বেলপাহাড়ির কোলে গাডরাসিনি পাহাড়। ছবির মতো সুন্দর এই এলাকায় এক সময় পর্যটন কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। সেটা ছিল ২০০২-০৩ সাল। পরে মাওবাদী বাড়বাড়ন্তে সেই পরিকল্পনা ধাক্কা খায়। ফের গাডরাসিনি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র তৈরিতে উদ্যোগী হচ্ছে জেলা প্রশাসন।
এ বারের উদ্যোগ অবশ্য জেলা প্রশাসনের নিজস্ব পরিকল্পনা নয়। বেলপাহাড়ির এক সাধক স্বামী আত্মানন্দগিরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই সংক্রান্ত আবেদন জানিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। যদি সেই রিপোর্ট ইতিবাচক হয়, তখন রাজ্য সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ করবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অরিন্দম দত্ত বলেন, “এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি কেমন, এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখে বিডিওকে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই রাজ্য জানিয়ে দেবে কী হবে।”
বেলপাহাড়ি জুড়েই রয়েছে উজাড় করা নিসর্গ। কোথাও জঙ্গল, কোথাও নদী। চারদিকে ছোটখাট টিলা। চড়াই-উৎরাই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত। এই বেলপাহাড়ি ব্লকেই রয়েছে গাডরাসিনি পাহাড়। একটা সময় নিসর্গের টানে বহু পর্যটক এখানে ভিড় জমাতেন। কাকড়াঝোর, গাডরাসিনি, লালজল বা তারাফেনিতে ঘুরে বুক ভরে শ্বাস নিতেন শহুরে বাঙালি। তবে কাকড়াঝোর ছাড়া অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা ছিল না। থাকতে হত ঝাড়গ্রাম শহরে। কাকড়াঝোরের বনবাংলোয় (এখন আর তার অস্তিত্ত্ব নেই) ঘরের সংখ্যাও ছিল কম। অথচ পর্যটকের আনাগোনা ক্রমেই বাড়ছে। তখনই জঙ্গল ঘেরা পাহাড় গাডরাসিনির আশপাশে কয়েকটি অস্থায়ী কটেজ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল প্রশাসন। তখন মেদিনীপুরের জেলাশাসক ছিলেন এম ভি রাও। সে পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি। ক্রমে মাওবাদী নাশকতার বাড়বাড়ন্তে পর্যটনপ্রিয় বাঙালির তালিকা থেকে বাদ পড়ে এই এলাকা। অস্থায়ী কটেজগুলিও মাওবাদীরা নষ্ট করে দেয়। এখন মাওবাদী কার্যকলাপ থিতিয়েছে। তাই এখানে পর্যটন কেন্দ্র তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ‘মা গাডরাসিনির’ মন্দিরের মহারাজ স্বামী আত্মানন্দগিরি। পাহাড়ের কোলে এই মন্দির ঘিরে বড়সড় উৎসবও হয়। আত্মানন্দগিরির আবেদন, গাডরাসিনিতে মানুষের আনাগোনা যাতে বাড়ে, এলাকাটি যাতে ফের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নেয় তার ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার।
এই আবেদনে প্রাথমিক সাড়া মিলেছে। এ বার পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হয় কি না, সেটাই দেখার। |