লক্ষ্য ডাল শস্যের উৎপাদন বাড়ানো। সেই উদ্দেশ্যকে সফল করতে যে কটি জেলাকে বেছে নিয়েছে কেন্দ্র সরকার তার মধ্যে বীরভূম জেলা একটি। বীরভূম জেলা কৃষি দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১-১২ সালে জেলায় ৬,৫০০ হেক্টর জমিতে মুসুর ডালের চাষ হয়েছিল। ওই বছর উৎপন্ন হয়েছিল প্রায় ৪,১০০ টন মুসুর ডাল।
এ বার সেই পরিমাণকে আরও বাড়ানোর জন্য কেন্দ্র সরকারের ন্যাশানাল ফুড সিকিউরিটি মিশন পরীক্ষামূলক ভাবে জেলার ১৪০০ হেক্টর জমিকে চিহ্নিত করেছে। জেলার ১৯টি ব্লকের মধ্যে ১৪টি ব্লককে দু’টি ভাগে ভাগ করে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে, ময়ূরেশ্বর-১, রামপুরহাট-১, নলহাটি ১ ও ২, মুরারই-১, বোলপুর, ইলামবাজার, নানুর, দুবরাজপুর ও মহম্মদবাজার। প্রতিটি ব্লকে ১০০ হেক্টর জমিতে এই চাষ করা হবে। অপর ভাগে রয়েছে খয়রাশোল, ইলামবাজার, মুরারই-২ ও নলহাটি-১ ব্লক হবে বাকি ৪০০ হেক্টরের চাষ। এক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৩২ কেজি বীজ দেওয়া হবে।
চিহ্নিত ওই জমিতে ডাল শস্য চাষের জন্য চাষীদের বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হবে। দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় কীটনাশক, রাসায়নিক সার ও কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তা। প্রকল্পের প্রয়োজনে ২২৭টি জল তোলার পাম্পের ক্ষেত্রে চাষিদের ১০,০০০ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়া হবে। ১৩৬টি কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করার যন্ত্রেও দেওয়া হবে ৩০০০ টাকা ভর্তুকি। জল সরবরাহের পাইপও দেওয়া হবে ১৩ জন চাষিকে। জেলা কৃষি দফতরের সহকৃষি অধিকর্তা (শস্য ও সুরক্ষা) আশুতোষ মণ্ডল বলেন, “জেলাতে রবি মরসুমে ডাল শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য এ বারই প্রথম বীরভূম জেলাকে বেছে নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। জেলার যেখানে যেখানে মসুর ডাল চাষের উপযুক্ত মাটি ও পরিবেশ রয়েছে সেই সমস্ত এলাকাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০-১১ সালে জেলায় ৭,৫০০ হেক্টর জমিতে মুসুর ডালের চাষ হয়েছিল। উৎপন্ন হয়েছিল প্রায় ১১,৫০০ টন মুসুর ডাল। ওই বছরই ছোলা উৎপন্ন হয়েছিল ৪,৬০০ টন। ২০১১-১২ সালে জেলায় উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে বেড়েছিল ছোলার চাষ। ১০,৭৫০ হেক্টর জমিতে ছোলা চাষ করে উৎপন্ন হয়েছিল ১০,২০০ টন ছোলা।
তবে বীরভূমের মাটি বিশাল পরিমাণ ডালশস্য চাষের জন্য কী সত্যিই উপযুক্ত? জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকরা জানালেন, সম্ভব। তাঁদের মতে, সাধারণত লাল মাটিতে ডাল চাষ করা মুশকিল হলেও জৈবখাদ্য, অনুখাদ্য ও চুন দিয়ে এই চাষ সম্ভব। বীরভূমে বেশি হয় বোরো ধানের চাষ। যেখানে যেখানে বোরো ধানের চাষ হয় না, সেখানে এলাকা চিহ্নিত করে সঠিক পদ্ধতিতে ডাল শস্য চাষ করে সাফল্য পাওয়া সম্ভব বলেই কৃষি দফতরের ধারণা।
জেলার মূখ্য কৃষি অধিকর্তা প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, “আমাদের রাজ্যে ডাল উৎপাদনের ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণের জন্যই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আমরা জেলার চাষিদের ডালশস্য চাষে উৎসাহিত করে এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করব।” কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘোষণায় খুশির হাওয়া চাষিদের মধ্যেও। নলহাটি থানার সংকেতপুরের চাষি অসীম সেন, মিহির দত্ত, জগন্নাথ দাসরা বলেন, “আমাদের এলাকায় বোরো ধানের চাষ হয় না। তাই আমরা এ বার ডাল শস্য চাষ করব। সরকারের এই উদ্যোগে আমরা খুশি।”
অন্যদিকে, জেলা কৃষি দফতরের সহঅধিকর্তা (তথ্য) অমরকুমার মণ্ডল বলেন, “সবুজ বিপ্লবের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় জেলায় গম চাষ শুরু করা হবে। বোলপুর, মুরারই-১, মহম্মদবাজার, রামপুরহাট-২ এই চারটি ব্লকে টি বি ডব্লু ৩৪৩ প্রজাতির গম চাষ করা হবে।” |