এক দিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। অন্য দিকে জমির অভাব। এই দুই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় রাজ্য সরকারেই খুঁজে বের করতে হবে বলে স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন বণিকসভার প্রতিনিধিরা।
বুধবার কলকাতায় বণিকসভা ফিকির শীর্ষ বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠকে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট রাজ্যবর্ধন কানোরিয়া বলেন, “রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে সরকারকে সদর্থক বার্তা দিতে হবে। জমি সমস্যা সমাধান করতেও ইতিবাচক ভাবনাচিন্তা চাই।” স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি পশ্চিমবঙ্গে শিল্প গড়ার উপযুক্ত পরিবেশ নেই? সরাসরি জবাব না দিয়ে কানোরিয়ার মন্তব্য, “উত্তরটা আপনারা ভাল জানেন। আমার বলার অপেক্ষা রাখে না।”
ফিকি-র বৈঠকেই রাজ্য প্রতিনিধি না পাঠানোয় তাদের শিল্প মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিল্পমহলের অনেকেই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে চলচ্চিত্র উৎসবের দেখভাল করতে পারেন, কিন্তু শিল্পে সময় দিতে পারেন না! তবে সরকারের অগ্রাধিকার কী?
শিল্পমহলের এই ক্ষতে প্রলেপ দিতে ফিকি-র একটি প্রতিনিধি দলকে বুধবার সময় দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১২ জন প্রতিনিধি মহাকরণে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকের পরে কানোরিয়া জানান, মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাংলার বাইরে ‘ইনভেস্টর মিট’ হলে তিনি অবশ্যই যোগ দেবেন। তবে সেখানে রাজ্যকে প্রাধান্য দিয়ে লগ্নিকারীদের কাছে তুলে ধরার শর্ত দেন তিনি। যদিও এই ধরনের কোনও বৈঠকের পরিকল্পনা এখনই নেই বলে জানান কানোরিয়া। |
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বণিকসভার এ দিনের বৈঠককে নিছক সৌজন্য হিসেবেই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। ফিকি-র শীর্ষ বৈঠকে রাজ্য কাউকে না পাঠালেও, এমনকী কথা দিয়েও নৈশভোজে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় না গেলেও সৌজন্যবশতই বার্ষিক সাধারণ সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে শিল্পমহলের অনেকের মত। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওঁদের জাতীয় সাধারণ সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পর্যটন ক্ষেত্রেও রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে চায় ফিকি। ওঁরা একটি বস্ত্রনীতিও তৈরি করে দেবেন আমাদের।”
কানোরিয়াও জানান, রাজ্যে পর্যটন শিল্প ঢেলে সাজার জন্য খুবই আগ্রহী মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “পর্যটন শিল্পকে উন্নত করতে শিশুর মতো আগ্রহ ও আবেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে ফিকির দক্ষতা কাজে লাগাতে চাইছেন তিনি।” মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে সঠিক বস্ত্র নীতি তৈরি করতে আগ্রহী মমতা।
কিন্তু রাজ্য সরকারের কথায় ও কাজে মিল কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিল্পমহলের একাংশ। তাঁরা বলেন, গত ৭ মে মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছিল। সে দিন উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাজ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলি তদারক করার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নিয়ে একটি কমিটি করা হল। কিন্তু গত ছ’মাসে সেই কমিটির একটি বৈঠকও হয়নি। বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলির পরিণতি কী হল, তা নিয়েও কিছুই জানায়নি রাজ্য প্রশাসন। ফলে ফিকি-র কাছে মমতার প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ শিল্পমহল।
তবু মহাকরণে এসে রাজ্য সরকারের প্রশংসাই করেছেন ফিকি প্রেসিডেন্ট। তাঁর কথায়, “(নয়া জমানায়) কর্মসংস্কৃতি ফিরেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল, বন্ধ, ধর্মঘট কার্যত নেই।” পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাম আমলের শেষ বছরে (২০১০-১১) রাজ্যে ৬৫ লক্ষ শ্রম দিবস নষ্ট হয়েছিল। গত বছর তা কমে হয় ৬০ হাজার। এ বছর এখনও পর্যন্ত শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ২০০।” |