মার্কিন মসনদে বারাক ওবামার ফিরে আসাকে সংশয়ী স্বাগত জানাল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। তবে আমেরিকার শীর্ষ পদে ‘চেনা মুখ’ পেয়ে এ দেশের শিল্পমহল যে মোটের উপর খুশি, তা স্পষ্ট শেয়ার বাজারের উত্থান কিংবা বিভিন্ন শিল্পপতি ও বণিকসভার প্রতিক্রিয়ায়।
দেশের কূটনীতিবিদদের মতো শিল্পমহলেরও ধারণা, হোয়াইট হাউসে ওবামার প্রত্যাবর্তনে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যনীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ঘুরে দাঁড়াবে মার্কিন অর্থনীতি। তার ভাগ পাবে ভারতও। খালি আশঙ্কা, কাঁটা হতে পারে ওবামার আউটসোর্সিং-বিরোধী অবস্থান। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই যা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। সুর চড়িয়েছেন এ বারের নির্বাচনী প্রচারেও।
এ কথা স্পষ্ট যে, ওবামাকে স্বাগত জানালেও, তাঁর আগামী দিনের নীতি নিয়ে অপেক্ষা আর সংশয়ে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। এই শিল্পের কর্তারা জানেন, আমেরিকায় মার্কিনদের কাজের সুযোগ তৈরির পক্ষে গত এক বছরে জোর দিয়েছেন ওবামা। সওয়াল করেছেন আউটসোর্সিংয়ের বিপক্ষে। মার্কিন সংস্থাগুলিকে পরোক্ষে আহ্বান জানিয়েছেন, কাজ অন্য দেশে না নিয়ে যাওয়ার জন্যও। বেড়েছে ভিসা-ফি। ফলে সমস্যায় পড়েছে ইনফোসিস বা টিসিএসের মতো ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। এখনও যাদের সিংহ ভাগ আয় আসে মার্কিন মুলুক থেকে।
কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের আশা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই দর্শন হয়তো কিছুটা বদলাবেন ওবামা। ২০০৮-এর মন্দার রেশ কাটিয়ে সবে মুখ তুলতে শুরু করেছে মার্কিন অর্থনীতি। তাই তাকে দাঁড় করাতে আগামী চার বছর কাজের সুযোগ তৈরিতেই সব চেয়ে গুরুত্ব দেবেন তিনি। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প যে তাতে সহায়ক হবে, ওবামা তা বুঝবেন বলেই তাদের বিশ্বাস। টিসিএস-এর সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর এন চন্দ্রশেখরনের কথায়, হোয়াইট হাউসে ওবামা ফের স্বাগত। এ বার সম্ভবত আর্থিক বৃদ্ধি ও কাজের সুযোগ তৈরির উপরই সব থেকে বেশি জোর দেবেন তিনি। যাতে একটি বড় ভূমিকা থাকবে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিরও।
একই মতের শরিক ন্যাসকমের (ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন) পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা সুপর্ণ মৈত্রও। তাঁর মতে, “২০০৬ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মার্কিন মুলুকে ২ লক্ষ ৮০ হাজার নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করেছি আমরা। যার মধ্যে ৫৩ হাজার শুধু গত বছরেই। সুতরাং তথ্যপ্রযুক্তির দৌলতে মার্কিনদের চাকরির সুযোগ কমছে না। বরং তা কিছুটা কমেছে নির্মাণ, খুচরো ব্যবসা এবং উৎপাদন শিল্পে।” ন্যাসকম প্রেসিডেন্ট সোম মিত্তলের দাবি, “ভারত নয়, মার্কিনদের কিছু চাকরি বরং টেনে নিয়েছে চিন।” ইনফোসিসের এগ্জিকিউটিভ কো-চেয়ারম্যান এস গোপালকৃষ্ণন এবং এনআইআইটি-র চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র এস পওয়ার আবার মনে করেন, দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্টের পদে আসা ওবামা নতুন সুযোগ হাজির করতে পারেন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সামনে।
তবে অনেকে এখনই এতটা দরাজ হতে নারাজ। যেমন, বিপিও সংস্থা জেনপ্যাকের প্রাক্তন সিইও প্রমোদ ভাসিনের কথায়, “খোলা বাজারের অর্থনীতির যে কথা ওবামা বলেন, আশা করি নীতি নির্ধারণেও তা মনে রাখবেন।” আবার আই-গেটের সিইও ফণীশ মূর্তির মতে, “ওবামার পুনর্নির্বাচন এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তির পক্ষে সেরা খবর নয়।” তবে মূর্তি-সহ অনেকেরই মত, আউটসোর্সিংয়ের বিরুদ্ধে ভোটের মুখে ওবামার চড়া সুর নির্বাচনী বাধ্যবাধকতা। এখন আর এ নিয়ে তীব্র বিরোধিতার পথে না-ও হাঁটতে পারেন তিনি।
অবশ্য ওবামাকে নিয়ে আশার সুর অন্য শিল্পের শীর্ষ কর্তাদের গলায়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ভারতী গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সুনীল ভারতী মিত্তল, গোদরেজ গোষ্ঠীর কর্তা আদি গোদরেজ, বায়োকনের কর্ণধার কিরণ মজুমদার শ প্রমুখ। ২০১০-এ ভারতে পা রেখে ওবামা বলেন, “অনেকের ধারণা, ভারত কল সেন্টার আর ব্যাক অফিসের দেশ। যা গিলে ফেলে মার্কিনদের চাকরি। কিন্তু এই ধারণা এখন অচল।” এ দেশের শিল্পমহলের আশা, ভবিষ্যতে এই কথা মনে রাখবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বাফেলো-তে কাজের সুযোগ তৈরি করতে গিয়ে ভাতে মারবেন না বেঙ্গালুরুকে। |