময়ে অনেকগুলি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
তাঁর কথায়, “স্থাপত্যের নান্দনিক দিকটি তো রয়েছেই। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, মাঠটির কথাও। পুরো বিষয়টি প্রেসিডেন্সির সঙ্গে যুক্ত সকলের মতামত নিয়েই করা ভাল।”
নতুন ভবন তৈরির পাশাপাশি মূল ভবন থেকে ডিরোজিও হল, নেতাজি সুভাষ বিল্ডিং-সহ সবগুলি ভবনের সংস্কার করা হবে। মূল ভবনের কাঠামোরও পরিবর্তন করা হবে। পার্থবাবু বলেন, “প্রেসিডেন্সির মূল ভবনটি চার দিকে ঘেরা ছিল না। এ বার সংস্কারের সময়ে মূল ভবনের চার দিক প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে। এতে অতিরিক্ত প্রায় ১ লক্ষ বর্গফুট জায়গা বেরোবে।” মূল ভবনের বাইরে বর্তমান লাইব্রেরির পিছনে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হবে বলে জানান পার্থবাবু।
উপাচার্য জানান, নতুন ভবনের নকশা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলে অনুমোদনের পরে তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। ভবন তৈরি করতে খরচ হবে ৭৫ কোটিরও বেশি অর্থ। পাশাপাশি, পুরনো বিল্ডিং সংস্কার ও আয়তন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন ৫০ কোটি টাকা। উপাচার্য বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে নতুন ভবন তৈরির জন্য অর্থ চেয়েছি।” একই সঙ্গে, প্রাক্তনী ও অন্যান্য উৎসাহীদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে তহবিল গড়ার চেষ্টা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ‘ভিসি ফান্ড ফর এক্সেলেন্স’ নামে তহবিল তৈরি হয়েছে।
২০১৭ সালে ২০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে প্রেসিডেন্সির। ওই বছরেই নতুন ভবন তৈরির কাজ শেষ করতে চাইছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। |